নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলাম বিষয়ক নানান প্রশ্ন নিয়ে আমাদের আজকের এই আলোচনা। আজকের আর্টিকেলের মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে কোরবানি কাদের উপর ফরজ, সে সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো।
প্রশ্নঃ কোরবানি কার ওপর ফরজ? সেই ভাবে হয়তো টাকা ইনকাম নাই, কিন্তু ব্যাংকে কিছু পরিমাণ টাকা জমা আছে। তার ওপর কি কোরবানি ফরজ?
উত্তরঃ প্রথম কথা হচ্ছে, কুরবানি ফরজ এমন বক্তব্য মূলত আলেমদের মাঝে কেউ দেননি। আলেমদের মাঝে এই বিষয় নিয়ে মত বিরোধ আছে তা হচ্ছে কোরবানি কি সুন্নাহ নাকি ওয়াজিব। একদল ওলামায়ে কেরাম জানিয়েছেন যে, কোরবানি সুন্নত, কােরবানি সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এটাই অধিকাংশ আলেমের বক্তব্য।
আরেকদল ওলামায়ে কেরাম জানিয়েছেন, কোরবানি হচ্ছে ওয়াজিব। হাতে গোনা ৩ থেকে ৪ জন ওলামায়ে কেরাম ছাড়া আর কেউই কোরবানিকে ওয়াজিব বলেননি।
রিলেটেডঃ কোরবানির ঈদ কত তারিখ ও কোন দিন হবে জেনে নিন
শরিয়তে যাঁদের ওপরে কোরবানি বাধ্যতামূলক হয় তাঁরা হচ্ছে মুসলিম হওয়া, বিবেকসম্পন্ন ব্যক্তি হওয়া, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া এগুলো ঠিক থাকবে। তার সঙ্গে আরো একটি শর্ত যুক্ত হবে সেটি হচ্ছে, যে ব্যক্তি সেই দিন কোরবানির পশু জবাই করার সামর্থ্য রাখেন, সেই ব্যক্তির উপর কোরবানি আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এই রকম বলছেন অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম।
কিন্তু যাঁরা কোরবানি ওয়াজিব বলেছেন, তাঁরা ২টি কঠিন শর্ত দিয়েছেন। একটি হলো, সেই ব্যক্তির নেসাব পরিমাণে সম্পদ থাকতে হবে, যেই নেসাব পরিমাণ সম্পদের উপরে জাকাত ফরজ হয়। দ্বিতীয়টি হচ্ছে তাঁকে মুসাফির হওয়া যাবেনা। এই দুটি শর্ত করে বলা হয়ছে কোরবানি ওয়াজিব।
এই ২টির একটি শর্তও যদি কোনো ব্যক্তি সম্পূর্ণ করতে না পারে, তবে তার উপরে কোরবানি ওয়াজিব হবে না। কিন্তু পরিস্কার বক্তব্য হচ্ছে, রাসুল (সা.) যে হাদিস দিয়ে ওয়াজিবের দলিল দিয়েছেন সেটি হচ্ছে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে, সে যেনো কোরবানি করে।’ সামর্থ্যকে রাসুল (সা.) সাধারন রেখে দিয়েছেন।
অন্য রেওয়াতের মাঝে আসছে, ‘সামর্থ্য থাকার পরেও যদি সে কোরবানি না করে, তাহলে সে যেনো আমাদের ঈদগাহ মাঠে না আসে।’ এই হাদিস দিয়েই ওয়াজিবের দলিল দেওয়া হয়েছে। নবীজি (সা.) নেসাব পরিমাণে সম্পদের কথা মোটেও বলেননি, এটি না থাকলেও চলবে। আর ব্যাংকে কোরবানি দেওয়ার মতো টাকা যদি আপনার থাকে, তবে আপনি কোরবানি দিতে পারবেন।