গরুর বাচ্চা হওয়ার পর করণীয় | গরুর বাছুরের যত্ন

যারা গরুর খামার করে কিংবা গরুর খামার করার কথা ভাবছেন তাদের মধ্যে অনেকেই জানেন না যে গরুর বাচ্চা হওয়ার পর করণীয় কি? গরুর খামারের ব্যবসা করার ক্ষেত্রে এই বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। আপনার গাভী যত বেশি বাচ্চা প্রসব করবে ধীরে ধীরে খামারে ততই গরুর সংখ্যা বাড়বে।

গরুর বাচ্চা হওয়ার পর করণীয়
ছবিঃ গরুর বাছুর

কিন্তু গাভীর বাচ্চা প্রসবের পর কি করতে হবে তা অনেকেই জানেন না। গরুর বাচ্চা হওয়ার পর করণীয় কি এই বিষয়টি সম্পর্কে না জানার কারণে অনেক সময় গাভীর মৃত্যুও হয়। ফলে খামারির লাভের মুখ তো দেখা দূরের কথা উল্টো ক্ষতির মুখে তাকে পড়তে হয়। তাই আজকের আর্টিকেলে আমি বলব গরুর বাচ্চা হওয়ার পর করনীয় কি। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

(toc) #title=(সুচিপত্র)

গরুর বাছুর কত দিনে হয়

গরুর বাচ্চা হওয়ার পর করণীয় কি এই বিষয়টি সম্পর্কে জানার আগে আমরা একটু জেনে নিব গরুর বাছুর কত দিনে হয়? অর্থাৎ একটি গাভী কতদিন ধরে তার বাছুরকে গর্ভে ধারণ করে। সাধারণত একটি গাভী ২৭৪ থেকে ২৯০ দিনের মধ্যে একটি বাছুরকে জন্ম দেয়।

অর্থাৎ ২৭৪ দিন থেকে ২৯০ দিন সময় পর্যন্ত সে তার গর্ভে একটি বাছুরকে ধারণ করে থাকে। আর যদি গড়ে হিসেব করি তাহলে গড়ে ২৮৪ দিনের মধ্যে একটি গরু বাছুর জন্ম দেয়।

আরো পড়ুনঃ ধান কাটার মেশিনের দাম কত ২০২৪

গরুর বাচ্চা হওয়ার পর করণীয়

গরুর বাচ্চা হওয়ার পর করণীয় কি এমন প্রশ্ন সাধারণত গরুর খামারীরাই করে থাকেন। একটি গাভীর যখন বাচ্চা প্রসব করবে তারপর তার যত্ন কিভাবে নিতে হবে, কি কি খাদ্য দিতে হবে, কেমন চিকিৎসা দিতে হবে, অর্থাৎ গরুর বাচ্চা হওয়ার পর করনীয় গুলো ঠিক কি কি তা একজন গরুর খামারিকে ভালো ভাবে জানতে হবে।

কারণ গরুর বাচ্চাও হওয়ার পর যদি বাছুর এবং গাভীর পরিচর্যা ঠিক কিভাবে করতে হয় তা জানা না থাকে তাহলে পরবর্তীতে গাভী এবং বাছুর দুটোরই জীবনের সংশয় থেকে যাবে। তাহলে চলুন জেনে নেই গরুর বাচ্চা হওয়ার পর করণীয় ঠিক কি কিঃ

  • গাভী যখন বাচ্চা প্রসব করবে তারপর থেকে চেষ্টা করবেন গাভীকে বেশ কিছু পরিমাণে শুকনো খাবার খাওয়ানো এবং রসালো ও ভেজা খাবার না খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে।
  • গাভী যখন তার বাচ্চা প্রসব করে তারপরে গাভীর ওলান তথবা তার পাশের অংশে নাভীর নিচের জায়গায়টুকু ফোলা থাকতে দেখা যায়। আর গাভীকে তার এই অবস্থা সারিয়ে তোলার জন্য ১৫ থেকে ১৬ দিন রসালো খাদ্য একদমই দেওয়া যাবে না। এই সময় গাভীকে ভুট্টার গুঁড়া, সয়াবিন, ভাতের মাড়, ইত্যাদি রসালো খাবার গুলো দেওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ এগুলো খেলে গাভীর পেটে অনেক সমস্যা হতে পারে।
  •  প্রসব পরবর্তীকালীন সময়ে অবশ্যই গাভীকে নিয়ম অনুযায়ী খাবার দিতে হবে।
  • গাভী যখন বাচ্চা প্রসব করবে তারপর বেশ কিছুদিন গাভীর দুধ দোহন করা থেকে দূরে থাকবেন।
  • একটি গাভীর বাচ্চা প্রসবের পর গাভী এবং তার বাছুরকে যথাসম্ভব শুকনোস্থানে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে ভেজা জায়গায় গাভী ও তার বাছুর থাকলে তাদের দেহে জীবাণু প্রবেশের আশঙ্কা থাকতে পারে।
  • গাভী বাচ্চা প্রসব করার পরে বেশ কিছুদিন যাবৎ গাভীকে নিয়মিত হাল্কা কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করিয়ে দিতে হবে।

গাভী প্রসবের পর কি খাবার দিব

গরুর বাচ্চা হওয়ার পর করণীয় কি তা তো জেনে গেলেন। তারপর অনেকেই আছেন জানতে চান যে গাভী প্রসবের পর কি খাবার দিব। অর্থাৎ একটি গাভী যখন বাচ্চা প্রসব করবে তারপর প্রসব পরবর্তীকালীন সময়ে গাভীকে ঠিক কি কি খাবার দিতে হবে। গাভীর বাচ্চা প্রসবের পর গাভীকে যে খাবার গুলো নিয়ম মেনে দিতে হবে তা হলো:-

  • একটি গাভী যখন বাচ্চা প্রসব করবে তার বাচ্চা প্রসবের পর গাভীকে থেকে যথেষ্ট পরিমাণে শুকনো খাবার দিতে হবে। ভেজা ও রসালো খাবার দেওয়া যাবে না।
  • গাভীর বাচ্চা প্রসব করার পর অনেক সময় নাভির নিচের অংশটি কিছুটা ফোলা থাকে। আর যতদিন না গাভীর এই অবস্থা কেটে উঠে গাভীকে ততদিন শুকনো খাবার দিতে হবে। এবং এই সময় রসালো খাদ্য যেমনঃ মাসকলাই এর ভুষি জাউ, ভাতের মাড় ইত্যাদি জাতীয় খাবার গুলো অন্তত ১৫ থেকে ১৬ দিন খাওয়ানো যাবে না।
  • বাচ্চা প্রসবের পর গাভীকে শুকনো খড়ের সাথে কিছু গমের ভুষি মিশিয়ে হালকা গরম পানিতে দিয়ে মিশ্রণ করে খাওয়াতে হবে।

মোটামুটি এই নিয়ম মেনেই একটি গাভীকে বাচ্চা প্রসবের পর খাওয়াতে হবে।

আরো পড়ুনঃ মৌজা কিভাবে বের করবো ? মৌজা বের করার নিয়ম ২০২৪

গরুর বাছুরের রোগ

গাভীর বাচ্চা প্রসবের পর বাছুর বা তার বাচ্চার অনেক সময় অনেক ধরনের রোগ দেখা দেয়। একটি গরুর বাছর নানা রকম রোগে আক্রান্ত হতে পারে। যেমন সংক্রামক জাতীয় রোগ, কৃমি বা পরজীবী জনিত রোগ, প্রোটজোয়া জনিত বিশেষ রোগ ও সাধারণ রোগ-ব্যাধিও হয়। গরুর বাছুরের যে রোগ গুলো হয়:

  • কাফ স্কাওয়ার
  • নেভাল ইল যাকে নাভীর রোগ বলে
  • সাল মোনেলোছি
  • ডিপথেরিয়া রোগ
  • সাধারণ নিউমোনিয়া
  • বাদলা রোগ
  • তড়কা রোগ
  • গলা ফুলে যাওয়া রোগ
  • ধনুস্টংকার রোগ 
  • ক্ষুরারোগ
  • জলাতংক রোগ। এটি কুকুরে কামড় দিলে হয় 
  • গো-বসন্ত রোগ 
  • গোল কৃমি 
  • ফিতা কৃমি 
  • পাতা ক্রিম

আরো বেশ কয়েকটি ধরনের রোগেও একটি গরুর বাছুর আক্রান্ত হয়।

আরো পড়ুনঃ হাড় ভেঙে গেলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত

গরুর বাছুরের যত্ন

গরুর বাচ্চা হওয়ার পর করণীয় কি। অর্থাৎ একটি গাভী যখন বাচ্চা প্রসব করবে তখন গাভীটিকে নিয়ে কি কি করবেন তা তো বলেই দিলাম। এবার জানতে হবে যে গরুর বাছুর যত্ন কিভাবে নিবেন। যেভাবে একটি গরুর বাছুরের যত্ন নিবেন:-

  • একটি বাছুর জন্মের পর থেকেই তাকে গাভীর শাল দুধ খেতে দিতে হবে। জন্মের পর এই শাল দূধ বাছুরের সকল রোগ দমন করবে এবং সে সুস্থ ও সবল থাকবে।
  • বাছুরের জন্মের তিন থেকে সাত দিন পর বাছুরটি যাতে মাটি না খায় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ সাধারণত এই সময়টাতে বাছুর মাটি খেতে চায়।
  • টানা তিন মাস নিয়মিত করে বাছুরকে তার মা গাভীর দুধ খেতে দিতে হবে।
  • বাছুরের বয়স ৩ মাস পার হওয়ার পর তাকে অল্প পরিমাণে দানাদার খাবার খেতে দিতে হবে। কারণ সে তা খেতে চাইবে। তাই তখন দানাদার খাবার পরিমাণ মতো খেতে দিতে হবে এবং পাশাপাশি সে দূধ ও খাবে।
  • গাভীর বাচ্চা প্রসবের পর থেকেই বাছুরের থাকার জায়গা সবসময়ই শুকনো এবং জীবাণু মুক্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ভেজা জায়গায় বাছুরকে রাখা যাবে না।

আর এভাবেই বাচ্চা প্রসবের পর একটি বাছুরের যত্ন নিতে হবে।

আরো পড়ুনঃ ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগতে কতদিন সময় লাগে

উপসংহার

গরুর বাচ্চা হওয়ার পর করণীয় কি জেনে তো গেলেন। আশা করি আর এই বিষয়ে আপনাদের আর সমস্যা হবে না। একটি গাভীর যখনই বাচ্চা প্রসব করবে চেষ্টা করবেন গাভী এবং বাছুর দুটোরই যথাযথ যত্ন করতে।

গাভী যদি সুস্থ থাকে তবে পরবর্তীতে সে আরো বছর জন্ম দিতে সক্ষম হবে। আর বাছুর এর সঠিক যত্ন নিলে সে সুস্থ সবল ভাবে বেড়ে উঠবে। ফলে খামারে গরুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং ব্যবসাও হবে ধীরে ধীরে অনেক বড়।

পোষ্ট ক্যাটাগরি: