ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফাই করার নিয়ম

ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফাই করার নিয়ম — ইউটিউব চ্যানেল তৈরির করার পরে অতি গুরুত্বপূর্ণ করণীয় কাজটি হচ্ছে ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফাই করা। কারণ আপনার ইউটিউব চ্যানেলটি যদি ভেরিফাই করা না হয়ে থাকে তাহলে আপনি সেই চ্যানেলে ১৫ মিনিটের বেশি দীর্ঘ ভিডিও আপনি আপলোড করতে পারবেন না আর পরবর্তীত সময়ে ইউটিউব চ্যানেল থেকে টাকা ইনকাম করার জন্য ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজ অ্যাপরুভ করতে পারবেন না। এছাড়া লাইভ স্ট্রিমিং ও কাস্টোম থাম্বনাইল লাগানোর জন্যে ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফাই করা অতীব জরুরি। 

তাই প্রথমেই আপনাকে মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফাই করে নিতে হয়। ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফাই করার জন্য আপনাকে প্রথমে ইউটিউব চ্যানেলের সেটিংস (Settings) অপশনে ক্লিক করতে হবে। তারপর আপনার সামনে একটি পেজ চলে আসবে যেখানে আপনি Channel Status and Features নামের একটি অপশন দেখতে পারবেন। 

ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফাই করার নিয়ম

তারপর সেই অপশনটিতে ক্লিক করার পর আপনি ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফাই করার অপশনটিকে দেখতে পারবেন। এরপর আপনি Verify ভেরিফাই অপশনটিতে ক্লিক করার পরে ইউটিউব চ্যানেল আপনাকে কিছু তথ্য সেখানে দিতে বলবে। সেখানে আপনার দেশ (কান্ট্রি) সিলেক্ট করে আপনার সচল মোবাইল নম্বরটি বসিয়ে দিতে হবে। সচল মোবাইল নাম্বারটি বসানোর পরে আপনার উক্ত নাম্বারে একটি কোড সম্বলিত SMS পাঠানো হবে। 

এরপর উক্ত কোডটি নির্দিষ্ট স্থানে বসিয়ে সাবমিট Submit বাটনে ক্লিক করতে হবে। এই কোডটি সঠিকভাবে সাবমিট হয়ে গেলে আপনার ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফাই হয়ে যাবে। যার ফলে পরবর্তীতে আপনার ইউটিউব চ্যানেলে যেকোনো ধরনের ভিডিও অর্থাৎ লম্বা ভিডিও আপনি আপনার ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করতে পারবেন।

ইউটিউব চ্যানেল সেটিংস

একটি ইউটিউব চ্যানেল খোলা ও ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফাই সম্পূর্ণ হয়ে গেলে এই পর্যায়ে এখন সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হচ্ছে চ্যানেল সেটিংস (Channel Settings)। যদি আপনি আপনার ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা আয় করতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে ইউটিউব চ্যানেলে প্রফেশনাল লুক আনাটা অত্যন্ত জরুরি। চ্যানেলের প্রফেশনাল লুক আনার জন্য ইউটিউব চ্যানেলের সেটিংস গুলোকে সম্পূর্ণ করা প্রয়োজন। তাহলে চলুন জেনে নেই কিভাবে ইউটিউব চ্যানেলের সেটিংস সম্পূর্ণ করবেন।

সর্বপ্রথমে, আপনার YouTube Dashboard (ইউটিউব ড্যাসবোর্ডে) প্রবেশ করুন। তারপর ড্যাশবোর্ডের বামদিকে Settings (সেটিংস) অপশনটি দেখতে পারবেন এবং সেই অপশনটিতে ক্লিক করুন। এরপর একটি পপআপ উইন্ডোর মাঝে সেটিংসের বিভিন্ন অপশন গুলো ওপেন হবে। এখন আপনি সেই সেটিংস গুলোকে আপনার প্রয়োজন মতো চেঞ্জ করে নিন। অপশন গুলো হচ্ছেঃ

জেনারেল | General

এখানে প্রথম অপশনটি হচ্ছে জেনারেল General। এখানে Default Unit Currency দেয়া থাকবে। এখান থেকে আপনি US Dollar নির্বাচন করে দিন।

চ্যানেল | Channel 

এরপর দ্বিতীয় অপশনটি হচ্ছে চ্যানেল Channel। এই অপশনটিতে ক্লিক করার পরে আপনি আরও কয়েকটি সাব অপশন দেখতে০ পাবেন। যেমনঃ

Basic Info: এখানে থাকা প্রথম অপশনটি হচ্ছে Basic Info। এই অপশনের মাধ্যমে আপনার ইউটিউব চ্যানেলের নাম ও কোন কোন দেশের ভিউয়ার্সকে আপনি এই চ্যানেলটি দেখাতে চান সেগুলোকে ফিলআপ করে নিশ্চিত (Confirm) করে দিন। পাশাপাশি আপনার ইউটিউব চ্যানেলটির ক্যাটাগরি অনুসারে কয়েকটি কিওয়ার্ড যুক্ত করে দিন। তারপরে সেগুলো সেভ করে দিন। 

Advanced Settings: তারপর আপনি এই সেকশনে প্রবেশ করুন। যদি আপনার ইউটিউব চ্যানেলটিতে প্রফেশনাল লুকিং আনতে চান তাহলে এখান থেকে কিছু সেটিংস চেঞ্জ করা খুব জরুরি। 

এই পর্যায় প্রথমে যদি আপনি আপনার ইউটিউব চ্যানেলটি শিশুদের জন্যে নির্বাচন করতে চান তাহলে Yes এবং যদি শিশুদের জন্য আপনার ইউটিউব চ্যানেল নির্বাচন করতে না চান তাহলে No বাটনে ক্লিক করে দিন। তারপর যদি আপনি আপনার ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিও গুলোতে Auto Generated Captions অর্থাৎ Subtitles যুক্ত করতে চান তাহলে সেটি ছোট বক্সে নির্বাচন করে দিন। এই বার যদি আপনি আপনার ইউটিউব চ্যানেলটির সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা দেখাতে চান তাহলে সেটিও ওপেন করে দিন। তানাহলে অপশনটি ওপেন করা থেকে বিরত থাকতে পারেন।

Manage Your YouTube Account: এই অপশনটির মাধ্যমে ইউটিউব চ্যানেলের এডমিনের বিভিন্ন সেটিংস গুলোকে আপনি চেঞ্জ করতে পারবেন। 

Remove YouTube Content: এই অপশনটির সহায়তায় আপনি আপনার চ্যানেলে আপলোড করা ভিডিও এবং প্লেলিস্ট গুলো রিমুভ করে ফেলতে পারবেন।

Advanced: এই অপশনটিতে আপনার যদি কোনো ওয়েবসাইট থেকে থাকে তাহলে সেটা যুক্ত করতে পারবেন।

আপলোড ডিফল্ট | Upload Defaults

এই অপশনটি হচ্ছে মূলত আপনার ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও আপলোড করার পরে সেগুলোর Default সেটিংস হয়ে থাকার জন্যে। এখানে আপনি যেসকল সাব অপশনগুলোকে দেখতে পারবেন-

Title | টাইটেল: এই অপশনটির মাধমে আপনি ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও আপলোড করার জন্যে ভিডিও গুলোর মাঝে টাইটেল যুক্ত করা যায়। 

Description: এই সেকশনের মাধ্যমে আপনার ইউটিউব চ্যানেলে যে ভিডিওগুলো আপলোড করবেন সেগুলোর জন্যে প্রয়োজনীয় ডিসক্রিপশন ডিফল্ট আকারে রাখা যায়। যার ফলে বারবার সেম ডিসক্রিপশন ভিডিওতে যুক্ত করার প্রয়োজন হয়না।

Visibility: এই সেকশনের মাধ্যমে আপনি আপনার ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিওগুলো প্রাইভেট, আনলিস্টেড, পাবলিক দেরকে দেখাতে চান কি-না সেটা করতে পারবেন।

Tag: এই অংশটির মাধমে ইউটিউব চ্যানেলের ধরন অনুসারে কিছু কিওয়ার্ড দিয়ে রাখতে পারবেন। যেগুলো হচ্ছে ডিফল্ট আকারে জমা হয়ে থাকবে আর পরবর্তীতে আপলোডকৃত ভিডিওর মাঝে অটোমেটিকভাবে যুক্ত হবে।

পারমিশন | Permission

এই অপশনের মাধ্যমে আপনি আপনার ইউটিউব চ্যানেলের Owership চেঞ্জ করতে পারবেন। তাছাড়া ইউটিউব চ্যানেল Access করার জন্যে যদি আপনি কাউকে Permission দিয়ে থাকেন তাহলে সেগুলো নিজের ইচ্ছামতো করে রিমুভ বা চেঞ্জ করে দিতে পারবেন। 

কমিউনিটি | Community

ইউটিউব চ্যানেলের এই অপশনটিতে প্রবেশ করার পর আপনি আরো কিছু অপশন দেখতে পারবেন। যেগুলো আপনার ইউটিউব চ্যানেলে প্রফেশনাল মানের লুক আনার জন্য সাহায্য করবে। যেমন-

Moderators: এটি আপনার ইউটিউব চ্যানেলের কমেন্ট সেকশনকে ম্যানেজ করতে সহায়তা করবে। যেমন- কমেন্ট সেকশনের কোনো প্রশ্নের তাৎক্ষণিক রিপ্লাই দেওয়া।

Approved Users: এই অপশনটির মাধমে আপনার ইউটিউব চ্যানেলের ভিউয়ার্সদের কমেন্ট গুলো অটোমেটিক ভাবে প্রকাশ হয়ে যাবে।

Hidden Users: এই সেকশনের মাধমে আপনার ইউটিউব চ্যানেলের ইউজার বা ভিউয়ারদের কমেন্ট ব্লক করতে পারবেন।

Blocked Words: এখানে লিখিত শব্দগুলো কমেন্ট সেকশনে রিভিউয়ের জন্য চলে যাবে।

Block Links: এই অপশনটি সিলেক্ট করলে যে সকল কমেন্টে URLs উল্লেখ করা থাকবে সেগুলো রিভিউ এর জন্য চলে যাবে।

এগ্রিমেন্ট | Agreements

এটি হচ্ছে আপনার ইউটিউব চ্যানেল সেটিংসের সর্বশেষ স্টেপ। এখান থেকে আপনি শুধুমাত্র Youtube Partner Program Terms গুলোকে পড়ে নিলেই হবে।

যেকোন অনলাইন প্লাটফর্মে ভিজিট করতে হলে সেই প্লাটফ্রমের কমিউনিটি গাইডলাইন গুলোকে অনুসরণ করে চলা আবশ্যক। ইউটিউবের ক্ষেত্রে ঠিক একই। সারা বিশ্বের নাম্বার ১ ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইট হিসাবে ইউটিউবেরও আছে নিজস্ব কয়েকটি কমিউনিটি গাইডলাইন। যেগুলোকে সঠিকভাবে অনুসরণ করলে আপনি ইউটিউবে ভিজিট করার জন্যে উপযুক্ত বলে গণ্য হবেন।

আর্টিকেলের শেষ পর্যায়ে আমি ইউটিউবের গুরুত্বপূর্ণ কিছু কমিউনিটি গাইডলাইন সম্পর্কে ধরবো। যে সকক কমিউনিটি গাইডলাইন একজন ইউটিউব ইউজার হিসেবে আপনার অবশ্যই অনুসরণ করে চলতে হবে।

গোপনীয়তাঃ এটি হলো ইউটিউবের কমিউনিটি গাইডলাইন গুলোর মদ্ধে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে সবাই সকলের গোপনীয়তাকে বজায় রেখে চলতে হবে।

কোনো ইউটিউব চ্যানেল যদি কারো ব্যাক্তিগত কোনো সঠিক অথবা ভুল যেকোনো তথ্যই তার অনুমতি কিংবা অনুমতি ব্যতীত প্রকাশ করে থাকে আর সেই ব্যক্তি যদি ঐ ইউটিউব চ্যানেলের বিরুদ্ধে ইউটিউবের কাছে কমপ্লেইন দেয়, তাহলে ইউটিউব সেই চ্যানেলের বিরুদ্ধে এবং সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হবে। ভিডিওটি ইউটিউব থেকে রিমুভ করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় প্রমাণ ও ডকুমেন্টসের ভিত্তিতে ইউটিউব সেই চ্যানেলটিকে ইউটিউব থেকে বন্ধ করে দিতে পারে।

স্প্যামঃ ভিডিওর মাঝে যকোনো ধরনের স্প্যাম ইউটিউব গ্রহণ করেনা। এখানে স্পাম বলতে বোঝানো হয়েছে শুধুমাত্র ভিডিওর মাঝে ভিউ বাড়ানোর জন্যে ভিডিওর টাইটেল, ডেসক্রিপশন কিংবা থাম্বনাইলের মাঝে এমন কোনো ধরনের তথ্য কিংবা ছবি যুক্ত করা, যার সাথে ভিডিও রিলেটেড কোনো মিল অর্থাৎ ভিডিও সাথে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

ক্ষতিকারক বা বিপজ্জনক কন্টেন্টঃ আপনি ইউটিউব চ্যানেলে এমন কোনো ধরনের কন্টেন্ট বা ভিডিও শেয়ার করতে পারবেন না যে সকল ভিডিও সাধারণত ভিউয়ার্সদের জন্যে ক্ষতিকারক অর্থাৎ বিপজ্জনক হতে পারে। অর্থাৎ এমন কোনো ধরনের ভয়ানক দৃশ্য কিংবা ছবি অথবা মানুষের জন্যে ক্ষতিকারক কোনো ধরনের তথ্য ভিডিওর মাঝে তুলে ধরা জাবেনা। যে ভিডিও গুলোর দ্বারা একজন ভিউয়ার্স বিভ্রান্ত হতে পারে।

মাত্রাতিরিক্ত নগ্নতা বা যৌ- -নতাঃ ইউটিউব এমন কোনো ধরনের ভিডিও সাপোর্ট করে না যেখানে মাত্রাতিরিক্ত নগ্নতা অর্থাৎ যৌ- -নতা প্রদর্শিত হয় কিংবা এ বিষয়ে উদ্দীপিত করে। সুতরাং ইউটিউবে এমন কোনো ধরনের ভিডিও আপলোড করা থেকে সব সময় বিরত থাকতে হবে।

পোষ্ট ক্যাটাগরি:

এখানে আপনার মতামত দিন

0মন্তব্যসমূহ

আপনার মন্তব্য লিখুন (0)