ইন্টারনেটের উপকারিতা ও অপকারিতা | ইন্টারনেট এর উপকারিতা ও অপকারিতা

ইন্টারনেট এর উপকারিতা ও অপকারিতা - ইন্টারনেট আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কর্মক্ষেত্রকে অনেক সহজ করে তুলেছে। যার ব্যবহারে সারা বিশ্বে ডিজিটাল প্রযুক্তি চালু হয়েছে ও বর্তমান প্রজন্মকে অনেক অগ্রগতির দিকে ধাবিত করছে।

ইন্টারনেট মূলত ইথারনেট (Ethernet) শব্দটি থেকে উৎপত্তি হয়েছে, ইন্টার অর্থ 'ভিতরে' এবং নেট অর্থ 'জাল'। অর্থাৎ ইন্টারনেট শব্দের অর্থ "অন্তর্জাল"। সংযুক্ত নেটওয়ার্ক তরঙ্গের মাধ্যমে যোগাযোগের একটি সহজ পদ্ধতিকে বোঝানো হয় অর্থাৎ অসংখ্য কম্পিউটারকে একে অপরের সাথে যুক্ত করে তথ্য আদান-প্রদানের পদ্ধতিকে ইন্টারনেট বলে।

আমাদের আজকের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন, ইন্টারনেটের উপকারিতা ও অপকারিতা, শিক্ষায় ইন্টারনেট ব্যবহারের উপকারিতা, অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের কুফল, ইন্টারনেটের ব্যবহার, বিতর্ক প্রতিযোগিতার জন্য ইন্টারনেটের কুফল সহ ইন্টারনেট সম্পর্কে নানান তথ্য। তো চলুন আর দেরি না করে প্রথমেই জেনে আসি, ইন্টারনেটের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্মন্ধে।

(toc) #title=(সুচিপত্র)

ইন্টারনেটের উপকারিতা ও অপকারিতা

ইন্টারনেটের উপকারিতা - ইন্টারনেট এর উপকারিতা

আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মূল বিষয় হচ্ছে, ইন্টারনেটের উপকারিতা ও অপকারিতা। ইন্টারনেটের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সহ শিক্ষায় ইন্টারনেটের ব্যবহার, এইসব বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।

ইন্টারনেটের আমাদের জীবনে যেমন সুফল বয়ে আনে তেমনি ইন্টারনেট কুফলও বয়ে আনতে পারে। যেকোনো তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহৃত হয় এবং এর বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও রয়েছে। ইন্টারনেট এর উপকারিতা গুলো নিম্নে দেওয়া হলঃ

১. বিনামূল্যের তথ্য সংগ্রহ

লাইব্রেরি বা গবেষণাগারে নিয়মিত যাতায়াত করে ইতিহাসের বা অন্য যেকোন বিষয়ের তথ্য সংগ্রহ করা বিপুল অর্থব্যয় হয় ও সময় সাপেক্ষ হয়ে থাকে। এই ক্ষেত্রে ইন্টারনেটে অনেক সুবিধা রয়েছে, খুব সামান্য অর্থব্যয় ও অল্প সময়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা যায় ইন্টারনেট থেকে।

২. তথ্যের সহজলভ্যতা

যেকোনো কিছু জানার জন্য বা খুঁজে বের করার জন্য খুব সহজেই ইন্টারনেট থেকে তা পুরো ইতিহাস বের করা সম্ভব হয়, যা অন্য কোন কিছুর মাধ্যমে এত সহজে অল্প সময়ে তথ্য বের করা সম্ভব হয় না।

৩. ঘরে বসে ব্যবসা

বাইরে না গিয়ে আপনি ঘরে বসেই নিজস্ব ব্যবসা সামলাতে পারেন, তা একমাত্র ইন্টারনেটের মাধ্যমেই সম্ভব হয়। ডিজিটাল মার্কেটিং বা বিভিন্ন টেকনিক ব্যবহার করে সহজেই যেকোন পণ্য দেশের যেকোনো জায়গায় বিক্রি করতে পারছেন ইন্টারনেটের মাধ্যমে।

৪. শিক্ষার ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের উপকারিতা

দেশের মহামারীর সময় আপনি স্কুল/কলেজে না গিয়েও ঘরে বসে নিয়মিত ক্লাস করতে পারছেন, প্রয়োজনীয় সব তথ্য আধান প্রদান করতে পারছেন তা একমাত্র ইন্টারনেটের মাধ্যমেই। তাছাড়া ও এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে online education বা distance learning programs এর প্রচলন খুবই জনপ্রিয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

৫. সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা

ইন্টারনেটের মাধ্যমে এখন যোগাযোগের ব্যবস্থা অনেক সহজ হয়ে উঠেছে। মাইলের পর মাইল দূরে অবস্থান করেও মুহূর্তের মধ্যেই প্রিয়জনের সাথে ভিডিও কলে দেখা করা যায়। কাজ করে করেও কাজের ফাঁকে ম্যাসেজে কথা বলা যায়। এই সবকিছুই এখন ইন্টারনেট দ্বারা সম্ভব।

বর্তমানে এখন যেকোনো বিষয়েই, জানতে বা শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য YouTube বা Google search করেই লোকজন মুহূর্তের তথ্য বের করে ফেলছেন অথবা ভিডিও দেখে সাথে সাথে প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাচ্ছেন। এইসব কিছু মিলিয়ে বর্তমানে লোকেরা প্রচুর পরিমাণে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। যেকোনো তথ্য বা শিক্ষার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট সুবিধার তুলনা নেই।

ইন্টারনেটের অপকারিতা | ইন্টারনেট এর অপকারিতা

ইন্টারনেট ব্যবহার করে যেমন অধিক সুবিধা পাওয়া যায়, তেমনি অনেক ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ক্ষতিরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তেমনি কয়েকটি ইন্টারনেটের অপকারিতা গুলো হচ্ছেঃ

১. যুবসমাজের ক্ষতির কারণ

অনেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সুফল বয়ে আনলেও, অনেক যুবসমাজ ইন্টারনেটের মাধ্যমে ক্ষতির দিকে ধাবিত হচ্ছেন, গেমস, অসাধু অ্যাপস ব্যবহার করে। বিভিন্ন হারাম কাজে নিজেকে নিযুক্ত করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে জীবনে কুফল বয়ে আনছেন।

২. মনগড়া তথ্য

কিছু কিছু ওয়েবসাইট বা ভিডিও মনগড়া তথ্য দিয়ে সাজানো হয়, যার কারণে লোকজন সঠিক তথ্য বা সঠিক ভিডিও না পেয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ছেন। অসত্য বা অর্ধসত্য তথ্য পেয়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

৩. তথ্যের অসম্পূর্ণতা

বইয়ের ক্ষেত্রে যেভাবে একটি বইতে পুরো বিষয় একসাথে পাওয়া যায়। ইন্টারনেটে খুঁজতে গেলে তা অনেক সময় অংশবিশেষ বা কিছু অংশ পাওয়া যায়। অথবা কিছুটা দেওয়া থাকে বাকিটা পরবর্তীতে পাবেন বলে থাকলেও, অনেক সময় পরে আর তা পাওয়া যায় না।

৪. অশ্লীলতা বৃদ্ধি

বর্তমানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেক খারাপ ভিডিও প্রচার হওয়ার সাথে সাথে খারাপ কাজও করা হয়। যার কারনে ইন্টারনেটের এই প্রযুক্তির জন্য অনেকাংশ লোকজন ক্ষতির দিকে ধাবিত হচ্ছেন।

৫. শিশুদের ক্রা*ইম

শিশুরা যেমন ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভালো কিছু শিখতে পারছে তেমনি, ভালোর চেয়ে খারাপ কাজটাকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। বিভিন্ন ক্রা*ইম বিষয়ের প্রোগ্রাম বা কার্টুন দেখে নিজেরাও ক্রা*ইম এর মধ্যে ডুবে যাচ্ছে।

তাই আমরা সব সময় চেষ্টা করবো, ইন্টারনেটের মধ্যে খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার এবং খারাপ ভিডিও গুলো থেকে এড়িয়ে চলার এবং অবশ্যই শিশুদের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট থেকে দূরে রাখাই উচিত তবে মাঝে মধ্যে শিক্ষার ক্ষেত্রে বা প্রয়োজনীয় কোন কারনে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন। তারপরও আমাদের খেয়াল রাখা উচিত আমাদের শিশুরা যেন অতিরিক্ত ইন্টারনেটের প্রতি ধাবিত না হয়।

শিক্ষায় ইন্টারনেট ব্যবহারের উপকারিতা

বর্তমান সময় অনলাইনে ক্লাসটা খুবই কমন হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীরা বাড়িতে বসেই ক্লাসে জয়েন করতে পারছে। সেরকমি শিক্ষা ইন্টারনেট ব্যবহারের কিছু উপকারিতা নিম্নে দেওয়া হলঃ

মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার বিস্তারঃ বর্তমানে বেশিরভাগ স্কুল বা কলেজে মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যার ফলে খুব সহজেই শিক্ষার্থীরা যা পড়ে বুঝতে পারেনা তা মাল্টিমিডিয়ায় দেখে খুব সহজেই বুঝতে পারে। বিজ্ঞানের গবেষণায় জানা যায়, এই মাল্টিমিডিয়ায় দৃশ্য - শ্রাব্য কনটেন্ট পড়াশোনা মনে রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।

সময় উপযোগী তথ্যের উপলব্ধঃ ইন্টারনেটে মাধ্যমে শিক্ষার বিভিন্ন বিষয়ের তথ্য কিছুদিন পরপরই তার আপডেট তথ্য পাওয়া যায়। যার ফলে শিক্ষার্থীরা যেকোন বিষয়ের উপর নতুন নতুন তথ্য জানতে পারে।

শেখার পদ্ধতিঃ যেকোনো প্রশ্নের উত্তর ইন্টারনেটে খুঁজলে একভাবে না বুঝলে, একই প্রশ্নের উত্তর বিভিন্ন ভাবে পাওয়া যায়। এক পদ্ধতিতে না বুঝলে অন্যান্য অনেক পদ্ধতি পাওয়া যায়, যা খুব সহজেই ব্যবহার করা যায় এবং তা মুহূর্তের মধ্যেই।

অনলাইনের ক্লাসঃ কোন কারণে স্কুল বন্ধ থাকলে বা যেকোনো কারণে আপনি ক্লাস করতে না পারলে, সেই ক্লাসটাই আপনি খুব সহজেই ইন্টারনেটে পেয়ে যাচ্ছেন। লাইভ অথবা রেকর্ডিং ক্লাসও নিতে পারছেন, একবার না বুঝলে সেই ক্লাসটা আবার দ্বিতীয়বার দেখতে পারছেন। যেকোন প্রশ্ন কমেন্ট করলেই, মুহূর্তেই তার উত্তর পেয়ে যাচ্ছেন।

অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের কুফল

ইন্টারনেটের অযৌক্তিক ব্যবহার মানব জীবনে বহুবিধ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ইন্টারনেটে আসক্তির জন্য ব্যবহারকারী কতক্ষণ ইন্টারনেট ব্যবহার করল সেটা মূল বিষয় নয়, মূল বিষয় হচ্ছে ইন্টারনেটে ওই সময় কি ব্যবহার করছে। অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের কিছু কুফল হচ্ছেঃ

  • গেইমিং 
  • অপ্রয়োজনীয় ফেসবুকিং 
  • চ্যাটিং 
  • অপ্রয়োজনীয় শপিং 
  • ব্রাউজিং 
  • গ্যামবিলিং
  • পর্নো*গ্রাফি 
  • পরকীয়া

ইন্টারনেটের এই অপব্যবহার গুলোতে শিশু, কিশোর, যুবক, তরুণ, পূর্ণবয়স্ক, মধ্যবয়স্ক, বৃদ্ধ সবাই নিযুক্ত রয়েছেন। শিশুদের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ দেখা যায় পর্নো*গ্রাফি বা গেইমিং এর দিকে বেশি ধাবিত হচ্ছে এবং পূর্ণবয়স্কদের ক্ষেত্রে অবৈধ সম্পর্কের জড়িয়ে পড়ে। তাই নির্দিষ্ট কাজের সময়ের পর ইন্টারনেট ব্যবহার না করাটাই ভালো। ইন্টারনেট ব্যবহার হতে হবে পরিশীলিত ও যথার্থ যৌক্তিক।

বিতর্ক প্রতিযোগিতার জন্য ইন্টারনেটের কুফল

বিতর্ক প্রতিযোগিতার জন্য ইন্টারনেটের কিছু কুফল তুলে ধরতে পারেন, যেমনঃ

ইন্টারনেটের মাধ্যমে বাচ্চারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, বাইরের খেলাধুলা, বেড়ানো, ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা অনেকাংশ কমে গেছে। সময় পেলেই মোবাইল কম্পিউটার নিয়ে বসে পড়ে গেমস্, অতিরিক্ত ফেসবুকিং, চ্যাটিং এর জন্য। ইন্টারনেট মানব জীবনের সুফল বয়ে আনার সাথে সাথে কুফলও যুক্ত হচ্ছে অনেকাংশে।

  • ইন্টারনেটে মেগাবাইট কেনার জন্য আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নানান ধরনের লোকজন।
  • ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাসওয়ার্ড, বিভিন্ন ডাটা, প্রয়োজনীয় তথ্য চুরি করা হয়।
  • ইন্টারনেটের মাধ্যমে সন্ত্রাসী, জঙ্গিরা, অপহরণ, খুনের মতো নানা অনৈতিক কর্মকান্ডের ঘটনা সংঘটিত করছে।
  • অনলাইন শপিংকে লোকজনকে অনেক সময় প্রতারণার শিকার হতে হচ্ছে।
  • ইন্টারনেটের মাধ্যমে মিথ্যা কথা ও নানা গুজব ছড়ানো হয়।
  • যুবক যুবতীরা বিভিন্ন অশ্লীল ও খারাপ কাজে প্রতিনিয়ত নিজেকে নিযুক্ত করছে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে।

উপসংহারঃ ইন্টারনেট এর উপকারিতা ও অপকারিতা

বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবস্থার ফলে, মুহূর্তের মধ্যেই যেকোনো খবর ঘরে বসেই টিভি, অনলাইন, ইউটিউব, ফেসবুকের মাধ্যমে জানা যায়। তার সাথে সাথে আবার নিজেদের মতামত, অনুভূতি ও প্রকাশ করা যায়। ইন্টারনেট অনেক কঠিনতম কাজেরও সঠিক সমাধান বের করে দিতে পারে মুহূর্তেই।

আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পারলেন, ইন্টারনেটের উপকারিতা ও অপকারিতা, শিক্ষায় ইন্টারনেট ব্যবহারের উপকারিতা, অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের কুফল, ইন্টারনেট ব্যবহার ও ইন্টারনেটের প্রয়োজনীয় অনেক তথ্য।

আশা করি আমাদের আজকের এই ইন্টারনেট সম্পর্কিত আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে। মনোযোগ সহকারে পুরো আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এরকমই অন্যান্য অনেক প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করবেন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।

কম্পিউটার কোর্স কোনটা ভালো

সোশ্যাল মিডিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

কোন জায়গায় গেলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়

প্রতিদিন ১০০০ টাকা ইনকাম করার সেরা ২০টি উপায়

পোষ্ট ক্যাটাগরি: