গ্রামে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোন

হাসিবুর
লিখেছেন -

গ্রামে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোন - আপনি কি গ্রামে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোন নেয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আমাদের দেশের সিংহভাগ মানুষ গ্রামে বসবাস করে। তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের শতকরা প্রায় ৮৫ ভাগ মানুষ গ্রামে বসবাস করে। গ্রামের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ এই নিজের মত করে আলাদা করে বাড়ি নির্মাণ করে থাকে।

গ্রামে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোন

সূচীপত্রঃ গ্রামে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোন

শহরে দেখা যায় একটি বাড়িতেই কয়েক ধরণের ফ্যামিলি বসবাস করতে পারে তবে গ্রামে সেটা বিপরীত। এখানে, প্রতি জনের আলাদা করে বাড়ি নির্মাণ করতে হয়। আর গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ মধ্যবিত্ত হওয়ায় বাড়ি নির্মাণ এর খরচ একবারে বহন করাটা কঠিন।

৫-১০ লাখ টাকায় একটি বাড়ি নির্মাণ করা মধ্যবিত্তদের কাছে ক্ষানিকটা স্বপ্নের মতই। এক্ষেত্রে আপনার কাছে যদি একবারে খরচ করার মত টাকা না থাকে নিতে পারেন গ্রামে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোন। আপনি যদি গ্রামে বাড়ি তৈরি করার কথা ভেবে থাকেন তাহলে আপনাকে জানতে হবে যে;

বাংলাদেশের কোন ব্যাংক গুলো আপনাকে বাড়ি নির্মাণ এর জন্য লোন প্রদান করবে। প্রতিটি ব্যাংকেই লোন গ্রহন করতে হলে কিছু পরিমাণ রিকোয়ারমেন্ট বা চাহিদা থাকে যেগুলো আপনার না থাকলে লোনের আওতাভুক্ত হতে পারবেন না।

হোম লোন বা গ্রামে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোন বর্তমানে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। সাধ্যের মধ্যে নতুন বাড়ি তৈরির স্বপ্ন পূরণের একটি কাঙ্ক্ষিত দূরদর্শিতা স্থাপন করেছে ব্যাংক সমূহ। ইসলামী ব্যাংক এবং মিউচুয়া ট্রাষ্ট ব্যাংক তার ব্যতিক্রম নয়। 

গ্রাহকের সর্বোচ্চ সেবাদান প্রকল্পে তাদের বাকি সেবা সমূহের মতো, হোম লোন তাদের বেশ জনপ্রিয় একটি সেবার নাম। তাই, আজকে আমি কথা বলবো গ্রামে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোন সেবা নিয়ে। আশাকরি লেখাটি আপনাদের উপকার আসবে। 

এই হোম লোন সুবিধার জন্য অনেক মানুষ তাদের বাড়ি নির্মাণের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছে। আজকের আলোচনায় দুইটি ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের হোম লোনের আওতায়, গ্রাহকদের বাড়ি নির্মাণ এবং সেই সঙ্গে রেডিমেড ফ্ল্যাট ক্রয় করার উপর নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ লোন সুবিধা প্রদান করে থাকে।

গ্রামে বাড়ি নির্মাণ করতে চাওয়া প্রিয় পাঠকগন, আপনাদের জন্য আজকের আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরবো, গ্রামে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোন কিভাবে নিতে হবে। গ্রামে বাড়ি করার জন্য লোন নিতে হলে কি কি করনীয় কাজ গুলো আপনাদের পূর্বে থেকেই সম্পন্ন করে রাখতে হবে। 

কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন হবে, কত টাকা বাড়ি নির্মাণ এর জন্য লোন নিতে পারবেন, কত কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে ইত্যাদি সব কিছু নিয়ে থাকছে বিস্তারিত আলোচনা। চলুন তাহলে গ্রামে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যঃ

গ্রামে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোন

বাংলাদেশের জনপ্রিয় কয়েকটি ব্যাংকিং সেবা বাড়ি নির্মাণ এর জন্য ব্যাংক লোন এর ব্যাবস্থা চালু করছে। ব্যাংক গুলো থেকে গ্রামে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোন নেয়ার জন্য যদি আপনার জমি থাকে এবং ভালো আয়ের উৎস থাকে তাহলে আপনি সহজেই কোনো ঝামেলা ছাড়া লোন গ্রহন করতে পারবেন।

এক্ষেত্রে প্রতিটি ব্যাংকের নিয়ম সাময়িক ভাবে আলাদা হতে পারে। তবে আপনার যদি পূর্বে কোনো ব্যাংক লোন নিয়ে পরিশোধ না করার রেকর্ড থাকে তাহলে কখনোই লোনের জন্য গ্রহনযোগ্য হবেন না।বর্তমানে দেশের অনেক গুলো ব্যাংক গ্রামে বাড়ি নির্মাণ এর জন্য লোন প্রকল্প চালু করেছে। 

তবে আমরা আজকে গ্রামে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোন অর্থাৎ দুটি লোন প্রদানকারী ব্যাংক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আপনারা চাইলেই ইসলামি ব্যাংক ও এমটিবি ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রামে বাড়ি করার জন্য লোন নিতে পারবেন।

আরো পড়ুনঃ বিকাশ থেকে লোন নেওয়ার উপায়

ইসলামি ব্যাংক - হাউজ লোন

গ্রামে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোন হিসেবে বর্তমানে ইসলামি ব্যাংক একটি প্রকল্প চালু করেছে। যার নাম হচ্ছে হাউজ লোন। অর্থাৎ আপনি আপনার বাড়িকে পূননির্মাণ কিংবা নতুন ভাবে স্থাপনা করার জন্য নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ লোন নিতে পারবেন। ইসলামি ব্যাংক থেকে হাউজ লোন নিতে হলে আপনাকে তাদের কিছু রিকোয়ারমেন্ট পূরণ থাকতে হবে। যেগুলো নিচে ক্রমাগত ভাবে দিয়ে দিলামঃ 

ইসলামি ব্যাংক হাউজ লোন নেয়ার শর্ত

১। মাসিক আয়

আপনি যদি বেকার হয়ে থাকেন তাহলে এই লোন এর জন্য আপনি সিলেক্ট হবেন না। কারণ, তাদের এই লোন পরিশোধ করার ক্ষমতা আপনার অবশ্যই থাকতে হবে। আপনি যদি চাকরিজীবি, ব্যাবসয়ী বা অন্য যেকোনো পেশায় নিয়োজিত থাকেন যা থেকে আপনি লোন পরিশোধ করতে পারবেন। তাহলে আপনি আয়ের উৎস কন্ডিশন পূরণ করতে পারবেন।

২। পূর্বের লোন পরিশোধ করা

আপনি যদি ইসলামি ব্যাংক কিংবা অন্য যেকোনো ব্যাংকে যেকোনো শাখায় পূর্বেই লোন নিয়েছেন কিন্তু সেটা এখনো পরিশোধ করতে পারেন নি তাহলে আপনাকে বাড়ি নির্মাণ এর জন্য লোন প্রদান করবে না।

৩। বয়সের সীমা

ইসলামি ব্যাংক থেকে যদি আপনি গ্রামে বাড়ি করার জন্য লোন নিতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই ৪০ বছরের নিচে হতে হবে। তবে আপনার যদি আয়ের উৎস ভালো থাকে তাহলে ব্যাংক বিশেষ বিবেচনায় দিতে পারে। তবে আপনি যদি ২১-৪০ বছরের মধ্যে হয়ে থাকেন তাহলে ভালো হবে।

৪। আপনার বৈশিষ্ট

আপনি আপনার কর্মস্থলে কেমন ভদ্রতা বজায় রাখেন। আপনি মানুষ হিসেবে কেমন? আপনার অবৈধ কোনো ইনকাম সোর্স আছে কি না ইত্যাদি বিষয় গুলো ব্যাংক প্রয়োজনে জেনে নিবে। তাই আপনি যদি এলাকায় খারাপ প্রকৃতির হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে লোন পাওয়ার চান্স অনেকটা কম।

আরো পড়ুনঃ কোটি টাকা আয় করার উপায়

ইসলামি ব্যাংক হাউজ লোন কত টাকা দেয়?

আপনি যদি একেবারেই নতুন ভাবে বাড়ি নির্মাণ করতে চান তাহলে তারা আপনাকে ৬০ শতাংশ অর্থাৎ ১০ লক্ষ টাকা লোন প্রদান করবে। এবং যদি আপনি কোনো রেডিমেট বাড়ি বা ফ্লাট ক্রয় করতে চান তবে সেখানে ব্যাংক আপনাকে ৫০ শতাংশ লোন দিবে অর্থাৎ লোনের পরিমাণ কিছুটা কম হবে টাকা অংকে আপনি ৭.৫ লাখ টাকা লোন নিতে পারবেন। 

এছাড়াও যদি আপনার বাড়ি ভেংগে নতুন করে নির্মাণ করতে চান তাহলে ব্যাংক আপনাকে ৬০ শতাংশ যথার্থ ১০ হাজার টাকা লোন সুবিধা প্রদান করবে। ইসলামি ব্যাংক থেকে উক্ত হোম লোন আপনাকে লোন নেয়ার পরবর্তী ১৫ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। অর্থাৎ ইসলামী ব্যাংক আপনাকে সর্বোচ্চ ১৫ বছরের জন্য উক্ত হোম লোন সুবিধা প্রদান করবে।

ইসলামি ব্যাংক থেকে হাউজ লোন নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র

ইসলামি ব্যাংক থেকে গ্রামে বাড়ি করার লোন নেয়ার জন্য আপনাকে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস পূরণ করতে হবে।আপনি যদি উপরের শর্ত গুলো ইতিমধ্যেই পূরণ করে থাকেন তাহলে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস নিয়ে যেকোনো ইসলামি ব্যাংকের শাখা হতে লোন গ্রহন কর‍তে পারবেন।

১। যে জমিতে বা প্লটে আপনি বাড়ি নির্মাণ করবেন উক্ত জমি আপনার থাকতে হবে। সে জমির দলিলের মূল কপি আপনাকে দেখাতে হবে ২। জমির মূল মালিকানা দলিল, বায়া দলিল ৩। জাতীয় পরিচয়পত্র/ট্রেড লাইসেন্স ৪। পূর্বে দেয়া খাজনার রশিদ ৫। DCR, খাজনা রশিদ এবং নামজারী খতিয়ান ৬। CS, RS, SA, BS খতিয়ানের জাবেদা নকল ৭। জেলা/সাব রেজিষ্ট্রি অফিস কর্তৃক ইস্যুকৃত ১২ (বার) বছরের NEC।

সরকারী প্লটের ক্ষেত্রেঃ ১। প্লটের বরাদ্দের কাগজ প্রয়োজন ২। জমির দখল হস্তান্তর করার কাগজ ৩। মূল লীজ দলিল এবং বায়া দলিল (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ৪। লীজ দাতা প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে বন্ধক অনুমতিপত্র ৫। হস্তান্তর অনুমতিপত্র ও নামজারী, ডিসিআর এবং খাজনা রশিদ।

আপনি যদি এই গ্রামে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোন জন্য আবেদন করতে চান, তবে সেক্ষেত্রে আপনি আপনার নিকটস্থ ইসলামী ব্যাংকের কোনো শাখা সরাসরি যোগাযোগ করুন। তারা আপনাকে এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য বুঝিয়ে দিবে আপনাকে।

Mutual Trust Bank - এমটিবি গ্রামীণ গৃহ লোন

গ্রামে অসচ্ছল বা মধ্যবিত্ত মানুষের সহায়তায় বাড়ি নির্মাণ এর জন্য লোন দিচ্ছে এমটিবি ব্যাংক। তারা এই প্রকল্পের নাম দিয়েছে গ্রামীণ গৃহ লোন। আপনি যদি সকল শর্তসমুহ মেনে লোন নিতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে নিতে পারবেন। এমটিবি থেকে লোন নেয়ার জন্য আপনাদের যা যা জানা দরকার তা নিচে দিয়ে দিলাম- 

এমটিবি গ্রামীণ গ্রহ লোনের শর্ত সমূহ

১। লোন পরিশোধ করার ক্ষমতা থাকতে হবে। অর্থাৎ এমন কোনো আয়ের সোর্স থাকতে হবে যা দিয়ে আপনি সহজেই লোনটি পরিশোধ করতে পারবেন।

২। আপনার বাড়ি নির্মাণের জমি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে থাকতে হবে।

৩। আপনার নিজস্ব জমি থাকতে হবে। যে স্থানে আপনি বাড়ি নির্মাণ করবেন সেটা আপনার নামে দলিল থাকতে হবে।

৪। লোন নেয়ার ক্ষেত্রে আপনার অবর্তমানে লোন পরিশোধ এর গ্রারান্টর হিসেবে পরিবার থাকতে হবে। 

৫। আপনার বয়স অবশ্যই ২১ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।

এমটিবি ব্যাংক কত টাকা গৃহ লোন দেয়?

এমটিবি থেকে বাড়ি নির্মাণ এর জন্য সর্বোচ্চ ৯% সুদের হারে ৫ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকা লোন নিতে পারবেন। লোন নেয়ার পরবর্তী ৫, ১০, ১৫ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এটা নির্ভর করে আপনি কত টাকা লোন গ্রহণ করবেন সেটার উপরে।

এমটিবি গ্রামীণ গৃহ লোনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র

১। জমির মূল মালিকানার দলিল পত্র।

২। খতিয়ান এর নকল।

৩। পুর্বে পরিশোধ করা জমির খাজনা এর রশিদ। 

৪। সাব রেজিস্টি এর মাধ্যমে ১২ বছরের নির্দায় সনদ পত্র। 

শেষ কথা - গ্রামে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোন

গ্রামে বাড়ি করার জন্য ব্যাংক লোন অনেকেই এই বিষয় সম্পর্কে জানতেন না। আশা করি ইতিমধ্যেই সেটা ভালোভাবে জেনে গিয়েছেন। আপনি যদি গ্রামে বাড়ি নির্মাণ করতে চান লোন নিয়ে তাহলে অবশ্যই ব্যাংক থেকে আরো ভালোভাবে সকল শর্তসমুহ গুলো দেখে বা জিজ্ঞেস করে নিবেন। এতক্ষন ধরে লেখাটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

ব্লগ ক্যাটাগরি: