মেটাভার্স কি

মেটাভার্স কি — নতুন প্রযুক্তি এবং আবিষ্কারের মাধ্যমে আমরা এগিয়ে এসেছি বহুদূর। ল্যান্ডলাইন ফোনের দিনগুলো পেরিয়ে আমরা এসেছি স্মার্টফোনের যুগে। হরহামেশা জীবনের নতুন দিগন্তে নতুন প্রযুক্তির সাথে নিজেকে জড়িয়ে দিচ্ছি আমরা। আগে যেখানে বাজারে উপস্থিত হওয়া ছাড়া কেনাকাটা ছিল অসম্ভব এখন সেই আমরা অনলাইনের মাধ্যমে কেনাকাটা করছি, ভেবে দেখুন তো ঘরে বসে গায়ে জড়িয়ে দেখে পোশাক কেনার ব্যাপারটা কতটা অদ্ভুত লাগছে তাইনা, অথবা গাড়ি কিনব কিন্তু ঘরে বসে বসেই টেস্ট ড্রাইভ করা যাবে। একই জায়গায় বসে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করা। যদি বলা হয় ভবিষ্যৎ সময়ে এসব সম্ভব, বর্তমান ও কাল্পনিক জগতকে নিয়ে গঠিত হওয়া সম্ভাবনার নামই হচ্ছে মেটাভার্স।

মেটাভার্স কি

মেটাভার্স কি

মেটাভার্স হচ্ছে কাল্পনিক জগত, যা ভবিষ্যতের অপার অভাবনীয় প্রযুক্তি। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে মেটাভার্স। সমসাময়িক ইন্টারনেট হচ্ছে 2D আর মেটাভার্স হচ্ছে 3D। এটি হচ্ছে 3D ভার্চুয়াল জগত। মেটাভার্সকে বোঝা জটিল কারণ এটি এখনও বিদ্যমান নেই। এটি হচ্ছে ভার্চুয়াল জগতকে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া বাস্তব জীবনকে সাজানোর জন্য। 

1970 দশকে যেমন ইন্টারনেট নিয়ে সম্ভাবনার বিষ্ময় ছিল ঠিক এই সময়ে মেটাভার্স তেমন বিষয়। ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডের প্ল্যাটফর্ম মেটাভার্স হচ্ছে Second life বা দ্বিতীয় জীবনের অনুকরণ। লেখক নীল স্টিফেন্সকে কৃতিত্ত দেওয়া হয় 1992 সালের সাইন্স ফিকশন উপন্যাস snow crush এ মেটাভার্স শব্দটির তৈরীর জন্য। এই নোবেলের portmanteau এর থেকে নেয়া meta ও universe থেকে "Metaverse" শব্দটির উৎপত্তি। 

আরো পড়ুনঃ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি | ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ধারণা

প্রযুক্তি ও প্রকল্পের উন্নয়ন প্রগতির উদ্দেশ্যে জনসংযোগের ব্যবহারের জন্য এটি যথেষ্ট। প্রায়শই প্রথম মেটাভার্স হিসেবে বর্ণনা করা হয় 2003 সালের ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড প্লাটফ্রম সেকেন্ড লাইফকে। এটি 3D জগতকে অন্তর্ভুক্ত করেছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের স্থায়ী দিককে। মেটাভার্স এর একটি উন্নত এনালগকে উপস্থাপন করে সামাজিক গেম প্লে দ্বারা। এটি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, আর্গুমেন্ট রিয়েলিটি এবং ভিডিও সহ প্রযুক্তির একাধিক উপাদানের সংমিশ্রণ যেখানে ব্যবহারকারীরা একটি ডিজিটাল মহাবিশ্বের মধ্যে বসবাস করে। 

মেটাভার্সের সমর্থকরা কল্পনা করে যে এর ব্যবহারকারীরা কাজ করছে, খেলছে এবং বন্ধুদের সাথে সংযুক্ত থাকছে, কনসার্ট এবং কনফারেন্স থেকে শুরু করে বিশ্বজুড়ে ভার্চুয়াল ট্রিপ পর্যন্ত। VR সিস্টেম প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করেই তৈরি হবে মেটাভার্স এর বিস্ময়কর জগত।

মেটা সিইও মার্ক জাকারবার্গ কোম্পানির রিব্র্যান্ডিং প্রকাশ করার পরে বলেছিলেন,"পরবর্তী প্ল্যাটফর্ম এবং মাধ্যমটির ইন্টারনেট হবে আর ও বেশি বাস্তব রূপে নিমজ্জিত যেখানে আপনি কেবল এটি শুধু দেখবেন না বরং এর অভিজ্ঞতাও উপলব্ধি করবেন আর আমরা এটিকেই মেটাভার্স বলি"।

ফেসবুক বা মেটা কোম্পানীর সকল কার্যক্রমের মধ্যে থেকে সবার শীর্ষে অগ্রাধিকার দিচ্ছে মেটাভার্সকে। মেটা সিইও মার্ক জাকারবার্গ বলেন তার প্রতিষ্ঠান মেটাভার্স প্রযুক্তিতে পরিণত হবে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে। সম্ভবত এজন্যই তার প্রতিষ্ঠান নাম পরিবর্তন করে মেটাতে স্থানান্তর করা হয়েছে।

আরো পড়ুনঃ এটিএম কার্ড কি? এটিএম কার্ড ব্যবহারের নিয়ম

মেটাভার্স হচ্ছে শুধু দেখা বা শোনার নয়, বরং অনুভব করার অনুভূতি। মাইক্রোসফট সফ্টওয়্যার জায়ান্ট ইতিমধ্যেই হলোগ্রাম ব্যবহার করে এবং তার মাইক্রোসফ্ট মেশ প্ল্যাটফর্মের সাথে মিশ্র এবং আর্গুমেন্ট রিয়েলিটি (এক্সআর) অ্যাপ্লিকেশনগুলি ডেভেলপ করছে, যা বাস্তব বিশ্বকে Augmented Reality এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটর সাথে একত্রিত করে। 2022 সালে মাইক্রোসফ্ট টিমগুলিতে হোলোগ্রাম এবং Virtual Avatar সহ মিশ্র-বাস্তবতা আনার পরিকল্পনা দেখিয়েছিল। এছাড়াও আগামী বছরের জন্য কাজ চলছে: খুচরা এবং কর্মক্ষেত্রের জন্য অন্বেষণযোগ্য 3D ভার্চুয়াল সংযুক্ত স্থান এর।

মেটাভার্স ডিজিটাল অর্থনীতির ও বহিঃপ্রকাশ, যেমন ব্যবহারকারীরা পণ্য তৈরি ক্রয় ও বিক্রয় করতে পারবে। এটি ইন্টার অপারেবল যা আপনাকে অনুমতি প্রদান করে ভার্চুয়াল জিনিস যেমন গাড়ি পোশাক ইত্যাদি আরো অনেক কিছু এক থেকে অন্য প্ল্যাটফর্ম স্থানান্তরের। মেটাভার্স হচ্ছে সবচেয়ে ভাল উপায় নিজের রিয়েলিটি এক্সপেরিয়েন্স তৈরি করার।

ইন্টারনেট সংযোগ ও VR গেমিং এর মধ্যে বড় ধরনের উন্নতির ক্ষেত্রে ধারণা করা হচ্ছে যে মেটাভার্স প্রযুক্তি আবিষ্কার এর দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে বিশ্ব। শেয়ার্ড ভার্চুয়াল পরিবেশে প্রবেশ করা যাবে Metaverse প্রযুক্তির মাধ্যমে। কাল্পনিক জগত হবে বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি হিসেবে। ভবিষ্যৎ সময়ে মেটাভার্স হবে কাল্পনিক জগতের বাস্তব দুনিয়া।

যেহেতু মেটাভার্স প্রযুক্তি এখনও বিশ্ব জগতের মাঝে বিদ্যমান না তাই এই প্রযুক্তি তৈরি হাওয়া রাতারাতি সম্ভবপর নয়। বরং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার থাকতে পারে এর মধ্যে, বিভিন্ন গবেষণা ও অনুসন্ধানের কারণে অনেক খরচ সাপেক্ষও বটে, তাই এই প্রযুক্তি আবিষ্কার হওয়ার সাথে সাথেই সবার হাতের মুঠোয় প্রথমেই আসতে পারবে না। হয়তোবা অনেক উচ্চমূল্যে এর আস্বাদন সম্ভব হতে পারে এবং জনসাধারণের হাতে আসতে আসতে পেরিয়ে যাবে অনেক গুলো সময়। তাছাড়া ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কতটুকু দিতে পারবে তাও দেখার বিষয় রয়েই যায়।

আরো পড়ুনঃ মোবাইল টাওয়ারের ক্ষতিকর দিক

পোষ্ট ক্যাটাগরি:

এখানে আপনার মতামত দিন

0মন্তব্যসমূহ

আপনার মন্তব্য লিখুন (0)