কাবিন নামা অনলাইন কপি: কাবিন নামা অনলাইন চেক করার নিয়ম

কাবিন নামা অনলাইন চেক করার নিয়ম : যারা কাবিন নামা যাচাই করতে চাচ্ছেন অথবা কাবিন নামা অনলাইন কপি চেক করতে চাচ্ছেন তাদের জন্য আজকের এ আর্টিকেলটি অনেক উপকারে আসবে। বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করার পর বিবাহ রেজিস্ট্রেশন সনদ তথা কাবিন নামা কপি কিভাবে পাবেন বা কাবিন নামা কিভাবে যাচাই করবেন তা বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করছি।

অনলাইনে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন যাচাই করার নিয়ম নিয়ে অনেকের মধ্যে কৌতূহলের শেষ নেই। কারণ সবাই বর্তমানে অফলাইনে অর্থাৎ স্ব স্ব শরীরে বিয়ে করার সাথে সাথে কাবিন নামা করে থাকেন। তাই সফলভাবে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর কাবিন নামার প্রয়োজন পড়ে। আর যদি আপনি অনলাইনে কাবিন নামা করে থাকেন তাহলে আপনাকে কাবিন নামা অনলাইন চেক করার জন্য কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হবে।

বিয়ে করার পর বিবাহ সনদ করে ফেলা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই ভাবেন, বিবাহ রেজিস্ট্রসন সনদ বা কাবিন নামা আর কি বা কাজে লাগে। কিন্তু হ্যাঁ, বর্তমানে এখন এটা অনেক ক্ষেত্রেই কাজে লাগে।

বিশেষ করে, যখন আপনি যে বিবাহ করবেন সেটার আইনত যদি দলিল না থাকে তবে কি লাভ বলুন। অনেকেই অনলাইনে খুজে থাকেন কাবিন নামা অনলাইন কপি ডাউনলোড সম্পর্কে। বিবাহ আইনে বলা হয় যে আপনাকে অবশ্যই বিবাহ রেজিস্ট্রার করতে হবে।

প্রিয় পাঠক আমাদের আজকের আর্টিকেলে আপনাদের অনলাইনে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন যাচাই করার নিয়ম, কাবিন নামা অনলাইন কপি, কাবিন নামা বের করার নিয়ম, কাবিন নামা অনলাইন চেক করার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত জানাবো। চলুন তাহলে এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেইঃ

কাবিন নামা অনলাইন চেক করার নিয়ম

(toc) #title=(এক নজরে সম্পূর্ণ লেখা পড়ুন)

কাবিন নামা কি

মুসলমানদের বিয়ের রেজিস্ট্রেশন এর একটি প্রমাণ বা সনদ হলো কাবিননামা। সহজ ভাষায় বিয়ের নিবন্ধন যে কাগজে করা হয় তাকে কাবিন নামা বলে। এই কাবিন নামাতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উল্লেখিত থাকে। যেমন- বরের নাম, কনের নাম, ঠিকানা, দেনমোহর ইত্যাদি।

সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে বিবাহ স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য কাবিননামার মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করা একান্ত জরুরী। বর্তমানে বিবাহের রেজিস্ট্রেশন তথা নিবন্ধনকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এটি সরকারিভাবে বিয়ের বৈধতা প্রমাণ করে।

কাবিন নামা অনলাইন কপি

এখন পর্যন্ত কাবিননামা অনলাইন কপি ডাউনলোড করার নিয়ম নেই। অনলাইন থেকে আপনি আপনার কাবিন নামা পাবেন না। আপনি যদি আপনার কাবিন নামার কপি সংগ্রহ করতে চান তাহলে যে কাজী অফিস থেকে আপনি বিবাহ সম্পন্ন করেছেন সেই কাজী অফিসে আপনি কাবিনামা সংগ্রহ করতে পারবেন। বিয়ের রেজিস্ট্রি হওয়ার প্রায় বেশ কিছুদিন পরেই কাবিন নামা তুলতে পারবেন। এই কপি আপনি একাধিকবার সংগ্রহ করতে পারেন।

কাবিন নামা অনলাইন চেক করার প্রয়োজনীয়তা

কাবিননামা চেক করার প্রয়োজন বিভিন্ন কারণে হতে পারে। কাবিননামা চেক করার প্রধান কারণ হলো কাবিন নামাটি আসল কিনা তা বুঝতে চাওয়া।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে কারও কাবিন নামা নকল করে মানুষকে প্রতারিত করা হয়। তাই কাবিননামা যাচাই করার প্রয়োজন পড়ে। তাছাড়াও বিভিন্ন বাসা বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে, চাকরির ক্ষেত্রে, দেশের বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে কাবিন নামা চেক করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

কাবিন নামা অনলাইন চেক

সাধারণ জনগন কোনো ভাবেই অনলাইনে কাবিননামা চেক করতে পারবে না। কারণ বাংলাদেশ এই প্রক্রিয়া এখনো চালু হয়নি। কাবিন নামা চেক করার জন্য জেলার ম্যারেজ রেজিস্ট্রি অফিসে যেতে হবে। এখানে আপনাকে অনলাইনে কাবিন নামা চেক করে দেবে। 

সুতরাং কাবিননামা চেক করতে হলে শুধুমাত্র জেলা ম্যারেজ রেজিস্টার অফিসে অর্থাৎ জেলার কাজী অফিসে গিয়েই কাবিননামা চেক করতে পারবেন।

আপনি যদি জানতে চান বিয়ের রেজিস্ট্রেশন সঠিকভাবে করা হয়েছে কিনা বা কোন বিবাহ রেজিস্ট্রেশন আদৌ সম্পন্ন হয়েছে কিনা, তাহলে রেজিস্ট্রেশন যাচাইয়ের প্রয়োজন হবে।

সেজন্য আপনাকে সরাসরি জেলা ম্যারেজ রেজিস্টার অফিসে যোগাযোগ করতে হবে সেখানে আপনি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি প্রদান করার পরই আপনার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে কিনা বা রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কে সকল তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন।

কাবিননামা সংশোধন করার নিয়ম

আপনার কাবিননামায় কোনো নাম, জন্ম তারিখ, বা কোনো তথ্য যদি ভুল থাকে এবং সগুলো সংশোধন করতে চান তাহলে আপনি যে কাজী অফিস থেকে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন করেছেন সে কাজী অফিসে সংশোধনের জন্য যেতে হবে। 

অনেকের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি যদি এমন হয় যে, কাবিন নামার কপি দরকার। কিন্তু যে কাজী বিবাহ রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করিয়েছিলেন তার নাম্বার অথবা কাজী অফিসের ঠিকানা মনে করতে পারছেন না, ফলে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সবসময় মনে রাখা দরকার যে বিবাহ রেজিস্টারকারী কাজীর ফোন নাম্বার স্বামী ও স্ত্রীর কাছে থাকা একান্ত জরুরী। কেননা পরবর্তীতে কাবিননামা সংগ্রহের ক্ষেত্রে এই ঠিকানা বা ফোন নাম্বার প্রয়োজন হবে। 

কাবিন নামা হারিয়ে গেলে আপনি যে কাজীর কাছে বিয়ের রেজিস্টার করিয়েছেন তার কাছে যেতে হবে। সে অনুপস্থিত থাকলে আপনি জেলা ম্যারেজ রেজিস্টার এর কার্যালয়ে কাবিননামা সংগ্রহের জন্য যেতে পারেন। 

বিবাহ রেজিষ্ট্রেশন ফি

কাবিননামায় নির্ধারণকৃত দেনমোহর অনুসারে প্রতি ১ হাজার টাকায় ১২.৫০ টাকা হারে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন ফি প্রদান করতে হয়। তবে এই হারে টাকা শুধুমাত্র ৪ লাখ টাকার দেনমোহরের জন্য সীমাবদ্ধ। অর্থাৎ প্রতি ১ লাখ টাকায় ১,২৫০ টাকা করে দিতে হবে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত। ৪ লাখ টাকার বেশি দেনমোহর হলে পরবর্তী প্রতি লাখের জন্য ১০০ টাকা দিতে হবে। 

মনে রাখা প্রয়োজন যে দেনমোহরের টাকার পরিমান যতই কম হোক না কেন বিবাহ রেজিস্ট্রেশন ফি হিসেবে সর্বনিম্ন ২০০ টাকা দিতেই হবে। তবে রেজিস্ট্রেশন ফি এর হার স্থিতিশীল নয়। কারণ সরকার বিভিন্ন সময়ে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এই ফি এর হার পরিবর্তন করে থাকে।

বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করানোর জন্য রেজিস্ট্রেশনকারীকে ২৫ টাকা কমিশন দেয়া হয়। তবে রেজিস্ট্রেশনকারী যদি কনের বাড়িতে এসে রেজিস্ট্রেশন করে আসে তাহলে যাতায়াত ফি দিতে হয়।সাধারণত বিয়ের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ফি দেওয়ার দায়িত্ব বরপক্ষের।

একটা কথা মনে রাখবেন, বিয়ের রেজিস্ট্রেশনের পর কাজী সাহেব একটা রশিদ প্রদান করে। সেটা অবশ্যই যত্ন সহকারে রাখবেন। কেননা কাবিননামা সংগ্রহের ক্ষেত্রে এটা দেখিয়ে কাবিননামা সংগ্রহ করতে হয়।

বিবাহ রেজিস্ট্রেশন না করার শাস্তি

কেউ যদি পারিবারিকভাবে বিবাহ করে এবং পরে যদি বিবাহের রেজিস্ট্রেশন না করে তাহলে আইনত তা দণ্ডনীয় অপরাধ। সরকারিভাবে তথা সামাজিকভাবে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে অন্যথায় বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ২ বছরের জেল অথবা ৩০০০ টাকা জরিমানা করা হতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে একসাথে জেল ও জরিমানা করা হতে পারে।

কাবিননামা প্রয়োজনীয়তা

  • বর বা কনে পক্ষ কেউ বিয়ে অস্বীকার করতে পারে না এবং স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি দায়িত্ব পালনে বাধ্য হয়।
  • কাবিননামার মাধ্যমে স্বামী বা স্ত্রী উভয়েই সম্পত্তির বৈধ উত্তরাধিকার সহজেই পেতে পারেন।
  • স্বামী বিনা অনুমতিতে দ্বিতীয় বিবাহ করলে স্ত্রী সহজেই আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে।
  • কাবিননামা বিয়ের প্রমাণ হওয়ায় স্বামী তার স্ত্রীকে দেনমোহর ও ভরণ পোষণ দিতে বাধ্য।
  • বিয়ের প্রমাণ হিসেবে কাবিননামা দেখাতে হয়। কাবিননামা না দেখাতে পারলে অনেক সময় মেয়েরা প্রতারিত হয়ে থাকে এবং তাদের যথাযথ অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।
  • স্ত্রীর দেনমোহর, ভরণপোষণ, উত্তরাধিকার নির্ণয়, সন্তানের পিতৃত্ব এ সকল ক্ষেত্রে কাবিননামা একটি আইনগত দলিল হিসেবে কাজ করে। 
  • যদি বিবাহ সম্পর্কে কোন সন্দেহ বা জটিলতা তৈরি হয় তাহলে কাবিননামায় উপযুক্ত প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
  • বাল্যবিবাহ রোধ করা সম্ভব হয়। কেননা কাবিন নামায় মেয়ে এবং ছেলে বয়স উল্লেখ করতে হয়। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী বিয়ের বয়স না হলে কাবিননামা অনুযায়ী বিয়ের সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না।

বিয়ের সময় কাবিননামা বিষয় অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। কেননা কাবিননামা না থাকলে অধিকাংশ সময় মেয়েরা তাদের ভরণপোষণ এবং জীবন নিয়ে অনেক সমস্যায় পড়ে। তাই পরিবারদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

কাবিননামার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সমূহ

বিয়ের রেজিস্ট্রেশন ফ্রর্মের সবগুলো তথ্য সঠিকভাবে দিতে হবে। আপনি কি তথ্য পূরণ করছেন তা মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। বিয়ের রেজিস্ট্রেশন ফরমের ১৮ নং ঘরে স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে কিনা তা উল্লেখ করা থাকে। সুতরাং বিয়ের আগে অবশ্যই দেখে নেবেন যে স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে কি না। এছাড়াও ভালোবাসার মানুষের জন্মদিনের শুভেচ্ছা স্ট্যাটাস দেখতে লেখাটি পরতে পারেন।

রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  • বর ও কনের পুরো নাম ও ডাকনাম
  • বর ও কনের পেশা
  • তাদের বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা
  • পাত্র-পাত্রী যে এলাকায় থাকেন সেখানে তারা কতদিন ধরে বসবাস করছেন তার প্রমাণ পত্র। পাত্র-পাত্রী যে এলাকায় থাকেন সেই এলাকায় বসবাসের প্রমাণ দেখাতে হবে যে তারা কতদিন ধরে সে এলাকায় বসবাস করছে।
  • পাত্র-পাত্রী ভোটার আইডি কার্ড এবং জন্ম নিবন্ধনের কপি।

আশা করি আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনারা কাবিননামা কি, কাবিননামার প্রয়োজনীয়তা, বিবাহ রেজিস্ট্রেশন সনদ, কাবিননামা কপি কিভাবে সংগ্রহ করতে হয় এ সংক্রান্ত সকল তথ্য ভালো হবে বুঝতে পেরেছেন। পাশাপাশি আমাদের ওয়েবসাইট থেকে আরো পরতে পারেন কনের জন্য বিয়ের বাজার লিস্ট - বিয়ের কসমেটিকস এর তালিকা

পোষ্ট ক্যাটাগরি: