রমজানে করণীয় ও বর্জনীয়

রমজানে করণীয় ও বর্জনীয় - প্রিয় বন্ধুরা আজকের এই আর্টিকেলে আমরা রমজানে করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে আলোচনা করব। আমরা অনেকেই রমজানে করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে কোন ধারণা রাখি না কিন্তু একজন মুসলিম হিসেবে সঠিক ভাবে রমজান পালন করার জন্য রমজানে করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে অবশ্যই জানতে হবে।

রমজানে করণীয় ও বর্জনীয়

পেজ সূচিপত্রঃ রমজানে করণীয় ও বর্জনীয়

আপনি যদি শেষ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকেন এবং সঠিকভাবে রমজান পালন করতে চান তাহলে রমজানে করণীয় ও বর্জনীয় এগুলো বিস্তারিত জেনে নিন। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে রমজানে করণীয় ও বর্জনীয় গুলো জেনে নেওয়া যাক।

ভূমিকাঃ রমজানে করণীয় ও বর্জনীয়

রমজান মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। এই মাসে আমাদের বেশ কিছু করণীয় রয়েছে এবং বেশ কিছু কাজ আমাদের বর্জন করতে হবে। যেহেতু রমজান মাস খুবই পবিত্র এবং ইবাদতের মাস তাই রমজানে করণীয় ও বর্জনীয় গুলো আমাদের সঠিকভাবে জানতে হবে। যদি আমরা চাই আল্লাহ তাআলার কাছে আমাদের এবাদতগুলো কবুল হয় তাহলে অবশ্যই উক্ত বিষয় গুলো জানা জরুরি।

তাই আপনাদের সুবিধার্থে আজকের এই আর্টিকেলে আমরা রমজান মাসের ফজিলত, রমজান মাসে আমাদের করণীয়, রমজান মাসে আমাদের বর্জনীয়, রমজান মাসে কি করা যাবে? কি করা যাবে না? এই বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

আরো পড়ুনঃ ঈদুল ফিতর শুভেচ্ছা পোস্টার ডিজাইন

রমজান মাসের ফজিলত

রমজান মাসের অনেক ফজিলত রয়েছে। যেহেতু রমজান মাস আল্লাহতালার কাছে অনেক প্রিয় একটি মাস তাই এখান থেকে বুঝা যায় যে রমজান মাসের ফজিলত কতটা বেশি। আমাদের জন্য আল্লাহ তায়ালার দেওয়া একটি অন্যতম উপহার হলো রমজান মাস। আমাদের প্রিয় নবীর রমজান মাসে প্রতিটি রোজা রাখতেন।

রমজান মাসের ফজিলত এবং বরকত অন্যান্য মাসের তুলনায় অনেক বেশি। রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয় এবং জান্নাতের দরজা খুলে দেয়। এছাড়া রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেলে সকল কবরবাসীর কবরের আজাব বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখান থেকে আমরা ধারণা নিতে পারি যে রমজান মাসের ফজিলত এবং গুরুত্ব কতটা বেশি।

রমজান মাসে রোজাদারের রোজা থাকার কারণে মুখের গন্ধ আল্লাহতালার কাছে অনেক প্রিয়। রমজান মাসে ফেরেশতারা রোজাদারদের জন্য ইফতার করা পর্যন্ত ইস্তেগফার ও গুনাহ মাফ চাইতে থাকে।রমজানের প্রতিদিন আল্লাহ তায়ালা জান্নাতকে সুসজ্জিত করে বলেন, " আমার রোজাদার বান্দারা অচিরেই তাদের পরিশ্রম ও কষ্ট দূরে সরিয়ে তোমার কাছে পৌঁছে যাবে।"

রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাত্রিতে লাইলাতুল কদর রয়েছে। যে রাত হাজার রাতের চেয়ে উত্তম। এ রাতের কল্যাণ থেকে যে বঞ্চিত হয় সে সকল ধরনের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়। রমজান মাসের শেষ রাত্রে রোজাদারদের ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। রমজান মাসের নফল ইবাদত ফরজের সমতুল্য। এবং একটি ফরজ ইবাদত ৭০ টি ফরজের সমতুল্য।

রমজান মাসের ফজিলত অনেক বেশি। এর ফজিলত সম্পর্কে পবিত্র কোরআন শরীফ এবং হাদিস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, "হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর। যেন তোমরা পরহেজগারী অর্জন করতে পারো"

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন," রোজাদারদের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহ তায়ালার কাছে মেসওয়াকের চেয়ে বেশি ঘ্রাণযুক্ত।" আরো বলেন,"ইফতার পর্যন্ত রোজাদারদের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন।" রোজাদারদের জন্য প্রতিদিন জান্নাতকে সজ্জিত করা হয়। এ হাদীসগুলো থেকে আমরা জানতে পারি যে রমজান মাসের গুরুত্ব এবং ফজিলত কত বেশি।

রমজান মাসে আমাদের করণীয়

রমজান মাসে বেশ কিছু করণীয় রয়েছে। আমরা যদি আল্লাহতালার কাছে আমাদের এবাদতগুলো পৌঁছে দিতে চাই তাহলে আমাদের অবশ্যই রমজান মাসে করণীয়গুলো করতে হবে। আপনাদের সুবিধার্থে রমজান মাসে আমাদের করণীয় গুলোর নিচে উল্লেখ করা হলো।

রোযা রাখা -- রমজান মাসের সবথেকে গ্রহণযোগ্য ইবাদত হলো রমজান মাসের রোজা রাখা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, হে ঈমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোযা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পারো।{সূরা বাকারাঃ ১৮৩}

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ ইরশাদ করেছেন, যখন তোমরা রমজানের চাঁদ দেখবে তখন রোযা রাখবে। যখন শাওয়ালের চাঁদ দেখবে তখন থেকে রোযা বন্ধ করবে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে ত্রিশ দিন রোযা রাখবে।{সহীহ বুখারীঃ ১৯০৯}

অপর এক হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাঃ ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, রোযা আমার জন্য, আমি নিজেই এর প্রতিদান দেবো। কেয়ামতের দিন রোযাদারদের জন্য একটি বিশেষ হাউজ থাকবে, যেখানে রোযাদার ব্যতীত অন্য কারও আগমন ঘটবে না।{মুসনাদে বায্যারঃ ৮১১৫}

কোরআন তেলাওয়াত করা -- রোযা এবং রমজানের সঙ্গে কোরআনের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এ জন্যই রমজানে কোরআন নাযিল হয়েছে এবং এ জন্যই নবীজী সাঃ রমজান মুবারাকে কোরআন তেলাওয়াতের খুব গুরুত্ব দিতেন।

এ প্রসঙ্গে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন, রাসূল সাঃ ছিলেন সবচেয়ে বেশি দানশীল ও বদান্য, রমজানে তাঁর দানশীলতা ও বদান্যতা অনেক বেড়ে যেত। প্রত্যেক রমজানে জিবরাঈল আঃ তাঁর সঙ্গে মিলিত হতেন এবং পুরো কোরআন একে অপরকে শোনাতেন।{সহীহ বুখারীঃ ০৬}

সাহরী খাওয়া -- রোযার প্রস্তুতির জন্য যে আহার করা হয় তার নাম সাহরী। সাহরী খাওয়া সুন্নত। পেট ভরে খাওয়া জরুরি নয়, এক ঢোক পানি পান করলেও সাহরীর সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাঃ ইরশাদ করেন, তোমরা সাহরী খাও। কেননা, সাহরীতে বরকত রয়েছে।{সহীহ মুসলিমঃ ১০৯}

সাহরী খাওয়া বরকতপূর্ণ কাজ। সুতরাং তা ছেড়ে দিয়ো না। যদিও তা এক ঢোক পানি দিয়ে হোক না কেন। কেননা, যারা সাহরী খায় আল্লাহ তাআলা তাদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণ তাদের জন্য রহমতের দুআ করেন।{মুসনাদে আহমাদঃ ১০৭০২}

ইফতার করা -- সারা দিন রোযা রাখার পর সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে যে আহার করা হয় তার নাম ইফতার। এটা শরীয়তে অনেক বড় একটি আমল। এ আনন্দপূূর্ণ আমলের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে বড় পুরস্কার। ইফতার যেহেতু অনেক বরকতের তাই এই বরকতপূর্ণ আমল শুরু করতে বিলম্ব করতে নিষেধ করা হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ সাঃ ইরশাদ করেছেন, লোকেরা যতদিন প্রথম সময়ে ইফতার করার বিষয়ে যতবার হবে ততদিন তারা কল্যাণের পথে থাকবে।{সহীহ বুখারীঃ ১৯৫৭} ইফতার খেজুর দ্বারা করা মুস্তাহাব। খেজুর না পেলে পানি দ্বারা ইফতার করবে। হযরত আনাস ইবনে মালেক রাঃ বলেন, রাসূল সাঃ মাগরিবের নামাজ পড়ার আগে তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন।

বেশি বেশি তাওবা-ইস্তিগফার করা -- আল্লাহ তাআলা এ মাসে অসংখ্য জাহান্নামীকে মুক্তি দান করেন। যেমন রাসূলে কারীম সাঃ ইরশাদ করেন, আল্লাহ এ মাসের প্রতিরাতে অসংখ্য জাহান্নামীকে মুক্তি দান করেন।{মুসনাদে আহমাদঃ ১৮৭৯৪} তাই আমাদের কর্তব্য তাওবা-ইস্তিগফার করা। কেননা, যে ক্ষমা চায় তাওবা করে তাকেই আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। অন্য কাউকে নয়।

তারাবির নামাজ আদায় করা -- বরকতময় মাহে রমজানের দিন-রাত উভয়টিই মূলত ইবাদতের জন্য। দিনের ইবাদত হলো রোযা যা শরীয়তে ফরজ, আর রাতের ইবাদত হলো তারাবীহ নামাজ যা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। এ আমল ফরজ না হলেও এর ফযীলত ও মর্যাদা অনেক।

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূল সাঃ বলেন, "যে ব্যক্তি পূর্ণ ঈমান ও বিশ্বাসের সাথে সওয়াবের আশায় রমজানের রাতে তারাবীহ আদায় করে তার পূর্ববর্তী গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।"{সহীহ বুখারীঃ ২০০৯}

রোজাদারকে ইফতার করানো -- হযরত যায়েদ ইবনে খালেদ রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কোনো রোযাদারকে ইফতার করাবে, সে তার (রোযাদারের) অনুরূপ প্রতিদান লাভ করবে। তবে রোযাদারের প্রতিদান থেকে বিন্দুমাত্রও হ্রাস করা হবে না।{সুনানে তিরমিযীঃ ৮০৭}

আরো পড়ুনঃ রোজার মাসের ক্যালেন্ডার ২০২৩

রমজান মাসে আমাদের বর্জনীয়

রমজান মাসে বেশ কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো আমাদের অবশ্যই বর্জনীয়। এই কাজগুলো করলে কখনো রমজানের রোজা আল্লাহ তায়ালার কাছে কবুল হবে না। তাই আল্লাহ তাআলার কাছে রমজানের রোজাগুলোকে কবুল করানোর জন্য রমজানে করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে। রমজান মাসে আমাদের বর্জনীয় নিচে উল্লেখ করা হলো।

গীবত করা থেকে বিরত থাকা -- হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, নবী কারীম সাঃ এর দরবারে দুজন মহিলা উপস্থিত হয়ে অভিযোগ করল, রোযার কারণে তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। পিপাসার কারণে প্রাণ ওষ্ঠাগত প্রায়। এ অবস্থা শুনে তিনি লোকমারফতে তাদের বমি করার আদেশ দিলেন। দেখা গেল, গোশতের টুকরা ও তাজা রক্ত বের হচ্ছে।

মিথ্যা কথা বলা থেকে বিরত থাকা -- রাসূলুল্লাহ সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে রোযা রেখেছে অথচ মিথ্যাচার পরিহার করেনি, তার এই কৃত্রিম পানাহার বর্জনের কোনো প্রয়োজন আল্লাহর নেই।{সহীহ বুখারীঃ ১৯০৩}

অনর্থক কথা বা কাজ না করা -- হযরত আবু হুরায়রা রাঃ বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, রোযা শুধু পানাহার বর্জন করার নাম নয়, বরং রোযা হলো অনর্থক কথা ও কাজ এবং অশ্লীল কথা বর্জন করা।{মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস নংঃ ১৬০২}

অশ্লীল কথা না বলা - রোযা অবস্থায় অশ্লীল কথাবার্তা ঝগড়া-ফ্যাসাদ থেকে বিরত থাকা জরুরি। তোমাদের কেউ যখন রোযা অবস্থায় থাকে তখন যেন অশ্লীল কথা না বলে এবং শোরগোল না করে। আর কেউ যদি তার সঙ্গে ঝগড়া করে, গালি দেয়, তা হলে সে যেন শুধু বলে দেয়, আমি তো রোযাদার। অর্থাৎ তোমার সাথে বিবাদ করার এবং গালির জবাব দেওয়ার সুযোগ আমার নেই। {সহীহ বুখারীঃ ১৯০৪}

রাসূল সাঃ বলেন, "কত রোযাদার এমন আছে রোযা অবস্থায় অশ্লীল কথা ও কর্ম থেকে বিরত না থাকার ফলে ক্ষুধা ও পিপাসা ছাড়া রোযা থেকে সে আর কিছু লাভ করতে পারে না। তদ্রপ অনেক রাত জাগরণকারী এমন আছে যে তার রাত্রিজাগরণ থেকে জেগে থাকার কষ্ট ছাড়া আর কিছু পায় না{সুনানে ইবনে মাজাহঃ ১৬৯০}

আরো পড়ুনঃ ঈদের শুভেচ্ছা পোস্টার ডিজাইন

আমাদের শেষ কথাঃ রমজানে করণীয় ও বর্জনীয়

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা রমজানে করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনি রমজান মাসে কি করবেন এবং কোন কাজ থেকে বিরত থাকবেন এ বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। একজন প্রকৃত মুসলিম হিসেবে আপনার অবশ্যই উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানা উচিত।

আপনি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে আশা করি উক্ত বিষয়গুলো জানতে পেরেছেন। যদি বিষয়গুলো না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে নিবেন।

পোষ্ট ক্যাটাগরি: