সাফি সিরাপ এর উপকারিতা | সাফি সিরাপের উপকারিতা

সাফি সিরাপ এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব আজকের এই নিবন্ধনটিতে। তো পাঠক বন্ধুরা আপনি যদি সাফি সিরাপ এর উপকারিতা, সাফি সিরাপ এর কাজ কি, সাফি সিরাপ কিসের ঔষধ, সাফি সিরাপ খেলে কি কি হয়, সাফি সিরাপ এর অপকারিতা, সাফি সিরাপ খাওয়ার সঠিক নিয়ম এবং এর দাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আর্টিকেলের পরবর্তী অংশটুকু পড়ুন।

কেননা আমরা ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করতে চলেছি সাফি সিরাপ এর উপকারিতা, সাফি সিরাপ এর অপকারিতা, সাফি সিরাপ এর ব্যবহারবিধি সম্পর্কে সমস্ত বৃত্তান্ত। তাহলে আসুন মূল আলোচনা পর্ব শুরু করা যাক।

(toc) #title=(সুচিপত্র)

সাফি সিরাপ এর উপকারিতা

সাফি সিরাপ এর উপকারিতা

প্রত্যেকটি ওষুধেরই আলাদা আলাদা উপকারিতা রয়েছে। আর তাই সাফি সিরাপ এর উপকারিতা হিসেবে রয়েছে বেশ কিছু বিষয়। পাশাপাশি অপকারিতা হিসেবেও রয়েছে বিভিন্ন দিক। আমরা মূলত সাফি সিরাপ এর উপকারিতা এবং অপকারিতা উভয় সম্পর্কে আলোচনা করব।

তবে তার আগে এটা যেন জরুরী যে সাফি সিরাপ কিসের ঔষধ! এটি মূলত কেন খাওয়া হয়? তাই সাফি সিরাপ এর উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করার পূর্বে সাফি সিরাপ কিসের ঔষধ এ সম্পর্কে নিচের পয়েন্টটি তুলে ধরছি।

সাফি সিরাপ কিসের ঔষধ?

সাফি সিরাপ হচ্ছে চর্ম রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত একটি ঔষধ। মূলত দাঁতের ক্ষয়, একজিমা এবং শরীরের বিভিন্ন প্রকার চর্ম রোগীর ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা সাফি সিরাপ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ সাফি সিরাপ হচ্ছে চর্মরোগ নিরাময়ের একটি কার্যকরী ঔষধ।

সাফি সিরাপ এর উপকারিতা কি কি?

সাফি সিরাপ এর উপকারিতা গুলো হলো:

  • চর্ম রোগের সংক্রমণ দূর
  • চর্মরোগ দমন
  • এজমিকার সমস্যা দমন

তবে হ্যাঁ, এছাড়াও সাফি সিরাপ এর আরো বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। সেগুলো হলোঃ

  • এটি প্রস্রাব কালীন জ্বালাপোড়ার সমস্যার সমাধান এনে দেয়
  • ফোড়া, দাদ, ফসপাঁচড়া সহ বিভিন্ন রকম রোগ কে সারিয়ে তোলে
  • গলার ইনফেকশনের সমস্যা দূর করে
  • সোরাইসিস এর সমস্যা দমন করে
  • বিভিন্ন ফুসকুড়ি জাতীয় সমস্যা ঠিক করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে
  • রক্ত দূষণ এবং নাকের রক্তক্ষরণ সমস্যার সমাধান এনে দেয়
  • হাম সহ বেশ কিছু রোগ নিয়ন্ত্রণে বিশেষভাবে কার্যকরী ভূমিকা রাখে
  • ত্বক ফর্সা করতে সাহায্য করে
  • ব্রণের সমস্যা দূরীভূত করে
  • কোষ্ঠকাঠিন্য অর্থাৎ পেটের সমস্যায় বিশেষ ভূমিকা রাখে 
  • ঘামাচি খুঁজলি সহ বিভিন্ন চুলকানি থেকে মুক্তি এনে দেয়।

এক কথায়, শুধুমাত্র এই ১টি সিরাপ অনেকগুলো সমস্যার সমাধান এনে দিতে পারে অর্থাৎ সাফি সিরাপের রয়েছে একের অধিক উপকারিতা। তবে এর উপকারিতার ওপর ভিত্তি করে খুব সহজেই এটা বলা যায় সাফি সিরাপ মূলত চর্মরোগ জাতীয় অসুখের একটি উৎকৃষ্ট সিরাপ। যেটা খোস পাঁচরা সহ বিভিন্ন চুলকানি জাতীয় সমস্যা থেকে মুক্তি এনে দিতে বিশেষ ভাবে সহযোগিতা করে।

এখন জানার বিষয় হল, সাফি সিরাপ এর অপকারিতা হিসেবে কি কিছু দিক রয়েছে! মানে সাফি সিরাপ এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কি কি এর অপকারিতা হিসেবে কোন কোন দিক রয়েছে!

সাফি সিরাপ এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া | সাফি সিরাপ এর অপকারিতা কি কি?

সাফি সিরাপ এর খুব একটা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা মেলে না। বলতে পারেন এই ওষুধটির কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। তবে হ্যাঁ, অ্যালকোহল জাতীয় পানি বা নেশাজাতীয় দ্রব্যাদির সাথে সাফি সিরাপ একদমই নিষিদ্ধ। তাই আপনি যদি সিগারেট ও নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করে থাকেন তাহলে সাফি সিরাপ খাওয়ার পূর্বে সেগুলো কিছুদিনের জন্য হলেও বাদ দেওয়ার চেষ্টা করবেন।

কেননা নেশা জাতীয় দ্রব্য অথবা সিগারেট খাওয়ার পাশাপাশি সিরাপ সেবন করলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবেঃ

  • বমি হতে পারে
  • মাথা ঘোরার সমস্যা দেখা দিতে পারে
  • অনবরত মাথা ঝিমঝিম অথবা গা গুলানোর মত সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হওয়া লাগতে পারে।

এক কথায়, সাফি সিরাপ মূলত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অথবা ওষুধের প্রেসক্রিপশনে লেখা নিয়মাবলী মেনে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সঠিক পরিমাণে সেবন করতে হবে। আর তবে আপনি সাফি সিরাপ এর উপকারিতা গুলো ভোগ করতে পারবেন এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত থাকতে সক্ষম হবেন।

সাফি সিরাপ খাওয়ার নিয়ম | সাফি সিরাপ সেবন-বিধি

  • সাফি সিরাপ মূলত খাওয়ার পরে খেতে হয়। এটি প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে খাওয়ার নিয়ম হলো প্রতিদিন এক থেকে দুইবার দুই থেকে চার চা চামচ পরিমাণ খাওয়ার পরে খাওয়া।
  • অন্যদিকে অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আধা থেকে এক চা চামচ প্রতিদিন এক থেকে দুইবার সেবন করার নির্দেশনা দিয়ে থাকে চিকিৎসকরা।

তবে হ্যাঁ, আপনি মূলত সাফি সিরাপ সহ যে কোন সিরাপ বা ট্যাবলেট ওষুধ সেবন করার পূর্বে ওষুধের প্যাকেটে থাকা প্রেসক্রিপশন অথবা ওষুধের গায়ে লেখা সেবন বিধি মেনে ঔষধ খেতে পারেন। কেননা ঐ সকল স্থানে মূলত প্রত্যেকটি ঔষধ সেবন বিধির সুনির্দিষ্ট নিয়ম খুব সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়।

তবে একটি বিষয় হচ্ছে আপনি যদি দীর্ঘদিন যাবত কোন ঔষধ খেতে চান তাহলে অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী। কেননা ঔষধ এর গায়ে প্রাপ্তবয়স্কদের কতটুকু পরিমাণ খেতে হবে এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের কতটুকু পরিমাণ খেতে হবে এটা উল্লেখ থাকলেও এটি মূলত কত দিন যাবত খেতে হবে তা উল্লেখ করা থাকে না।

তাই আমরা সাজেস্ট করব আন্দাজের উপর ভিত্তি করে অথবা কারো মুখে শুনে কোন ঔষধ না খাওয়ার।

  • প্রথমত আপনার সমস্যা খুঁজে বের করুন
  • দ্বিতীয়ত নিকটস্থ কোনো চিকিৎসকের কাছে যান
  • তৃতীয়তঃ আপনার সমস্যাগুলো তার কাছে খুলে বলুন
  • চতুর্থ তাদের পরামর্শ গ্রহণ করুন এবং তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী ঔষধ সঠিক পরিমাণে সঠিক নিয়ম মেনে সেই সুনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সেবন করুন।

আশা করি আপনি খুব দ্রুত সুস্থতা লাভ করবেন সেই সাথে সাফি সিরাপের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। এবার আসুন জেনে নেই সাফি সিরাপ এর দাম এবং এটি আপনি কোথায় পাবেন সে সম্পর্কে। 

সাফি সিরাপ এর দাম

সাফি সিরাপ এর দাম নিম্ন বর্ণিতঃ

  • আপনি যদি ১০০ মিলির একটি সাফি সিরাপ কিনতে চান সেক্ষেত্রে দাম পড়বে মাত্র ৭৫ টাকা। 
  • অন্যদিকে আপনি যদি ২৫০ মিলির একটি সাফি সিরাপ কিনতে চান সে ক্ষেত্রে দাম পরবে ১৪০ টাকা এবং ৪৫০ মিলির দাম পরবে মাত্র ২০০ টাকা।

আর এই ওষুধটি আপনি ফার্মেসির যেকোন দোকান থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন এমনকি অনলাইনে বিভিন্ন ঔষধ বিক্রির ওয়েবসাইট থেকেও কিনতে পারবেন সাফি নামক এই সিরাপ ঔষধ।

এবার চলুন আলোচনার শেষ পর্যায়ে জেনে নেওয়া যাক সাফি সিরাপ তৈরির উপাদান প্রণালী এবং সাফি সিরাপ এর বর্ণনা ও এর সংরক্ষণ পদ্ধতির সম্পর্কে অল্প-স্বল্প খুঁটিনাটি বিষয়।

সাফি সিরাপ

সাফি সিরাপ মূলত প্রাকৃতিক উপাদানের সমান বয়ে প্রস্তুত একটি হারবাল ফার্মাসিটিক্যালস ওষুধ। যে ওষুধটি বিভিন্ন চর্মরোগ, রক্ত দূষণ, ব্রণ, ফুসকুড়ি, স্থূলতা, হাম, প্রসাবকালীন জ্বালাপোড়া এবং একজিমা নামক রোগের ক্ষেত্রে নির্দেশিত হয়ে থাকে। যে ওষুধটির তেমন কোনো ক্ষতিকর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।

সাফি সিরাপ এর উপাদান ও প্রস্তুত প্রণালী

অত্যন্ত উপকারী ও কার্যকরী সিরাপ ঔষধ সাফি। যেটা তৈরিতে বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করা হয়। মূলত ৫ মিলি সিরাপে নিম্ন বর্ণিত উপাদান গুলো জলীয় নির্যাস আকারে উল্লেখিত পরিমাণে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যথা:

  • Cassia angustifolia (সোনাপাতা) ১৭.০০ মিগ্রা, 
  • Rheum emodi (রেউচিনি) ১৩.০০ মিগ্রা, 
  • Cassia occidentalis (কালকাসুন্দে) ১২.৫০ মিগ্রা, 
  • Ocimum sanctum (তুলসী) ২.৫০ মিগ্রা, 
  • Ipomoea turpethum (তেউরী মূল) ২.০০ মিগ্রা, 
  • Rosa damascena (গোলাপ ফুল) ২.০০ মিগ্রা, 
  • Sphaeranthus indicus (মুন্ডীরী ফুল) ২.০০ মিগ্রা, 
  • Gentiana kurroo (নীলকন্ঠী) ২.০০ মিগ্রা, 
  • Fumaria parviflora (ক্ষেতপাপড়া/ শাহতারা) ২.০০ মিগ্রা, 
  • Clitoria ternatea (অপরাজিতা) ২.০০ মিগ্রা,
  • Artemisia absinthium (নাগদনা) ২.০০ মিগ্রা, 
  • Nymphaea alba (শাপলা ফুল) ১.২৫ মিগ্রা, 
  • Dalbergia sissoo (শিশু পাতা) ১.২৫ মিগ্রা, 
  • Pterocarpus santalinus (রক্তচন্দন) ১.২৫ মিগ্রা, 
  • Tinospora cordifolia (গুলঞ্চ) ১.২৫ মিগ্রা, 
  • Terminalia chebula (হরীতকী) ১.২৫ মিগ্রা, 
  • Zingiber zerumbet (একাঙ্গি) ১.২৫ মিগ্রা, 
  • Swertia chirata (চিরতা) ১.২৫ মিগ্রা, 
  • Andrographis paniculata (কালমেঘ) ১.২৫ মিগ্রা, 
  • Bauhinia racemosa (রক্তকাঞ্চন) ১.২৫ মিগ্রা, 
  • Azadirachta indica (নিম) ১.২৫ মিগ্রা এবং 
  • Curcuma longa (হলুদ) ১.২৫ মিগ্রা।

আর হ্যাঁ, এই ওষুধটি খাবার সময় সতর্কতা হিসেবে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে সেগুলো হচ্ছেঃ

সাফি সিরাপ সেবনের সময় ক্ষুধার পরিমাণ এর চেয়ে কম খেতে হবে সেই সাথে ভাজা মসলা ও গুরুপাক খাদ্য পরিহার করতে হবে একেবারেই। আর ওষুধ কি অবশ্যই শিশুদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে। আর যদি সংরক্ষণ পদ্ধতির কথা বলেন তাহলে আলো থেকে দূরে ঠান্ডা ও শুষ্ক স্থানে রাখতে হবে সাফি সিরাপ ঔষধটি।

তো সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আশা করছি আমাদের আজকের এই আলোচনার মাধ্যমে আপনি সাফি সিরাপ এর উপকারিতা এবং এটি সেবনের নিয়মাবলী সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন। যদি আরো কোন প্রশ্ন বা মন্তব্য থেকে থাকে কমেন্ট সেকশনে জানিয়ে দিন। সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন আল্লাহ হাফেজ।

আরো পড়ুনঃ

সোলাস ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম

ই ক্যাপ 400 এর উপকারিতা

বাচ্চাদের কাশির সিরাপ এর নাম

কাতিলা গাম ও তালমাখনা খাওয়ার নিয়ম

পোষ্ট ক্যাটাগরি: