সোশ্যাল মিডিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

বর্তমান ইন্টারনেটের যুগে বিশ্ব সমাজে খুবই শক্তিশালী একটি নাম হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যেমন ভালো ভালো কাজ করা যায় ঠিক তার বিপরীতে খারাপ কাজ ও কিন্ত করা যায়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভালো দিক খারাপ দিক দুটোই আছে। কেননা সোশ্যাল মিডিয়া একটা জনপ্রিয় মাধ্যম। যেখানে তরুণ তরুণী সহ বয়স্ক লোকেরা সময় অতিবাহিত করে।

আজকেরর এই আর্টিকেল থেকে আমরা জানবো সোশ্যাল মিডিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্বন্ধে। তার আগে প্রথমে জানি সোশ্যাল মিডিয়া কাকে বলে? কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বলতে কি বুঝায়?

সোশ্যাল মিডিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

(toc) #title=(পোষ্ট সূচিপত্র)

সোশ্যাল মিডিয়া কাকে বলে

সামাজিক যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য মিডিয়া কিংবা মাধ্যমই হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া। একজন আরেকজনের সঙ্গে কথা, ছবি, ভিডিও শেয়ার করার মাধ্যমে নিজেদের মাঝে রক্ষা করে এসকল সাইট কিংবা অ্যাপ দিয়ে। বলা যায় এজন্যই এসকল সোশ্যাল মিডিয়া। সোশ্যাল মিডিয়া গুলো হল: ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, টুইটার, পিন্টারেস্ট, লিংকডইন, ইউটিউব, Reddit ইত্যাদি।

সোশ্যাল মিডিয়ার বিস্তর জনপ্রিয়তা এবং ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোর ইউজারদের মাঝে কিছু একটা হলেই সাতপাঁচ কোনোকিছু না ভেবেই অনুভূতি প্রকাশ করার প্রবণতা তৈরি হয়ছে।

বন্ধু-বান্ধবদের সাথে কোনো একটা কিছু বিষয়ে কথা কাটাকাটি এবং রাগারাগি হলেই ফেসবুকে তথা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়ে সেটা সকলকে জানিয়ে দিতে হয়।

আসলে সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে এই যে, তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখানো হচ্ছে এতে সমস্যা তো সমাধান হয়ই না বরং সমস্যাটিকে আরো জটিল ও দুর্বোধ্য করে তুলছে যা সম্পর্ক অবনতির ক্ষেত্রে ব্যাপক আকারে বিপর্যয় ডেকে আনে।

আরো পড়ুনঃ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এর বেতন কত

বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৩ বিলিয়নের বেশি মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছে যা সারাবিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৪০%। সাম্প্রতিক সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের ইউজার সংখ্যা বৈপ্লবিকভাবে বেড়েই চলছে। সোশ্যাল মিডিয়াকে নাগরিকের ক্ষমতায়নের হাতিয়ার বলা হয়ে থাকে।

সোশ্যাল মিডিয়ার হাত ধরে বিভিন্ন কল্যাণকর কাজ সাধিত হয়েছে তাতে কোনো ধরনের অবকাশ নেই। কিন্তু আমাদের মধ্যে যে সকল ব্যাধি তৈরি করছে তার মাত্রা যে আরো বেশি ভয়াবহ সেটা কিন্ত সন্দেহাতীত।

প্রিয় পাঠক চলুন জেনে নেই সোশ্যাল মিডিয়ার উপকারিতা ও আপকারিতা সম্পর্কে। প্রথমে আমরা জানবো সোশ্যাল মিডিয়ার উপকারিতা সম্পর্কে এবং শেষের অংশে সোশ্যাল মিডিয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জানবোঃ

সোশ্যাল মিডিয়ার উপকারিতা

সোশ্যাল মিডিয়ার সুবিধা গুলো হলঃ

  • সহজেই একে অন্যের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়
  • শিক্ষা ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ার উপকারিতা অনেক
  • ব্যবসা বানিজ্যের সাফল্যের পিছনে রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার অনেক বড় অবদান।
  • সোশ্যাল মিডিয়া সচেতনতা তৈরি করে
  • সরকার এবং নিরাপত্তা এজেন্সিকে সাহায্য করে
  • বিভিন্ন বিষয়ে গ্রুপ তৈরি করতে সাহায্য করে
  • সোশ্যাল মিডিয়ার মূল সুবিধা হচ্ছে, আপনি সবসময় আপডেট থাকতে পারবেন।

⏩সোশ্যাল মিডিয়া হচ্ছে বর্তমান সময়ের সবথেকে জনপ্রিয় মাধ্যম ও পছন্দের তথ্য বিনিময়ের মাধ্যম। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রথম ও প্রধান সুবিধে হচ্ছে যোগাযোগ বা সংযোগ। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার মাধ্যমে লক্ষ কোটি মানুষের মেল বন্ধন ঘটেছে।

আঙুলের স্পর্শে ভৌগোলিক দূরত্ব মুছে যাচ্ছে, দেশ ও মহাদেশ এবং মহাসাগর অতিক্রম করে মানুষ একেকজন মিশে যাচ্ছে, একাকার হয়ে স্থান, কাল, পাত্রকে উপেক্ষা করে। যেকোনো জায়গা থেকে মানুষ যেকারোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। অবস্থান ও ধর্ম নির্বিশেষে।

⏩সোশ্যাল মিডিয়ার সবচেয়ে বড় অবদান হচ্ছে প্রতিটি মানুষ তার নিজের কথা বলার একটা প্লাটফর্ম পেয়েছে। নিজের অনুভূতি-উপলদ্ধি, নিজের মতামত সবকিছু শেয়ার করে নিতে পারছে অন্যের সঙ্গে।

সেদিক থেকে খেয়াল করলে সোশ্যাল মিডিয়া একটা সামাজিক বিপ্লব এনে দিয়েছে আমাদের সমাজে। সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ছবি যেমনঃ আমরা সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখতে পাচ্ছি তেমনি ব্যক্তি মানুষের চাওয়া পাওয়া বেঁচে থাকা, জীবন সংগ্রামের চলচিত্রও ফুটে উঠছে।

শুধুমাত্র তাই নয় বিশ্বের নানা জনজাতি, নানান সংস্কৃতির মানুষের মাঝে সাহিত্য-দর্শন, রাজনীতি-সমাজনীতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রভৃতি জ্ঞান সাম্রাজ্যের মণিমুক্ত আদান-প্রদান করে নিচ্ছি।

সেদিক থেকে সোশ্যাল মিডিয়া সাংস্কৃতিক ভাব বিনিময়ের অন্যতম বিশ্বস্ত মাধ্যম হয়ে উঠেছে এই কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তাছাড়া সমাজের প্রতিবন্ধকতার কুসংস্কার, নানা ব্যাভিচার, গোঁড়ামির মূলেও কুঠারাঘাত করছে সোশ্যাল মিডিয়া।

⏩জন্মদিন, বিয়ে, খুশি, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্টের মাধ্যমে সকল বন্ধুদের জানানো যায় সহজেই। এছাড়াও বিখ্যাত সেলিব্রিটি এবং রাজনীতিবিদদের তাদের ভালো কাজের জন্য অভিনন্দন জানানো এবং খারাপ কাজের জন্য তাদের নিন্দা করা যায়।

সোশ্যাল মিডিয়া হচ্ছে সাধারণ জনগণ এবং সরকার, সেলিব্রিটি, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

ন্যায়বিচার, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নিরাপত্তা বা অন্য কোনো ধরনের সমস্যার সমাধানের জন্য সমাজের মানুষ সরাসরি প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং অন্যান্য বড় কর্মকর্তা বা স্বীকৃত ব্যক্তিদের কাছে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পৌঁছে দেয়।

বিভিন্ন অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও দেশের নিরাপত্তা ইস্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষ একে অপরের সাথে যোগাযোগ, তর্ক-বিতর্ক ও আলোচনার মাধ্যমে সঠিক সমাধানের চেষ্টা করে।

আরাে পড়ুনঃ মোবাইল ফোনের উপকারিতা বিতর্ক প্রতিযোগিতা

⏩সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার মাধ্যমে যেকোনো ব্যক্তি সোশ্যাল মিডিয়াতে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে দেশ এবং বিশ্বের সকল খবর জানার পাশাপাশি নিজের মতামত, অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান মানুষের সাথে শেয়ার করতে পারবেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিরা তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং বিচার সংক্রান্ত সমস্যা সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে পারে। অর্থনৈতিক, ব্যবসা, কর্মসংস্থান, সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, বিচারক, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদির মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে লোকেরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সুবিধে গ্রহণ করে।

⏩সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার মাধ্যমে ঘরে বসে চাকরি, শিক্ষা, চিকিৎসা, আইনি পরামর্শ, মোবাইল পরিষেবা, খাবার পরিষেবা ইত্যাদির ব্যবস্থা সহজেই পাওয়া যায়।

⏩সকল সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলোতে ছবি বা পিকচার এবং ভিডিও শেয়ার করা যায়। আপনি ভালোমানের শিক্ষণীয় ছবি অথবা ভিডিও কিংবা অথেন্টিক ইসলামিক বিভিন্ন আমলের ছবি আপনার পেজ কিংবা পার্সোনাল আইডি থেকে শেয়ার করতে পারেন।

যেমন ধরুনঃ অনেক ভাই বিভিন্ন বিশেষ দিনের ওয়াজ/আমল/সালাত/ রোজা ইত্যাদির কথা জানিয়ে দিয়ে পোস্ট করেন। এসকল পোস্ট দেখে অনেকেই আছেন যারা পূর্বে জানতো না কিন্তু ঐ ভাইয়ের করা পোস্টটি দেখে জানতে পেরে আমল/রোজা/সালাত করলো। যার কারণে কিন্তু যে ভাই পোস্টটি শেয়ার করলো সেও কিন্ত সওয়াবের ভাগ পেলো।

সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলোতে বিভিন্ন ধরনের সচেতনতা মূলক ছবি তৈরি করে সেসকল ছবি শেয়ার করতে পারেন। মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরি করতে পারেন সোশ্যাল সাইটের মাধ্যমে।

কোন ফলের কি কি সুবিধে এমন লেখা ছবি হয়তোবা আপনি দেখে থাকবেন। ঠিক একই রকম আইডিয়া দিয়ে বিভিন্ন গাছ, মাটি পাথর ইত্যাদির ব্যবহার জানিয়ে ছবি তৈরি করুন। মূল কথা হলো মানুষের উপকার হবে এমন ধরনের ছবি তৈরি করে সোশ্যাল সাইট গুলোতে শেয়ার করুন।

তবে হ্যাঁ এমন কোনো ছবি শেয়ার করবেন না যা পরে আক্ষেপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সোশ্যাল মিডিয়ার ছবিতে মেয়েদের ছবি এড়িয়ে চলুন সেটা নাহলে আপনার মৃ- ত্যুর পরেও সেসকল ছবির কারণে পাপ হতেই থাকবে।

দেখুন বর্তমান সময়ে বেশির ভাগ মানুষ বড় বড় লেখাগুলো পড়তে চায়না, কিন্তু ছোট একটা ছবি কিছুক্ষণ দেখেই অনেক কিছু সম্পর্কে জানতে পারে এমন ছবি দেখতে ভালোবাসে এবং শেয়ার করে। সামান্য কথাতে বেশি বেশি ইনফরমেশন। ইনফোগ্রাফিক্স তৈরি করতে পারলে তো আরও ভালো।

⏩সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার মাধ্যমে সমাজের ভালো ও মন্দ বিষয় নিয়ে বিতর্ক করা এবং মানুষকে সচেতন করা সম্ভবপর হয়। এছাড়াও সামাজিক সংস্কার, বিনামূল্যে খাদ্য পরিষেবা এবং খাবার-পানির সুবিধা, দরিদ্রদের সাহায্য ইত্যাদি প্রচার ও প্রসার করা। একে অপরের সমস্যার সমাধান প্রদান সহজ হয়।

⏩অনেকেই আছেন যারা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে তাদের কোম্পানি/বিজনেসের জন্য লোক খুঁজে থাকেন এবং পোস্ট করে থাকেন। আর আপনি এই স্থানীয়ভাবে চাকরি পেতে অনলাইন জব পোর্টালে আবেদন করতে পারবেন সহজেই।

এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে বিভিন্ন স্থান এবং দেশ এবং বিদেশের লোকেদেরকে নিয়ে একটি টিম গঠন করে অনলাইন গেম খেলা যায়।

⏩সোশ্যাল মিডিয়া সাইট ব্যবহার করার মাধ্যমে উৎসাহ দিন। আমি আপনি সকলেই পাপি তাই বলে কি ভালো কাজে উৎসাহ দেওয়া থেমে থাকবে? না ভালো কাজে উৎসাহ দেয়া থেমে থাকবে না।

তুমি পাপি তুমি খারাপ, তুমি অমুক দেখো তমুক দেখো তোমার মুখে উপদেশ মানায় না ব্লা ব্লা এসকল কিছু হচ্ছে শয়তানের ফাদ। আর এগুলো আমাদের পাপ কাজ করার আবার ভালো কাজে উৎসাহ দেওয়া থেকে বিরত রাখে।

তাই আপনি নিজে ভালো কাজ করুন এবং অন্যদের কেউ ভালো কাজের প্রতি উপদেশ দিন। হোক সেটা বাস্তব জীবনে অথবা সোশ্যাল মিডিয়াতে।

⏩সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে আপনার ব্র্যান্ড বা প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন দিন। যদি আপনি আপনার কোনো ব্র্যান্ড কিংবা প্রোডাক্টের জন্য বিজ্ঞাপন দিতে চান, তবে আপনি সম্ভবত সোশ্যাল মিডিয়ার চেয়ে আর ভালো কোনো প্ল্যাটফর্ম খুঁজে পাবেন না।

আপনি সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার প্রোডাক্ট কিংবা ব্র্যান্ডের প্রচার-প্রচারণা করতে পারেন, সেই সঙ্গে আপনি সেই ব্যক্তিদেরও প্রচার-প্রচারনা করতে পারেন। যাদের কাছে আপনি আপনার প্রোডাক্ট কিংবা ব্র্যান্ড পৌঁছে দিতে চান।

তাহলে আপনি আপনার প্রোডাক্ট বা ব্র্যান্ডের জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসাবে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করতে পারেন। ব্র্যান্ড সচেতনতা এবং মার্কেটিং জনসাধারণের কাছে একটি নির্দিষ্ট ধরণের প্রোডাক্টের তথ্য পৌঁছে দিতে এবং বিক্রি করতে কার্যকরভাবে সহায়ক হিসেবে কাজ করে সোশ্যাল মিডিয়া। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থান, ব্যবসা, দোকান, পরিষেবা, পণ্য ইত্যাদি প্রচার করে এবং উপার্জন করে।

⏩সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নতুন ধরনের বিদেশী বন্ধু তৈরি করা এবং তাদের সাথে একে অপরের দেশের সভ্যতা, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি, শিক্ষা, ভালো জিনিস, কর্মসংস্থান ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা যায়।

⏩সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে আপনি আপনার দক্ষতা-অভিজ্ঞতাকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারবেন। যদি আপনার এমন কোনো দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকে যা আপনি পৃথিবীকে প্রদর্শন করতে চান এবং এই দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে ব্যবহার করে আপনার নাম করতে চান তাহলে আপনি খুবই সহজেই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে সেটা করতে পারবেন।

বর্তমান সময়ে অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তিরা আছেন যারা তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা দেখানোর জন্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মটির ব্যবহার করছেন।

তারপরে আপনার তৈরি ভিডিওগুলো সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করে এবং আপনার প্রতিভা দেখে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রায় ইউজাররা আপনার প্রতিভাকে চিনতে শুরু করবে, তারপরে আপনি সোশ্যাল মিডিয়াকে একটি পাওয়ারফুল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।

⏩ ওয়েবসাইট ট্রাফিক বৃদ্ধি করতে পারবেন। সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলো ব্যবহার করে আপনি আপনার ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বৃদ্ধি করতে পারবেন। এটি ব্যবহার করে প্রোডাক্টে সেল জেনারেট এবং লিডের মতো অনলাইন কনভার্সন বৃদ্ধি করতে পারে।

⏩ লাইক কমেন্ট করা প্রতি সতর্ক থাকুন। পোস্টে/ভিডিওটিতে লাইক করুন, কমেন্ট করুন এবং শেয়ার করুন এসকল কথা বর্তমানে অনলাইনে খুবই বেশি শোনা যায়।

তবে হ্যাঁ কথা হচ্ছে আপনি কি অমুক ভাই, তমুক ভাই সকলকেই লাইক, কমেন্ট করবেন? তো আমি একটা উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দেই, মনে করুন আপনি একটা নাটক/সিনেমা দেখবএন যদিওবা সেটা দেখা হারাম।

কিন্তু পূর্বের থাকা অভ্যাসের কারণে এখনো তা সম্পূর্ণভাবে ছেড়ে দিতে পারেননি তাই অনেকদিন পরে একটা নাটক/সিনেমা দেখবেন। তো এখন নাটক/সিনেমাটি দেখে আপনার কাছে অনেক ভালো লাগছে! তারপর আপনার কি করা উচিত বলুন তো?

নাটক/সিনেমাটি আপনার কাছে ভালো লাগছে তাই সেই নাটক/সিনেমাটিকে লাইক ও কমেন্ট করবেএন? বন্ধু-বান্ধবদেরকে জানিয়ে দিবেন Watching অমুক নাটক/সিনেমা?

তাহলে আপনি যে নাটক/সিনেমাটি একবার দেখছেন তার সঙ্গে সঙ্গে আপনার ভিডিওটি শেয়ার করার কারণে আরো যারা যারা ভিডিওটি দেখবে সকলের দেখার পাপের অংশ আপনিও পাবেন। কোনা দরকার আছে কি বিনামূল্যে পাপ বৃদ্ধি করার? প্রশ্ন থেকে গেলাে!

একা একা পাপ করলে একার পাপ দশজনের মধ্যে পাপের সেই পথ দেখিয়ে দিলে দশজনের পাপই আপনার সঙ্গে আসবে কারণ আপনিই তাদেরকে পাপের খোজ দিয়েছেন।

আবার মনে করুন, আপনার দেয়া ঐ নাটক/সিনেমাতে লাইক কমেন্ট করার কারণে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক, ইউটিউবের অ্যালগোরিদম বুঝে যাবে এটা বেশি ইউজারের কাছে ভালো লাগছে তাই আরও বেশি মানুষের কাছে ভিডিওটি পৌছ দিবে!

অথচ আপনি যদি ইউটিউবে লাইক দেয়ার পরিবর্তে ডিসলাইক দিয়ে দেন তাহলে ইউটিউব বুঝতে পারতো আপনার কাছে তথা একজন ইউজারের কাছে উক্ত নাটক/সিনেমাটি ভালো লাগেনি তাই ঐ নাটক/সিনেমাটির রিচ কমিয়ে দিবে। যার কারণে নাটক/সিনেমাটি অল্প মানুষের কাছে পৌছতে পারতো।

আপনি নাটক, সিনেমা, গান এসকল থেকে যতবেশি দূরে থাকবেন ততটাই আপনার জন্য ভালো হবে। কিন্তু কোনো কারণে যদি নাটক,সিনেমা, গান শুনতেই হয় তাহলে অবশ্যই অবশ্যই লাইক না দিয়ে ডিসলাইক দিবেন, ভিডিওতে কমেন্ট করা বাদ দিন, ভুল করেও টাইম লাইনে নাটক, সিনেমা, গান শেয়ার করবেন না।

একান্তই যদি দেখার প্রয়োজন হয় তাহলে ভালো হয় সেইটা ডাউনলোড করে দেখে নিন! কারণ ১০ মিনিটের একটি ভিডিও আপনি যদি ১ মিনিট দেখেই স্কিপ করেন তবে ইউটিউব, ফেসবুকের অ্যালগোরিদম বুঝতে পারবে সেই ভিডিও ইউজারদের কাছে ভালো লাগে নি যার কারণে ভিডিওটির রিচ কমিয়ে দিবে।

আর হ্যাঁ ঠিক এই কাজটা উল্টোটা করবেন ইসলামিক ভিডিও, ছবি, লেখা, শিক্ষণীয় কোনো কিছুর ক্ষেত্রে। যারা ইসলামিক পোস্ট (ইসলামিক ভিডিও, লেখা, ছবি, শিক্ষণীয় কিছু) করে তাদের লাইক দিন, কমেন্ট করুন এবং সেগুলো শেয়ার করুন যাতে তাদের পোস্টের রিচ বৃদ্ধি হয়।

প্রয়জনে ভিডিওটি একবারের জায়গায় বার বার করে দেখুন। আর যদি ভিডিওটি না দেখতে চান তাহলে ভিডিও প্লে করে রাখুন এতে করে ভিউ বৃদ্ধি পাবে। একটা দেশের ফ্যানরা এসকল করে।

একই ভিডিও কয়েকবার প্লে করে করে ভিউ বৃদ্ধি করে, ট্রেন্ডে নিয়ে আসে। ঠিক আপনিও তেমন করুন ইসলামিক পোস্ট, ভিডিও, শিক্ষণীয় কোনো কিছুতে।

⏩সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার মাধ্যমে সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলের খবরের প্রতিনিয়ত আপডেট পাওয়া এবং লাইক, কমেন্ট ও অপছন্দ করে মতামত প্রদান করা যায়।

⏩ সোশ্যাল মিডিয়াও সচেতনতা তৈরি করে এবং মানুষের জীবনযাপনের উপায় উদ্ভাবন করে। সোশ্যাল মিডিয়া যা মানুষকে নতুন এবং উদ্ভাবনী জিনিসগুলি আবিষ্কার করতে সাহায্য করেছে যা ব্যক্তিগত জীবনকে উন্নত করতে পারে।

কৃষক থেকে শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী থেকে আইনজীবী সমাজের প্রত্যেকটি ব্যাক্তি সোশ্যাল মিডিয়া এবং এর সচেতনতা ফ্যাক্টর থেকে উপকৃত হতে পারেন।

কিন্তু যেকোনো বস্তু বা বিষয় লাভের পাশাপাশি ক্ষতিও বয়ে আনে নানাভাবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অসুবিধাও অনেক। সোশ্যাল মিডিয়ার এতো এতো ভালোর মধ্যেও সোশ্যাল মিডিয়ার অপকারিতা দিকগুলোকে উপেক্ষা করা যায় না।

বরং এই বিষয়ে আমাদের সবাইকে সচেতন থাকা উচিত প্রয়োজন এবং অন্যকে সচেতন করা উচিত। প্রিয় পাঠক এবার চলুন বিস্তারিত জেনে নেই সোশ্যাল মিডিয়ার অপকারিতা গুলো কি কি সে সম্পর্কেঃ

সোশ্যাল মিডিয়ার অপকারিতা

অনেকেই বলেন যে, মানসিক চাপ কমানো জন্য তারা সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে থাকেন। ২০১৫ সালে পিউ রিসার্চ সেন্টারের বিশেষজ্ঞরা জানান যে, বস্তুতপক্ষে সোশ্যাল মিডিয়া ইউজারারা মানসিক অবসাদ থেকে দূরে থাকতে তো সমর্থ হনই না বরং তাদের আরও বেশি মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়।

অন্যদের মানসিক সমস্যা যখন কেউ সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্য দেখেন তখন সেটা নিজের মাঝে ভর করে বসার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়। অন্য আরেকটি রিসার্চে জানা যায় যে, পুরুষের তুলনায় নারীর মধ্যে এই সংক্রমণ বেশি পরিমাণে প্রভাবিত করে। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের কারণে মানুষের মাঝে হতাশা আরও বৃদ্ধি পায় এমন অনেক প্রমাণ মিলেছে একাধিক গবেষণাতে।

সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার যে, শুধুমাত্র মানসিক বিকারগ্রস্ততা সৃষ্টি করছে তা নয়, শারীরিক অসুস্থতা তৈরি করতেও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ব্যাপক একটা প্রভাব আছে।

বর্তমান সময়ে অতিরিক্ত পরিমাণে সোশ্যাল মিডিয়া ইউজারদের মাঝে ইনসোমনিয়া অর্থাৎ নিদ্রাহীনতা রোগের বৃদ্ধি একটি ভয়াবহ বার্তাই দিচ্ছে বলে জানা যায়। স্মার্টফোন ও ল্যাপটপ/কম্পিউটারের স্ক্রিনের বেগুনি রশ্মি চোখের ব্যাপক ভাবে ক্ষতিসাধন করে সেটা সর্বজন স্বীকৃত।

আরেকটি গবেষণায় জানা যায় যে, যারা যতবেশি পরিমাণে সোশ্যাল মিডিয়াতে অ্যাক্টিভ তারা বাস্তব জীবনে তারা ততবেশি নিষ্ক্রিয়। সোশ্যাল মিডিয়াকে বেশি বেশি গুরুত্ব দিয়ে আমরা সামাজিক আচার-আচরণ ও অনুষ্ঠানকে অগ্রাহ্য করছি। প্রিয় পাঠক চলুন এবার বিস্তারিত জেনে নেই সোশ্যাল মিডিয়ার অপকারিতা গুলো কি কিঃ

সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেক ধরণের ভুল তথ্য দেয়া থাকে যা লোকেরা খুবই সহজেই বিশ্বাস করে নেন। যার ফলে পরবর্তীতে দেশের মাঝে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।

আরো পড়ুনঃ কম্পিউটার এর সুবিধা ও অসুবিধা

সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার মাধ্যমে মানুষ বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা, ভুল ধারণা, মিথ্যা খবর, গুজব, উস্কানিমূলক পোস্ট এবং ছবি, সামাজিক এবং রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, বিদেশী এজেন্ডা, অর্থ প্রতারণা, নকল প্রোডাক্ট বিক্রি, মিথ্যা ব্যবসা, অবৈধ কার্যকলাপ ইত্যাদি ব্যবহার করে। যার ফলে সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্য মানুষের দ্বারা সমাজ ও দেশের ক্ষতি সাধন হচ্ছে। 

সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে টিনেজারসরা অর্থাৎ যাদের বয়সসীমা ১৩ থেকে ১৯ বয়সের মাঝে।

তারা জেনে কিংবা না জেনে সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে এমনভাবে যুক্ত হয়ে পড়ছে যে তারা কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের জীবন সংকটের মুখোমুখি হতে হয়ে পড়ছে।

সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তির কারণে তারা ঘন্টার পরে ঘন্টা সময় অতিবাহিত করছে স্মার্টফোনে, ল্যাপটপ অথবা কম্পিউটারে। যার ক্ষতিকর প্রভাব তাদের সামাজিক, মানসিক, শারীরিক বিকাশে প্রতিফলিত হচ্ছে।

ছাত্র-ছাত্রীদের ইন্টারনেট ব্রাউজার ব্যবহার এবং ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, স্ন্যাপ চ্যাট ইত্যাদিতে দিন-রাত সময় কাটানোর কারণে তাদের পড়াশোনা ও মনের একাগ্রতা নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়।

অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার কারণে পড়াশোনার প্রতি তীব্র অনীহার সৃষ্টি, সমবয়সী বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে সামাজিক মেলামেশা, মনঃসংযোগের ঘাটতি এসকল কিছুই ভীষণভাবে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।

সেই সঙ্গে সন্তানদের এমন পরিস্থিতিতে পিতা-মাতাদের দুশ্চিন্তা এবং ভয় দানা বাঁধছে। যার কারণে পারিবারিক জীবনেও সৃষ্টি হচ্ছে চরম আকারে বিশৃঙ্খলা।

সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রী এবং যুবকদের প্রলুব্ধ করার জন্যে বর্তমানে ছবি, বার্তা এবং ভিডিও ফিল্মের মাধ্যমে নোংরা উপাদান উপস্থাপন করা হচ্ছে। যার কারণে ছাত্র-ছাত্রী ও যুবকদের তাদের লক্ষ্য নিয়ে বিভ্রান্ত করে তাদের ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করছে।

সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার মাধ্যমে কোম্পানি এবং লোকজন অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টার মাঝে হাজার হাজার টাকা ইনকাম করার প্রলোভন দেখিয়ে মেম্বারশিপ এবং অর্থ দাবি করে এবং অন্যান্য মানুষকে বোকা বানিয়ে ডাকাতি করে।

সোশ্যাল মিডিয়া ড্রাগস এবং অ্যালকোহলকে গ্ল্যামারাইজ করে। সোশ্যাল মিডিয়ার একটি অসুবিধা হচ্ছে যে লোকেরা অন্যদের অনুসরণ করতে শুরু করে যারা ধনী এবং মাদকাসক্ত এবং ওয়েবে তাদের মতামত এবং ভিডিও শেয়ার করে। যা শেষ পর্যন্ত অন্যদেরকে অনুপ্রাণিত করে মাদক ও অ্যালকোহলে আসক্ত হতে।

নিরাপত্তা সমস্যা - বর্তমান সময়ে নিরাপত্তা সংস্থাগুলি মানুষের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে অ্যাক্সেস করতে পারে। যা গোপনীয়তা প্রায় আপস করে তোলে। আপনি কখনই জানেন না যে আপনি কখনই কোনো তদন্ত কর্মকর্তার দ্বারা পরিদর্শন করবেন এমন কোনো বিষয় সম্পর্কে যা আপনি ভুলবশত বা অজান্তে ইন্টারনেটে আলোচনা করেছেন।

গভীর রাত পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলোতে অনলাইনে থাকা এবং রাতে দেরি করে ঘুমানো এবং দিনের বেলাতে দেরি করে জেগে থাকা। ফলে দেরিতে অফিসে যাওয়া, সকালের নাস্তা না করা, কাজের প্রতি আগ্রহ না থাকা, সারাদিন ক্লান্তি, অলসতা এবং তন্দ্রাভাব ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়।

সাইবার বুলিং - PewCenter.org দ্বারা প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, বেশিরভাগ শিশুই অতীতে সাইবার বুলিং-এর শিকার হয়েছে। যেহেতু যেকেউ একটি জাল অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে পারে এবং ট্রেস না করে কিছু করতে পারে, তাই যে কেউ ইন্টারনেটে ধমক দেওয়া বেশ সহজ হয়ে উঠেছে।

সমাজে অস্বস্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য হুমকি, ভয়-ভীতিকর মেসেজ ও গুজব জনসাধারণের কাছে পাঠানো যেতে পারে। এই গবেষণাতে দেখায় যে প্রায় ২০ জনের মধ্যে ১ জন শিক্ষার্থী সাইবার বুলিং ক্ষেত্রে আত্মহত্যা করে।

স্বাস্থ্য সমস্যা - সামাজিক মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যেহেতু ব্যায়াম ওজন কমানোর মূল চাবিকাঠি, তাই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের অত্যধিক ব্যবহারের কারণে বেশিরভাগ লোকই অলস হয়ে যায়। যা রুটিন লাইফে নিয়ে আসে বিশৃঙ্খলা। সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারে আপনার স্বাস্থ্য কতটা খারাপ হতে পারে তা আপনি একবার নিজেই কল্পনা করুন।

ছাত্র-ছাত্রী ছাড়াও সমাজের সর্বস্তরের মানুষ কমবেশি স্যোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সংক্রামিত হচ্ছে। অবসর সময় গুলোতে বই পড়া, গান শোনা, নাটক, সিনেমা দেখা থেকে বিরত থেকে সবাই হুমড়ি খেয়ে ঢুকে পড়ছেন স্যোশাল মিডিয়ার অন্ধগলীতে।

নিজের অজান্তে ধীরে ধীরে আসক্ত হয়ে পড়ছেন সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি। ভোগবাদী সমাজ ব্যাবস্থার প্রধান কারীগর মানুষকে ভোগ লালসার বস্তু বানাতে বিশেষ সহযোগীতা করছে এই সোশ্যাল মিডিয়া।

চোখ ধাধানো প্রোডাক্ট সামগ্রীর হাতছানি, উগ্র ও নীতি নৈতিকতাহীন স্বেচ্ছাচারী জীবন-যাপনের প্রতিনিয়ত প্রেরণা জোগাচ্ছে আমাদের এই সাধের সোশ্যাল মিডিয়া।

অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার কারণে সময়ের সাথে সাথে সামাজিক সম্পর্কগুলো ক্রমশ প্রাণহীন, নীরস, অসাড় হয়ে যাচ্ছে অথচ অনলাইন দুনিয়ায় মিথ্যে সম্পর্কের জাল মাকড়সার জালকেও হার মানাবে। মানুষ সাময়িক নিজের একাকীত্ব, অসহায়ত্বকে ভুলে থাকার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় অংশ নিচ্ছে। কিন্তু নিজের অজান্তেই চোরাবালির মতো ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়ছে।

সোশ্যাল মিডিয়া মৃ- ত্যু ঘটায়। শুধুমাত্র এটি ব্যবহার করে নয়, ইন্টারনেটে শেয়ার করা বিভিন্ন স্টান্ট এবং অন্যান্য পাগলাটে জিনিসগুলি অনুসরণ করে। উদাহরণস্বরূপ বাইকাররা অপ্রয়োজনীয় স্টান্ট করছে, লোকেরা ট্রেনের উপর দিয়ে লাফ দিচ্ছে এবং অন্যান্য প্রাণঘাতী জিনিস।

উদাহরণ স্বরূপ দেখছিলাম ভারতের একটি ভিডিওতে মুম্বাইয়ের ১৪ বছর বয়সী একটি চলমান ট্রেনে স্টান্ট করছিলেন যা তার মৃ- ত্যুর কারণ হয়েছিল। এই ধরনের স্টান্টগুলি কিশোর-কিশোরীদের দ্বারা সঞ্চালিত হয় কারণ সফল স্টান্টগুলি তৈরি এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করা হয়। এগুলো দেখে পরবর্তীতে নতুনরা সফল ভাবে করতে পারেনা যার তার মৃ- ত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

আরো পড়ুনঃ মোবাইল ফোনের উপকারিতা ও অপকারিতা

হ্যাকিং - সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যক্তিগত ডেটা এবং গোপনীয়তা সহজেই হ্যাক করা যায় এবং ইন্টারনেটে শেয়ার করা যায়। যা আর্থিক ক্ষতি এবং ব্যক্তিগত জীবনের ক্ষতি করতে পারে।

একইভাবে, পরিচয় চুরি অন্য একটি সমস্যা যা তাদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে আর্থিক ক্ষতি করতে পারে। অতীতে বেশ কয়েকটি ব্যক্তিগত টুইটার এবং ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা হয়েছে এবং হ্যাকার এমন সামগ্রী পোস্ট করেছিল যা ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত জীবনকে প্রভাবিত করেছে।

এটি সোশ্যাল মিডিয়ার একটি বিপজ্জনক অসুবিধা এবং প্রতিটি ব্যবহারকারীকে এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে তাদের ব্যক্তিগত ডেটা এবং অ্যাকাউন্টগুলিকে নিরাপদ রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

উপসংহার

পরিশেষে বলতে হয় যে, সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার অনেক ক্ষতির কারণ হতে পারে, কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে অনেক ভালো কিছুও অর্জন করা যেতে পারে।

আসক্তি পরিহার করে একে কার্যকর যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে পারলেই একে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের হাতিয়ার বলা যেতে পারে নয়তোবা একে অসামাজিকতা তৈরির হাতিয়ার হিসেবেই বিবেচনা করাই শ্রেয়।

তাই পাঠকের প্রতি আমার আবেদন সোশ্যাল মিডিয়ার সঠিক ব্যবহার করুন অন্যকে সঠিক ব্যবহারে বাধ্য করুন। আসুন, সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্যে মানুষের সেবা ও কল্যাণের অঙ্গীকার একটি নোতুন পৃথিবী গড়ে তোলার সপ্ন দেখি।

তাই সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারও বুদ্ধিমানের সাথে করা উচিত। আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভালো-মন্দ সব ধরনের মানুষই সেবা ব্যবহার করছে। তাই আমাদের বুদ্ধিমত্তা ও যুক্তি দিয়ে ভালো-মন্দ বুঝে নেওয়া উচিত, অন্যের মোহ, লোভ ও প্রতারণার মধ্যে না আসা উচিত। আমাদের উচিত এমন প্রতিটি কাজ ও ব্যক্তি থেকে দূরে থাকা যা অবৈধ।

পোষ্ট ক্যাটাগরি: