কক্সবাজারে দেখার জন্য সেরা ১০টি স্থান

কক্সবাজারে দেখার জন্য সেরা ১০টি স্থান - অপরূপ সৌন্দর্যের ঘেরা আমাদের এই দেশের অপরূপ আরো একটি সৌন্দর্য হচ্ছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। যা চট্টগ্রাম থেকে ১৫২ কিলোমিটার দূরে এবং ঢাকা থেকে ৪১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পৃথিবীর দীর্ঘতম বালুকাময় সমুদ্র সৈকত যা দৈর্ঘ প্রায় ১৫৫ কিলোমিটার। সৌন্দর্যের লিলাভূমি হওয়ার পরও এখানে রয়েছে নানান দর্শনীয় স্থান। যার কারণে মূলত এখানে প্রতিবছর দেশে নানান প্রান্ত হতে লক্ষ লক্ষ পর্যটক ভ্রমণ করতে আসেন।

প্রতি বছর দেশের জিডিপিতে কক্সবাজারের পর্যটন আয় চোখে পরার মতো। পাশাপাশি কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজাতিদের বসবাস ও তাদের নৃ-তাত্ত্বিক জীবন যাপন সকলকে আকর্ষণ করে থাকে। এজন্যই মূলত কক্সবাজার প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষ ভ্রমণ করতে যায়। সকালে বিচের পাড়ে লাল কাঁকড়া দেখা থেকে শুরু করে বিকেলবেলা সূর্যাস্ত দেখাগুলো যেন এক অনন্য সুখ।

তবে অনেকেই কক্সবাজার বলতে শুধু সী-বিচ ভেবে ভুল করে। কিন্তু কক্সবাজারে সী-বিচের পাশাপাশি যে অনেক দর্শনীয় যায়গা রয়েছে তা আমাদের অনেকেরই অজানা। চলুন আজকের অর্টিকেলে কক্সবাজারে দেখার জন্য সেরা ১০টি স্থান কোন গুলো জেনে নিইঃ

(toc) #title=(সুচিপত্র)

কক্সবাজারে দেখার জন্য সেরা ১০টি স্থান

কক্সবাজারে দেখার জন্য সেরা ১০টি স্থান

১। লামাপাড়া খিয়াং

এটি মূলত কক্সবাজার জেলার বকশিখালী নদীর তীরে অবস্থিত। ফতেখারকুল ইউনিয়নে রামু চৌমুহনী বাসস্ট্যান্ড থেকে ১ কিলোমিটার দূরে বকশিখালী নদী যা পাশেই উনিশ শতকের শুরুর রামুর থু অং গিয়াও চৌধুরী লামাপাড়া খিয়াং নির্মাণ করেন। যা কক্সবাজার ভ্রমনকারীদের ভ্রমনে আলাদা মাত্রা যুক্ত করে।

এখানে মার্বেল পাথরের উপর তৈরি বুদ্ধদেবের মূর্তিটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ বুদ্ধমূর্তি হিসেবে পরিচিত। কক্সবাজারের এরকম খিয়াং প্রায়ই দেখা যায় যার মধ্যে শুধুমাত্র রামুতেই ২৩টি খিয়াং রয়েছে। তাই বলা যায় যে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের জন্য এটি একটি পবিত্র উপাসনালয়ের স্থান।

২। নিভৃতে নিসর্গ পার্ক

নিভৃতে নিসর্গ পার্ক কক্সবাজারের দার্জিলিং খ্যাত স্থান। আপনি যদি নিল জলরাশি ও একপাশে পাহাড় ও অন্যপাশে সমুদ্রের মতো নীল পানির পাশাপাশি সাদা মেঘে নিজেকে বিলিয়ে দিতে চান তাহলে আপনার জন্য নিসর্গ পার্ক স্বর্গ স্বরুপ। কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায় সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। এটি মূলত মাতামুহুরি নদীর কোলঘেঁষে অবস্থিত। এটি কক্সবাজার থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় এর পাশেই বান্দরবানের লামা উপজেলা অবস্থিত। তাই আপনি চাইলে বান্দরবান থেকেও ঘুরে আস্তে পারবেন।

দুইপাশে পাহাড়ের মাঝ দিয়ে চলে গেছে মাতামুহুরী নদী। পাহাড় ও নদীর অপরূপ সান্নিধ্য এখানে। যা আপনার মনকে আনন্দ দিতে যতেষ্ঠ। নদীতে নৌকা ভ্রমণে পাহাড় নদীর মিতালি দেখার সাথে সাথে দেখা যায় বিভিন্ন বন্য প্রাণী, পাহাড় বেয়ে ঝরে পড়া ঝরনা, নানা পাখির কলরব মন পুলকিত করবে।সকাল সাতটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত নদীভ্রমণ সবার জন্য উন্মুক্ত এইখানে যার কারন পার্কটি নতুন হওয়ায় এখানে তেমন পর্যটন পরিবেশ তৈরী হয়নি।

আরো পড়ুনঃ কম খরচে ঢাকার আবাসিক হোটেল

৩। শাহপরীর দ্বীপ

টেকনাফ জেলার নাফ নদীর পাশেই মূলত শাহপরীর দ্বীপের অবস্থান। যার কিছুদূর পরেই মায়ানমারের বার্মা এলাকা রয়েছে। চারিপাশে সমুদ্র ও পাহাড়ে ঘেরা এই দ্বীপটির অপরূপ সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করতে যথেষ্ট। টেকনাফ জেলা হতে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দ্বীপটি একটা সময় দ্বীপ হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এটি ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত হয়ে গেছে।

শাহপরীর দ্বীপের মূল আকর্ষণ হলো এই দ্বীপে তিন পাশে সমুদ্রের তিনটি রূপ দেখতে পারবেন। দ্বীপে অবস্থিত জেলে পাড়ার ছোট ছোট কুঁড়েঘরে মানুষের বসবাস ও জীবন যুদ্ধের সংগ্রাম দেখে আপনার মন আবেগে আপ্লুত হয়ে যাবে এবং বেঁচে থাকার নতুন প্রেরণা জোগাতে সাহায্য করবে।

জেলেপাড়ার পাশেই লবণক্ষেত। চারিদিকে যতদূর চোখ যায় দিগন্তজোড়া লবণপ্রান্তর। শিল্পীর আঁকা তুলির আঁচড়ের মতো গ্রামগুলো যেন লেপ্টে আছে আকাশের গায়ে। তার উপর চক চক করছে সমুদ্রের নীল আকাশ। এখানে লবণ ক্ষেতের পাশেই ছোট ছোট আঁকা বাঁকা নদী আর সেখানে ছোট ছোট মাছ খোঁজার জন্য দলে দলে ভিড় করছে গাঙচিল, সারসেরা।

৪। মেরিন ড্রাইভ সড়ক

বাংলাদেশ রোডস এন্ড হাইওয়ে অধীনে ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ লম্বা কক্সবাজার ও টেকনাফে মেরিন ড্রাইভ সড়কটি অবস্থিত একটি। কক্সবাজার ভ্রমণ করতে আসা পর্যটকদের ভ্রমণের আকর্ষণের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে মূলত এই মেরিন ড্রাইভ।

কারণ এর একপাশে রয়েছে সুবিশাল পাহাড় ও অপর পাশেই রয়েছে বিশাল সমুদ্রের জলরাশি যা আপনার মনকে উৎফুল্ল করতে যথেষ্ট। কক্সবাজার অবস্থিত আরো দুটি ভ্রমণের স্থান হিমছড়ি ও ইনানী সীহিত এই মেরিন ড্রাইভের মাধ্যমেই যেতে হয়। চাঁদের গাড়ি বা খোলা জিপ, অটো রিস্কার মাধ্যমে মূলত এই মেরিন ড্রাইভে চলাচল করতে হয়।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আন্ডারে এই মেরিন ড্রাইভটি রয়েছে সেজন্য বিশেষ নিয়মের মাধ্যম দিয়ে মেরিন ড্রাইভে ভ্রমণ করতে হয়। একপাশে সমুদ্র অপর পাশে পাহাড়ের অপরূপ এই সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য অবশ্যই কক্সবাজার গেলে মেরিন ড্রাইভ যেতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত হোটেল ভাড়া

৫। হিমছড়ি পাহাড়

কক্সবাজার ভ্রমণে গেলে সকলেই মূলত হিমছড়িতে ঘুরতে যায়। এর কারণ হলো মেরিন ড্রাইভের অপরূপ দৃশ্য ভ্রমণ করতে করতে ১২ কিলোমিটার গেলেই দক্ষিণ পাশে দেখতে পাবেন হিমছড়ি। একপাশে সুবিশাল সবুজ পাহাড় ও তার অপর পাশেই সমুদ্র মনকে উজ্জিবীত করে তুলবে। পাশাপাশি এতে একটি মিঠা পানির ঝর্না রয়েছে। যা বর্ষাকালে পানিতে পরিপূর্ন থাকে। প্রকৃতির অপরূপ এই পরিবেশের কারণেই হিমছড়ি মূলত মানুষের আকর্ষণের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে।

৬। ইনানী বিচ

কক্সবাজারের অপরূপ সৌন্দর্য ও সমুদ্রের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে সকলকে ইনানী ভ্রমণ করতে যাওয়া উচিত। এর কারণ হলো কক্সবাজারে প্রায় প্রতি মৌসুম দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে প্রচুর মানুষ ভ্রমণ করতে যায়। সে ক্ষেত্রে কক্সবাজার সীবিচে প্রকৃতির সমুদ্রের অপরূপ সৌন্দর্য খোলামেলাভাবে উপভোগ করা যায় না।

সেজন্যই মূলত মানুষ ইনানী বিচে গিয়ে সি বিচের দৃশ্য উপভোগ করতে এবং প্রাকৃতিক দৃশ্যে নিজেকে বিলিয়ে দিতে ইনানীতে চলে যায়। হিমছড়ি হতে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে ইনানী বিচের অবস্থান। স্থানীয়ও ফল আনারকলী গাছ মূলত এই বীচেই দেখতে পাওয়া যায়।

৭। মহেশখালী

মহেশখালী দ্বীপ মূলত কক্সবাজার শহর হতে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কক্সবাজার হতে স্পিডবোট বা নৌকার গিয়ে মাধ্যমে ১২ কিলোমিটার দূরে পশ্চিমে মহেশখালী দ্বীপের অবস্থান। হিন্দু ধর্মালম্বীদের তীর্থস্থান আদিনাথ মন্দির এই দ্বীপেই অবস্থিত। সাগরের মাঝে অবস্থিত এই দ্বীপের মন্দিরটি পুরো বিশ্বের হিন্দু ধর্মালম্বীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় ও পবিত্র স্থান হিসেবে পরিচিত।

মহেশখালী দ্বীপে অবস্থিত মৈনাক পাহাড়ের চূড়ায় মূলত আদিনাথ মন্দিরটি অবস্থিত যা মহেশখালী দ্বীপে সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তুলেছে। প্রতিবছর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি মন্দিরের সৌন্দর্য দেখতে দেশে নানান প্রান্ত থেকে বহু লোক ভিড় জমায় মহেশখালী দ্বীপে।

স্থানীয় লোকজনের কাছে প্রচলিত আছে যে একজন লোক এই দ্বীপে ভ্রমণ করতে গিয়ে মহাদেবের একটি মূর্তি পান এবং সেখানেই মন্দির স্থাপন করেন যার কারণে মূলত এই দ্বীপের নাম মহেশখালী দ্বীপ। চারিপাশে সমুদ্র পাশাপাশি এখানে মন্দিরের অবস্থান ও এর সৌন্দর্যের পাশাপাশি পাহাড়ের প্রাকৃতিক দৃশ্য সকলকে আকর্ষণ করে।

আরো পড়ুনঃ ঢাকার পার্শ্ববর্তী দর্শনীয় স্থান

৮। সোনাদিয়া দ্বীপ

কক্সবাজার জেলা সদর হতে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে মহেশখালী উপজেলার অন্তর্গত সোনাদিয়া দ্বীপ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বললেও কম হবে না। কারণ এর চারিপাশে রয়েছে সুবিশাল সমুদ্র এবং কেয়া-নিশিন্দার ঝোপ, অসংখ্য ছোট-বড় খাল এবং প্যারাবন।

তাছাড়া ছোট ছোট অনেক খাল বিল এর উপস্থিতি এবং সেখানে উপস্থিতি ও মাছগুলো স্বীকার করতে আসা অতিথি পাখিরা এই দ্বীপের সৌন্দর্য আরো বহুগুণ বাড়িয়ে তুলেছে।সোনা দিয়া দ্বীপটির মোট আয়তন প্রায় নয় বর্গ কিলোমিটার। দ্বীপটিতে প্রচুর পরিমাণে ঝিনুক পাওয়া যায় যার কারণে মানুষ এই দ্বীপটি ভ্রমণ করে এ ঝিনুক সংগ্রহ করতে।

৯। কক্সবাজার রেডিয়েন্ড ফিস ওয়াল্ড

বাংলাদেশের প্রথম সামুদ্রিক মাছের অ্যাকুরিয়াম হল কক্সবাজারের এই রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড। প্রায় একশ থেকে দেড়শ অ্যাকুরিয়াম নান্দনিক ভাবে সাজানো হয়েছে এই ফিশ ওয়ার্ল্ডে। এসে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার সামুদ্রিক মাছ। এ যেন একপ্রকার সমুদ্রের নিচের এক রঙিন জগত যা বাস্তবে কল্পনা করার সাধ্য কারণেই বললেই চলে।

রেডিয়েন্ট ফিশ অ্যাকোয়ারিয়াম কমপ্লেক্সটি আটটি ভাগে বিভক্ত। থ্রি-নাইন ডি মুভি দেখার জন্য নান্দনিক স্পেস, বিভিন্ন প্রজাতির দেশি-বিদেশি পাখি দেখার পাশাপাশি ফটোগ্রাফির জন্য আকর্ষণীয় ডিজিটাল কালার ল্যাব, শপিং করার ব্যবস্থা সাথে লাইভ ফিশ রেস্তোরাঁ, প্রার্থনা স্থান শিশুদের খেলার জায়গা, বিয়ে বা পার্টি করার কনফারেন্স হল মোট কথায় সবই রয়েছে। তাছাড়া ছাদে প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করার পাশাপাশি আয়োজন করা যাবে বার-বি কিউ যা আপনার ভ্রমনে দেবে পূর্নতা।

আরো পড়ুনঃ ঢাকার আশেপাশে ঘোরার জায়গা

কক্সবাজারে দেখার জন্য সেরা ১০টি স্থান নিয়ে শেষকথা

কক্সবাজার হল সৌন্দর্যের পটভূমি। এখানে গেলেই আপনার মন প্রাণ জুড়িয়ে যাবে। কক্সবাজারে দেখার জন্য সেরা ১০টি স্থান গুলো কি কি তা আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করেছি। এবার পরিবার প্রিয়জনদের নিয়ে ঘুরে আসুন সমুদ্রের লীলাভূমি কক্সবাজার।

পোষ্ট ক্যাটাগরি: