বাংলাদেশের সেরা মাদ্রাসার তালিকা | বাংলাদেশের সেরা ১০ টি মাদ্রাসা

বাংলাদেশের সেরা মাদ্রাসার তালিকা | বাংলাদেশের সেরা ১০ টি মাদ্রাসা— জীবনকে সঠিক পথে, শান্তির পথে এবং ইসলামের পথে পরিচালনা করার জন্য মাদ্রাসার কোনো বিকল্প নাই। প্রত্যেক পিতা-মাতা চান তার সন্তানকে দ্বীনের পথে আনতে। সন্তান যেন পিতা মাতার বাধ্য হয়। পিতামাতাকে যথার্থ শ্রদ্ধা ও সম্মান করে এবং মানুষের মতো মানুষ হয়। কিন্তু ছোটকাল থেকে সন্তানকে সঠিক ও উপযুক্ত শিক্ষা না দেওয়ার কারণে শেষমেষ পিতামাতাকে যেতে হয় বৃদ্ধাশ্রম। আর এই বৃদ্ধাশ্রমের প্রেরণ করেন তার আদরের প্রিয় সেই সন্তান।

বাংলাদেশের সেরা মাদ্রাসার তালিকা

এগুলো ভাবতেও অবাক লাগে। যে সন্তানকে ছোটকাল থেকে এত কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে সন্তানের পেছনে নিজের জীবনকে বিলিয়ে দিল আজ সেই সন্তান এই তাদের কাছে সব থেকে দূরের মনে হয়।প্রিয় পাঠক, এগুলোই আজকের বাস্তবতা। আর তাই সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার পাশাপাশি তার নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষায় একান্ত যা জানা জরুরি। এর জন্য সন্তানের ছোটকাল থেকেই তার প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে।

ছোটকাল থেকে তাকে নৈতিক শিক্ষা ও ধর্মীয় শিক্ষা দিতে হবে। আর এর জন্য একটি আদর্শ মাদ্রাসার বিকল্প নেই। স্কুল কলেজ ভার্সিটি এই প্রতিষ্ঠানগুলো যেমনি ভাবে শুধুমাত্র দুনিয়ার শিক্ষা শিখানো হয় তেমনি ভাবে একটি আদর্শ মাদ্রাসায় দুনিয়া নয় বরং দুনিয়া এবং আখিরাতের কিভাবে সফলকাম হওয়া যাবে তা শিক্ষা দেওয়া হয়। আমরা অনেকেই আমাদের সন্তানকে কোন মাদ্রাসায় দেব তা ভাবছি কিন্তু সঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারছিনা। আর তাই প্রিয় পাঠকদের উদ্দেশ্যে আজকেরে এই আর্টিকেলে আমরা বাংলাদেশের সেরা মাদ্রাসার তালিকা নিয়ে কথা বলবো। চলুন তাহলে জেনে নেই বাংলাদেশের সেরা ১০টি মাদ্রাসা সম্পর্কেঃ

১। জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া মাদ্রাসা

বাংলাদেশ ইসলামিক জ্ঞান প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসা খুবই ভালোভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এটি ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে অবস্থিত। অনেকে একে যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসা নামেও চিনেন। প্রতি বছরই এই মাদ্রাসা থেকে হাজার হাজার আলেম বের হচ্ছে। এই মাদ্রাসাটিতে শিশু শ্রেণী থেকে শুরু করে দাওরায়ে হাদীস তথা মাস্টার্স পর্যন্ত এখানে পড়ানো হয়। এটি খুবই ভালো মানের একটি মাদ্রাসা। আপনার সন্তানকে সঠিক পথে, শান্তির পথে এবং ইসলামের পথে পরিচালনা করার জন্য এই মাদ্রাসায় পড়াতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের সেরা ক্যান্সার হাসপাতাল

২। চরমোনাই আহসানাবাদ জামেয়া রশীদিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা

এই মাদ্রাসাটি বরিশাল জেলায় চরমোনাই গ্রামে অবস্থিত। এটি ১৯২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতেই এটি আলিয়া মাদ্রাসা হিসেবে চালু করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে সৈয়দ ফজলুল করিম মাদ্রাসা থেকে কওমি বিভাগ চালু করেন। বর্তমানে মাদ্রাসাটিতে আলিয়া এবং কওমি দুটি শাখাই রয়েছে। সারা বাংলাদেশে এই মাদ্রাসাটিতে পড়া আলেম বা আলেমগণ বিভিন্ন জায়গায় ইসলামের খেদমত করে যাচ্ছে। ইসলামের খেদমতে ইসলাম শিক্ষার প্রসার বিতরণ করতে মাদ্রাসাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। 

৩। আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসা (হাট হাজারি মাদ্রাসা)

আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদ্রাসাটি হাটহাজারী মাদ্রাসা নামে বহুল পরিচিত। এই মাদ্রাসাটি ১৮৯৬ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর অবস্থান বাংলাদেশের বন্দরনগরী চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের একটি অন্যতম সুপ্রাচীন ও শ্রেষ্ঠতম ইসলামিক বিদ্যাপীঠ। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি দারুল উলুম দেওবন্দের পাঠ্যসূচি দ্বারা শিক্ষা কার্যক্রম প্রচলিত হয়। এটি বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসা সমূহের উম্মুল মাদারিস তথা মাদ্রাসা সমূহের মা হিসেবে পরিচিত।শিক্ষা সেবা ও জাতীয় সামাজিক পর্যায়ে অবদান এর ফলে হাটহাজারী মাদ্রাসাটি বিতর্কহীনভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত মাদ্রাসায় পরিণত হয়েছে। প্রতিবছরই হাজার হাজার আলেম এই মাদ্রাসা থেকে বের হয়। আর তাই বলা যায় ইসলামের খেদমত এই মাদ্রাসাটির অবদান অপরিসীম। 

৪। জামিয়া ইসলামিয়া হুসাইনিয়া গহরপুর মাদ্রাসা 

এটি বাংলাদেশের সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলায় গহরপুর এলাকায় অবস্থিত খুবই পরিচিত একটি মাদ্রাসা। তৎকালীন সময়ে এলাকায় উচ্চতর মানসম্মত মাদ্রাসা না থাকায় বিখ্যাত আলেম নুরু উদ্দিন গহরপুরী এলাকাবাসীর সহযোগিতায় দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতির আলোকে ১৯৫৭ সালে এই মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠার এক বছর পরেই দাওরায়ে হাদীস তথা মাস্টার্স চালু করেন। এই মাদ্রাসাটি সিলেটবাসীর জন্য পরবর্তীতে খুবই কল্যাণ বয়ে আনে। 

আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা

৫। জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম দারুল হাদিস

এই মাদ্রাসাটিও সিলেটের কানাইঘাট থানা সদরে সুরমা নদীর তীরে অবস্থিত। ১৯১৭ সালে প্রখ্যাত আলেম মুঞ্জুরুল আহমদ এই মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে ১৯৫৩ সালে মোশাহেদ আহমদ মাদ্রাসাটিতে দাওরায়ে হাদীস তথা মাস্টার চালু করেন। এরপর তিনি মাদ্রাসাটির সাথে নতুন নাম হিসেবে যুক্ত করেন দারুল উলুম দারুল হাদিস। আর এর জন্য থাকে বর্তমানে মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতাও বলা হয়।এই মাদ্রাসাটিতে শিক্ষার মান ও শিক্ষকদের আন্তরিকতার সকলের কাছে খুবই পরিচিত মাদ্রাসা হিসেবে গণ্য হয়েছে। 

৬। জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ মাদ্রাসা

এই মাদ্রাসাটি ঢাকার গেণ্ডারিয়ায় ফরিদাবাদে অবস্থিত। এটি ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। মাদ্রাসাটি সকলের কাছেই খুবই পরিচিত একটি মাদ্রাসা। এখানে দক্ষ ও উপযুক্ত আলেম দ্বারা মাদ্রাসাটিতে পড়ানো হয়। বর্তমানে প্রায় ৩৫০০ এরও বেশি ছাত্র মাদ্রাসাটিতে অধ্যায়নরত আছে। 

৭। জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ মাদ্রাসা

জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ কওমি মাদরাসাটি বিশাল বড় একটি মাদ্রাসা। এই মাদ্রাসাটি ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। মাদ্রাসাটির পরিচালক হযরত মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া (দা.বা.)। এই মাদ্রাসাটির ছাত্র সংখ্যা প্রায় ১৩০০ এর চেয়েও বেশি। এখানে শিক্ষকগণ তার ছাত্রদেরকে খুবই আন্তরিকতার সাথে ইসলামের জ্ঞান প্রচার ও প্রসার করে থাকেন। 

৮। জামিয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ মাদ্রাসা

এই মাদ্রাসাটি পুরান ঢাকার লালবাগ এলাকায় অবস্থিত। পুরান ঢাকা বাসীর জন্য এই মাদ্রাসাটি নেয়ামত স্বরূপ। এখানে প্রতি বছর এই অসংখ্য আলেম এলমে দ্বীন অর্জন করে বের হন। এই মাদ্রাসাটি অনেক আগের একটি মাদ্রাসা। এটিও ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই মাদ্রাসাটির পরিচালক হলেন হযরত মাওলানা আব্দুল হাই (দা:বা:)। 

৯। জামিয়া মাদানিয়া ইসলামিয়া কাজির বাজার সিলেট মাদ্রাসা

হযরত শাহজালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি এর স্মৃতি বিজড়িত সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এই ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের বৃহত্তম ইসলামিক ইউনিভার্সিটি হিসেবে মর্যাদা অর্জন করেছে। এখানে একেবারে শুরু থেকেই মাস্টার্স পর্যন্ত যত সকল পর্যায়ে আছে প্রতিটি পর্যায়ে মধ্যেই এখানে পাঠদান করা হয়। প্রায় হাজার শত ছাত্রদের মাঝে প্রায় ৮০০ ছাত্রেরই বিনামূল্যে লিল্লা বডিং এর ফান্ড থেকে ইসলামের জ্ঞান প্রদান করা হয়। 

১০। জামিয়া ইসলামিয়া ওবাইদিয়া নানুপুর চট্টগ্রাম মাদ্রাসা 

এই মাদ্রাসাটি অনেক আগে প্রতিষ্ঠা করা হয়। মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাকাল হলো ১৯৫৭ সাল। মাদ্রাসাটির পরিচালক হলেন আল্লামা শাহ সালাউদ্দিন নানুপুরী। বিশাল বড় এই মাদ্রাসাটিতে প্রায় সাড়ে সাত হাজারের বেশি ছাত্র অধ্যায়ন করে। মাদ্রাসাতে অভিজ্ঞ আলেম ইলমে দ্বীন অর্জনকারী হাফেজ ছাত্রদেরকে শিক্ষা দেয়া হয়। এই মাদ্রাসাটি সকলের কাছে বহুল পরিচিত একটি মাদ্রাসা। অবশেষে প্রিয় পাঠকগণ এর উদ্দেশ্যে বলবো সন্তানকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করুন যাতে আপনার ও আপনার সন্তানের দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ বয়ে আনে। 

আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের সেরা সফটওয়্যার কোম্পানি

পোষ্ট ক্যাটাগরি:

এখানে আপনার মতামত দিন

0মন্তব্যসমূহ

আপনার মন্তব্য লিখুন (0)