কুরবানী কার উপর ওয়াজিব

কুরবানী কার উপর ওয়াজিব - ইসলামে ধর্মে যত বিধান রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো কোরবানি। কোরবানি করা অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত এবং ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। কোরবানি করার মাঝে রয়েছে আত্মত্যাগের মহিমা এবং আর্তের সেবার গৌরব। আমাদের আদি পিতা হজরত আদম (আ.)– এর ২ পুত্র হাবিল এবং কাবিল থেকে শুরু হওয়া এই কোরবানির ইতিহাস মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর শিশুপুত্র ইসমাইল (আ.) – এর মহান আত্মবিসর্জনে উজ্জ্বল, যা কিয়ামত পর্যন্ত অম্লান থাকবে। 

কুরবানী কার উপর ওয়াজিব

কোরবানি অর্থ হচ্ছে কাছে যাওয়া কিংবা নৈকট্য অর্জন করা, ত্যাগ স্বীকার করা কিংবা বিসর্জন দেওয়া। পরিভাষায় কোরবানি হচ্ছে জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে শরিয়তের বিধান অনুসারে নির্দিষ্ট পশু জবাই করা। একটি কোরবানি হলো একটি ছাগল, একটি ভেড়া কিংবা একটি দুম্বা এবং গরু, মহিষ এবং উটের ৭ ভাগের ১ ভাগ। অর্থাৎ একটি গরু, মহিষ অথবা উট ৭ শরিকে বা ৭ জনের পক্ষ থেকে কোরবানি করা যাবে।

আরো পড়ুনঃ আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ

কুরবানী কার উপর ওয়াজিব

প্রথম কথা হলো, কুরবানি ফরজের বক্তব্য আসলে আলেমদের মধ্যে কেউ দেননি। আলেমদের মধ্যে মতবিরোধ হয়েছে কোরবানি কি সুন্নাহ নাকি ওয়াজিব এই বিষয় নিয়ে। একদল ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, কোরবানি সুন্নত, সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এটি অধিকাংশ আলেমের বক্তব্য। আরেকদল ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, কোরবানি ওয়াজিব। 

আলেমগণ কোরবানীর হুকুম নিয়ে মতভেদ করেছেনঃ কোরবানী করা ওয়াজিব যা পালন না করলে গুনাহ হবে; নাকি সুন্নতে মুয়াক্কাদা যা বর্জন করাটা নিন্দনীয়? বিশুদ্ধ মতানুযায়ী কোরবানী করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। ৩ থেকে ৪ ওলামায়ে কেরাম ব্যতীত আর কেউ কোরবানিকে ওয়াজিব বলেননি।

শরিয়তে যাঁদের উপর কোরবানি বাধ্যতামূলক হয় তাঁরা হলেন মুসলিম হতে হবে, বিবেকসম্পন্ন হওয়া, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া, এগুলো ঠিক থাকবে। অর্থাৎ স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন, প্রাপ্তবয়স্ক, মুসলিম যদি ‘নিসাব’ পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকেন, তাঁদের পক্ষ থেকে একটি কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব বা আবশ্যক। 

নিসাব হলো সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা এর সমমূল্যের নগদ টাকা ও ব্যবসার পণ্য বা সম্পদ। তার সঙ্গে আর একটি শর্ত যোগ হবে সেটি হচ্ছে, যে ব্যক্তি ঐ দিন কোরবানির পশু জবাই করার সামর্থ্য রাখে, সেই ব্যক্তির ওপর কোরবানি আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এটি বলেছেন অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম।

কিন্তু যাঁরা ওয়াজিব বলেছেন, তাঁরা ২টি কঠিন শর্ত দিয়েছেন। কারো জন্য কোরবানী ওয়াজিব হওয়া কিংবা সুন্নত হওয়ার জন্য কোরবানীকারীকে ধনী হতে হবে। অর্থাৎ তার নিজের খরচপাতি এবং সে যাদের খরচ চালায় তাদের খরচপাতির অতিরিক্ত তার কাছে কোরবানী করার অর্থ থাকা। 

আরো পড়ুনঃ আলহামদুলিল্লাহ অর্থ কি

অতএব, কোন মুসলমানের যদি মাসিক বেতন বা ইনকাম থাকে এবং এ বেতন দিয়ে তার খরচ চলে যায়, তাহলে এর অতিরিক্ত তার কাছে কোরবানীর পশু কেনার অর্থ থাকে তাহলে সে ব্যক্তি কর্তৃক কোরবানী দেওয়ার শরিয়া বিধান রয়েছে। অর্থাৎ একটি হচ্ছে, ঐ ব্যক্তির নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকতে হবে, যেই নেসাব পরিমাণ সম্পদের উপর জাকাত ফরজ হয়। অন্যটি হচ্ছে তাঁকে মুসাফির হওয়া যাবেনা। এই ২টি শর্ত করে বলা হয়েছে কোরবানি ওয়াজিব।

এ দুটির একটি শর্তও যদি কোনো ব্যক্তি পূরণ করতে না পারে, তাহলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে না। কিন্তু বিশুদ্ধ বক্তব্য হচ্ছে, রাসুল (সা.) যে হাদিস দিয়ে ওয়াজিবের দলিল দিয়েছেন সেটি। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে, সে যেন কোরবানি করে।’ সামর্থ্যকে রাসুল (সা.) সাধারণ রেখে দিয়েছেন।

কোরবানী করার জন্য ধনী হওয়া শর্ত মর্মে দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “যে ব্যক্তির সামর্থ্য আছে অথচ সে কোরবানী করেনি সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়” [সুনানে ইবনে মাজাহ (৩১২৩), আলবানী ‘সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ’ গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন] এখানে সামর্থ্য দ্বারা উদ্দেশ্য ধনী হওয়া।

প্রতিটি পরিবারের পক্ষ থেকে কোরবানী দেয়ার বিধান রয়েছে। দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “প্রতিটি পরিবারের পক্ষ থেকে প্রতি বছর একটি কোরবানী দেয়া ওয়াজিব” [মুসনাদে আহমাদ (২০২০৭)] ইবনে হাজার ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে বলেন: হাদিসটির সনদ মজবুত। আলবানী ‘সহিহ সুনানে আবু দাউদ গ্রন্থে (২৭৮৮) হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন] এ বিধানের ক্ষেত্রে পুরুষ বা নারীর কোন ভেদ নেই। অতএব, কোন নারী যদি একাকী বসবাস করেন কিংবা তাঁর সন্তানদেরকে নিয়ে থাকেন তাহলে তাদেরকে কোরবানী করতে হবে।

আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা গ্রন্থে (৫/৮১) এসেছে- “কোরবানী ওয়াজিব হওয়া কিংবা সুন্নত হওয়ার জন্য পুরুষ হওয়া শর্ত নয়। কোরবানী পুরুষদের উপর যেমন ওয়াজিব হয় তেমনি নারীদের উপরও ওয়াজিব হয়। কারণ ওয়াজিব হওয়ার দলিলগুলো নর-নারী সবাইকে সমানভাবে শামিল করে।” ব্যাংকে কোরবানি দেওয়ার মতো অর্থ যদি আপনার থাকে, তাহলে আপনি কোরবানি দিতে পারবেন।

পোষ্ট ক্যাটাগরি:

এখানে আপনার মতামত দিন

0মন্তব্যসমূহ

আপনার মন্তব্য লিখুন (0)