নিজেই নিজের আত্মকর্মসংস্থান করার উপায়

হাসিবুর
লিখেছেন -

নিজেই নিজের আত্মকর্মসংস্থান করার উপায় — বর্তমান সময়ে মানুষের নিজস্ব স্ব-আত্মকর্মসংস্থান করার উপায় সম্পর্কে জানার চাহিদা ও প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করতে যাচ্ছি, নিজেই নিজের আত্মকর্মসংস্থান করার উপায় সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত, নির্ভুল, সহজ, সাবলীল ভাষায় আলোচনা। মূল আলোচনায় যাওয়ার পূর্বে, চলুন দেখে নেয়া যাক, আজকে এই আর্টিকেলে আমরা কি কি বিষয়ে জানাতে যাচ্ছি?

আজকের আর্টিকেলে আমাদের আলোচ্য বিষয়বস্তু গুলো হচ্ছে: ১। আত্মকর্মসংস্থান কী ২। আত্মকর্মসংস্থান বলতে কি বোঝায় ৩। আত্মকর্মসংস্থান ও ব্যবসায় উদ্যোগ ৪। আত্মকর্মসংস্থানের প্রয়োজনীয়তা ৫। আত্মকর্মসংস্থানের ধারনা ৬। আত্মকর্মসংস্থান এর গুরুত্ব ৭। আত্মকর্মসংস্থানের গুরুত্ব উদাহরণ ৮। আত্মকর্মসংস্থানের উপযুক্ত ও লাভজনক ক্ষেত্র ৯। আত্মকর্মসংস্থানে সহায়ক প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কয়টি ১০। নিজেই নিজের আত্মকর্মসংস্থান করার উপায় ইত্যাদি।

নিজেই নিজের আত্মকর্মসংস্থান করার উপায়

সূচীপত্রঃ নিজেই নিজের আত্মকর্মসংস্থান করার উপায়

আত্মকর্মসংস্থান কী?

সাধারন ভাবে বলতে গেলে, নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করাকে আত্মকর্মসংস্থান বলে। সহজ ভাষায়, নিজস্ব অথবা ঋণ করা স্বল্প সম্পদ, নিজস্ব চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ন্যূনতম ঝুঁকি নিয়ে আত্মপ্রচেষ্টায় জীবিকা অর্জনের ব্যবস্থাকে আত্মকর্মসংস্থান বলে। 

আত্মকর্মসংস্থান বলতে কি বোঝায়

পূর্বেই বলেছি, নিজের সম্পদ অথবা ঋণ করা সম্পদ দিয়ে, নিজস্ব চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে নিজেই নিজের জীবিকা অর্জনের ব্যবস্থা বা কর্মসংস্থান করাকে আত্মকর্মসংস্থান বলে। 

আত্মকর্মসংস্থান হচ্ছে যখন একজন কৃষক চাল না কিনে নিজেই ধান উৎপাদন করে এবং এখান থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। কোনো কাজে উপর দক্ষতা থাকলে খুব সহজে সফলতা অর্জন করা যায়। তাই আত্মকর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় মূলধন নিজের দক্ষতাকে বলা হয়।

আরো পড়ুনঃ মাসে ৩০ হাজার টাকা আয় করার উপায়

আত্মকর্মসংস্থান ও ব্যবসায় উদ্যোগ

অনেকেই আত্মকর্মসংস্থান ও ব্যবসায় উদ্যোগকে এক মনে করেন। কিন্তু সত্য এই যে দুটো আলাদা আলাদা বিষয়। আত্মকর্মসংস্থান হলো, নিজস্ব অথবা ঋন করা স্বল্প সম্পদ, নিজস্ব চিন্তা, মেধা, বুদ্ধিমত্তা, ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ন্যূনতম ঝুঁকি নিয়ে আত্মপ্রচেষ্টায় জীবিকা অর্জনের ব্যবস্থা করাকে। 

আর ব্যবসায় উদ্যোগ বলতে বুঝায় লাভবান হওয়ার আশায় লোকসানের সম্ভাবনা জেনেও ঝুঁকি নিয়ে শিল্প বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ় ভাবে এগিয়ে যাওয়া।তবে আত্মকর্মসংস্থান ও ব্যবসা উদ্যোগ উভয় ক্ষেত্রেই ঝুঁকি বিদ্যমান যা উভয়ের মধ্যে ইতিবাচক সম্পর্ক প্রকাশ করে

আত্মকর্মসংস্থানের প্রয়োজনীয়তা

একটি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য আত্মকর্মসংস্থানের অনেক বেশি প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে শ্রমজীবী ও চাকরিজীবী লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। কর্মসংস্থানের চাহিদা যে হারে বৃদ্ধি পায় সে কর্মসংস্থানের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় না। 

সীমিত চাকরির বাজারে সকলের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ হয় না। আত্ম-কর্মসংস্থানের মাধ্যমে ব্যক্তির নিজের যেমন কর্মসংস্থান হয় তেমনি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। স্বাধীনভাবে কিছু করতে চায় তারা নিজস্ব মেধা অদক্ষতা কাজে লাগাতে এগিয়ে আসেন এবং আত্মকর্মসংস্থান করে স্বাবলম্বী হন। এছাড়াও বেকারত্ব নিরসনে আত্মকর্মসংস্থান হলো একমাত্র উপায়। 

নিজের চাহিদা পূরণের জন্য আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে ব্যক্তি শুধু স্বাবলম্বী হতে পারে তা-ই নয়, তার পরিবার, সমাজ এমনকি দেশেরও আর্থিক উন্নয়ন সাধিত হয়। এ কারণেই আত্মকর্মসংস্থানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

আত্মকর্মসংস্থানের ধারনা

আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি, নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করাকে আত্মকর্মসংস্থান বলা হয়। আত্মকর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় মূলধন হলো নিজের দক্ষতা। জীবিকা অর্জনের বিভিন্ন পেশার মধ্যে কর্মসংস্থান একটি জনপ্রিয় পেশা। 

এখানে নিজের সম্পদ অথবা ঋণ করা পুজি, নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা, জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে, নিজ আত্ম প্রচেষ্টায় জীবিকা অর্জন এর ব্যবস্থা করা হয়। বিভিন্ন খুচরা বিক্রেতা রেডিও ও টেলিভিশন মেরামত হাসির মুরগি পালন মৌমাছি চাষ ইত্যাদি আত্মকর্মসংস্থানের অন্তভূক্ত।

আরো পড়ুনঃ ইউনিক বিজনেস আইডিয়া

আত্মকর্মসংস্থান এর গুরুত্ব

একজন ব্যক্তির জন্য আত্মকর্মসংস্থান খুবই গুরুত্বর্পূন বিষয়। কেননা আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমেই ব্যক্তি নিজে নিজের জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। এছাড়াও বেকারত্ব দূর করার ক্ষেত্রে আত্মকর্মসংস্থান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সে হারে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে না।

আত্মকর্মসংস্থান এর মাধ্যমে একজন মানুষ নিজেই নয়, এর পাশাপাশি আরো অনেক বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে সমাজ তথা রাষ্ট্রের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। আত্মকর্মসংস্থান রাষ্ট্রের চাকরির চাহিদার ওপর চাপ কমাতে পারে এবং বেকার সমস্যার মত রাষ্ট্রীয় সমস্যা নিরসনে অবদান রাখতে পারে

আত্ম কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অল্প পুঁজি বা ঋণের মাধ্যমে শুরু করা যায়। যা অনন্য পেশায় করা যায় না। আত্মর কর্মসংস্থানে মূল মূলধন হচ্ছে নিজের দক্ষতা যেখানে বয়সের কোন সমস্যা থাকে না। এছাড়াও আত্ম-কর্মসংস্থান একটি স্বাধীন পেশা যেখানে নিজ ইচ্ছের মত কাজ করা যায়।

আত্মকর্মসংস্থানের গুরুত্ব উদাহরণ

আত্মকর্মসংস্থান এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা একই সঙ্গে আমাদের সমাজ থেকে দূর করে দিতে পারে দারিদ্র্য ও বেকারত্বের মতো সমস্যাকে। আমাদের দেশে যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সে হারে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে না।

শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে চাকরি না পেয়ে হতাশায় নিমজ্জিতহয়। আমাদের দারিদ্র ও বেকারত্বকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়ে সামনে অগ্রসর হতে হবে। আত্মকর্মসংস্থান হতে পারে সে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার হাতিয়ার। বাংলাদেশের আর্থিকভাবে কিছু নিম্নশ্রেণির মানুষ আছেন যারা চাকরির মাধ্যমে ভাগ্য ফেরাতে পারেন না তাদের কাছে আত্মকর্মসংস্থান একটি অমিয় সম্ভাবনার হাতছানি। আত্মকর্মসংস্থান মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও ধনী-গরিবের ব্যবধান অনেকাংশে ঘোচাতে পারে।

আত্মকর্মসংস্থানের উপযুক্ত ও লাভজনক ক্ষেত্র

আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন স্বল্প পুঁজি বা ঋণের মাধ্যমে নিজের দক্ষতা ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে সহজে সফল হওয়া যায়। নিচে আত্মকর্মসংস্থানের উপযুক্ত ও লাভজনক কিছু ক্ষেত্র উপস্থাপন করা হলো:- 

১। কৃষি কাজ ২। হস্তচালিত তাঁত ৩। বাস জাত দ্রব্য প্রস্তুতকরণ ৪। কাঠের আসবাবপত্র তৈরি ৫। স্টিলের আসবাবপত্র তৈরি ৬। গৃহস্থালির দ্রবধি তৈরি ৭। পাটের সৌখিন দ্রবাদি তৈরি ৮। পাটের ম্যাট তৈরি ৯। বেতের সামগ্রী তৈরি ১০। কাঠের খেলার সরঞ্জাম তৈরি।

১১। স্টিলের আসবাবপত্র তৈরি ১২। গৃহস্থালির দ্রব্যাদি তৈরি ১৩। প্লাস্টিক দ্রবাদি প্রস্তুতকরণ ১৪। কাঁচের জিনিসপত্র তৈরি ১৫। চামড়াজাত দ্রব্যাদি তৈরি ১৬। খাদ্যজাত দ্রব্যাদি উৎপাদন ১৭। বাইসাইকেল মেরামত করা ১৮। নৌকা তৈরি ব্যবসা ১৯। মাছ ধরা জাল তৈরি‌ ২০। বেকারি ইত্যাদি।

আত্মকর্মসংস্থানে সহায়ক প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কয়টি?

আত্মকর্মসংস্থানে সহায়ক প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হলো সাতটি। যথা:- ১। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট (Bangladesh Institute of Management) ২। মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় (Ministry of Women Affairs) 

৩। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড Bangladesh Rural Development Board) ৪। গ্রামীণ মহিলাদের কর্মসংস্থান প্রকল্প (Employment Generator Project of Rural Woman) ৫। যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (Youth Training Center ) ৬। নট্রামস(Notrams) ৭। এনজিও (NGO)

নিজেই নিজের আত্মকর্মসংস্থান করার উপায়

আত্মকর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় মূলধন হলো নিজের দক্ষতা। তাই নিজেই নিজের আত্মকর্মসংস্থান করার লক্ষ্যে সর্বপ্রথম কোন কাজে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে হবে। এমন কোনো কাজ বেছে নেওয়া, যেখানে অল্প পুঁজি বা মূলধনের মাধ্যমে নিজের মেধা শক্তি ও দক্ষতা দিয়ে সহজেই সফলতা আনা যাবে।

নির্দিষ্ট কোন কাজ বেছে নেওয়ার পর, উক্ত বিষয়ে জ্ঞান অর্জন ও দক্ষতা অর্জন করতে করতে হবে। পরিপূর্ণ পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহ করে কর্মসংস্থান করার লক্ষ্যে নিজেকে নিয়োজিত করা। আশা করা যায়, খুব শীঘ্রই আপনি আপনার আত্মকর্মসংস্থান করার ক্ষেত্রে সফলতা লাভ করবেন।

আরো পড়ুনঃ গরুর খামার করতে ব্যাংক লোন

শেষ কথা - নিজেই নিজের আত্মকর্মসংস্থান করার উপায়

প্রিয় পাঠক আমরা যথাসম্ভব আজকের এই আর্টিকেলে আত্ম-কর্মসংস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনারা নিজেই নিজের আত্মকর্মসংস্থান করার উপায় সমূহ জেনে নিয়েছেন। 

তাই বলবো এখনো যারা বেকার অবস্থায় আছেন, তারা অতি শীঘ্রই অল্প পুঁজির মাধ্যমে নিজের দক্ষতা আর বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে নিজেই নিজের আত্মকর্মসংস্থান করার লক্ষ্যে নিয়োজিত হয়ে যান। আশা করছি খুব সহজেই আপনারা সফলতা অর্জন করতে পারবেন। নিজেই নিজের আত্মকর্মসংস্থান করার উপায় লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

ব্লগ ক্যাটাগরি: