মোবাইল রেডিয়েশন থেকে বাঁচার উপায়

মোবাইল রেডিয়েশন থেকে বাঁচার উপায় | মোবাইলের রেডিয়েশন কতটা ক্ষতিকর — বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে মোবাইলের বিপজ্জনক বিকিরণ মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে তা জানা সত্ত্বেও মানুষের মধ্যে মোবাইলের প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে। আজকাল সবার হাতে মোবাইল ফোন থাকা খুবই সাধারণ, কিন্তু আপনি কি জানেন যে মোবাইল ফোন দিয়ে আপনি দেশ ও বিশ্বের মানুষের সাথে কথা বলছেন। 

মোবাইল রেডিয়েশন থেকে বাঁচার উপায়

এটি আপনার জন্য মারাত্মকও প্রমাণিত হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোবাইলের অত্যধিক ব্যবহার বিকিরণের ঝুঁকি বাড়ায়, যা মানুষের অনেক গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আসুন আমরা আপনাকে বলি যে আজকাল প্রতিটি অন্য ব্যক্তি শহর থেকে গ্রামে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে এবং তাদের মোবাইল থেকে দূরত্ব বজায় রাখা এখন আর সহজ কাজ নয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে মোবাইলের বিপজ্জনক বিকিরণ মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে তা জানা সত্ত্বেও মানুষের মধ্যে মোবাইলের প্রতি ক্রেজ বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি কিছু বিষয় মাথায় রাখা হয়, তাহলে মোবাইল রেডিয়েশন এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়ানো যায়। আমরা আপনাকে এই আর্টিকেলে মোবাইল রেডিয়েশন থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে বলব। তার আগে চলুন জেনে নেই মোবাইলের রেডিয়েশন কী এবং কীভাবে কাজ করে।

রেডিয়েশন কি এবং রেডিয়েশন কিভাবে কাজ করে | মোবাইল রেডিয়েশন কি

আমরা পূর্বেই বলেছি রেডিয়েশন হচ্ছে তেজসক্রিয়তা যা অপর্যাপ্ত পরিমাণে মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। মোবাইল রেডিয়েশনের কারণে বিভিন্ন রোগে মানুষ ভুগে থাকে। চিকিৎসা শাস্ত্র থেকে দেখা গেছে যে এই মোবাইল রেডিয়েশনের কারণে মানবদেহে স্বাবিক কোষ বিভাজনগুলো খুবই খারাপ ভাবে প্রভাবিত হয়। আর উত্তেজিত হয়ে অপ্রয়োজনীয় কোষ তৈরি করে ফেলে। আর এই কোষগুলোই হচ্ছে ক্যান্সার কোষ। আর ক্যান্সার কতটা ভয়াবহ রোগ তা আমরা সকলেই নিশ্চয় জানি।

আচ্ছা কখনও কি ভেবে দেখেছেন যে, আপনি যে মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করছেন সেটি কোনো প্রকার তার বিহীন কিভাবে নেটওয়ার্কের লেনদেনের মাধ্যমে আপনার বার্তা অন্যের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। এটা সম্ভব হচ্ছে অপেন রেডিও তরঙ্গের কারণে। আর এই রেডিও তরঙ্গই রেডিয়েশন বিস্তার করে। আপনি যখন মোবাইল ফোনটি হাতে নিয়ে সেটা কানের সাথে লাগিয়ে কথা বলছেন তখন ফোনটিতে রেডিও তরঙ্গর লেনদেন হচ্ছে। আর এভাবেই মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে আপনি প্রতিনিয়ত রেডিয়েশনের সংস্পর্শে থাকছেন। আর নিজের অজান্তেই ক্যান্সার রোগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করছেন।

কিভাবে মোবাইলের রেডিয়েশন পরিমাপ করবেন

SAR value যার পূর্ণরুপ হচ্ছে Specific Abstention Rate। এটি হচ্ছে মানব শরীরে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ধারন ক্ষমতা। গবেষকরা জানান যে মানুষের শরীরে প্রতি গ্রাম অংশে এই রেডিয়েশন ধারণের ক্ষমতা হচ্ছে 2.0 w/kg। ইউএস এবং ভারতে এই মাত্রা হয়েছে 1.6 w/kg আর ইউরোপে হয়েছে 2.0 w/kg। আর আপনার মোবাইল ফোনের SAR value কত তা জানার জন্যে *#07# এই নম্বরটি আপানার মোবাইল ফোন থেকে ডায়াল করে জেনে নিন। ডায়াল করার সঙ্গে সঙ্গে আপনি আপনার মোবাইল ফোনের SAR value পেয়ে যাবেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আন্তজার্তিক ক্যান্সার রিসার্স সংস্থা সমূহের তেজস্ক্রিয় বিকিরণ বা রেডিয়েশন বিষয়ক গবেষণায় যে বিষয়গুলো উঠে আসছে এর প্রভাব নিয়ে সেটি হচ্ছে।

অতিরিক্ত মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে যে সমস্যাগুলো দেখা যায় সেগুলো হচ্ছেঃ বন্ধ্যাত্ব, ক্যান্সার, মাথা ব্যাথা, গর্ভপাত, ব্রেন টিউমার, মোবাইল হারানোর ভিতি, অনিদ্রা অথবা নোমোফোবিয়া, ধৈর্য কমে যাওয়া, খিটখিটে মেজাজ ইত্যাদি নানা ধরনের সমস্যা।

মোবাইল রেডিয়েশন থেকে বাঁচার উপায়

বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে যখনই আপনি মোবাইলে কথা বলছেন, তখন সরাসরি কানে কথা না বলার চেষ্টা করুন এবং পরিবর্তে ফোনের স্পিকার বা ইয়ার ফোনের মাধ্যমে কথা বলুন। শুধু তাই নয়, কল বন্ধ হওয়ার পর অবিলম্বে কান থেকে ইয়ারফোন খুলে ফেলতে হবে। এর বাইরে, শরীরের যেকোনো অংশে মোবাইল ফোন রাখাও খুব বিপজ্জনক হতে পারে, এমন পরিস্থিতিতে মোবাইলকে যতটা সম্ভব দূরত্ব রাখার চেষ্টা করুন।

আরও একটি বিষয় আজকাল অনেকেই মনে করেন যে মোবাইল ফোনটি যদি বন্ধ থাকে, তাহলে মোবাইল থেকে কোন বিকিরণ আসছে না, যেখানে তা নয়। পুরোপুরি বন্ধ থাকলেও আপনি সেই সময়ে বিকিরণের সংস্পর্শে আসতে পারেন। বিপজ্জনক মোবাইল রেডিয়েশন এড়ানোর জন্য, বালিশের নিচে মোবাইল রেখে ঘুমানো এড়ানো উচিত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে যখন এটি খুব প্রয়োজনীয় তখন কল করুন এবং চেষ্টা করুন যে যদি বার্তার মাধ্যমে কথোপকথন হয় তবে এটি আরও ভাল। মোবাইল বিকিরণ স্বাস্থ্যের ঝুঁকির কারণ হতে পারে, এটি এড়ানোর উপায় জেনে নিন।

মোবাইল টাওয়ার রেডিয়েশন

যখনই আমরা মোবাইল টাওয়ারের কাছাকাছি যাই, তখন আমাদের মনে একটা ভয়ের অনুভূতি থাকে। মোবাইল টাওয়ার থেকে কত দূরত্বে, কিভাবে নিজেকে এর যোগাযোগ থেকে দূরে রাখবেন, সব প্রশ্নই মাথায় আসে। কিন্তু, এটি এড়ানোর কোন সমাধান নেই। এমন পরিস্থিতিতে, মোবাইল টাওয়ার নিয়ে অনেক গুজব আসতে থাকে, তারপর এটি মানুষের মনে অনেক ভয় তৈরি করে। এমন পরিস্থিতিতে, আসুন আমরা আপনাকে বলি কিভাবে আপনি এই বিকিরণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন। এটা বিশ্বাস করা হয় যে মোবাইল টাওয়ার থেকে নির্গত বিকিরণ আমাদের শরীর ও মনের উপর দারুণ প্রভাব ফেলে।

মোবাইল থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন

মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহার আপনাকে মানসিক চাপ, চোখে জ্বালা, বিষণ্নতা এবং নিদ্রাহীনতার মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু মোবাইল রেডিয়েশন বিপদ আরও বেশি। এজন্য যতদূর সম্ভব আপনার ফোন হ্যান্ডসফ্রি মোডে ব্যবহার করুন। অন্যথায় ইয়ারপিস বা ব্লুটুথের ব্যবহারও নিরাপদ। সবসময় মনে রাখবেন যে ঘুমানোর সময় মোবাইলটি মাথার দিকে রাখবেন না, যদি মোবাইলের সিগন্যাল কমে আসছে বা ব্যাটারি কম থাকে, তাহলে মোবাইলটি গর্ভবতী মহিলা ও শিশুদের থেকে দূরে রাখুন। পাশাপাশি শার্টের পকেটে মোবাইল রাখা এড়িয়ে চলুন।

মোবাইল রেডিয়েশন থেকে বাঁচার উপায়

মোবাইল রেডিয়েশন থেকে বাঁচার উপায় এই লেখাটিতে আমারা আপনাদের সাথে শেয়ার করব আপনারা কিভাবে নিজেদেরকে মোবাইলের তীব্র রেডিয়েশণ থেকে নিজেদেরকে বাঁচাবেন। বর্তমানে আমাদের মধ্যে এমন কোনো মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবেনা বললেই চলে যে মোবাইল ফোন চালায় না। আর তাছাড়া এখনতো ১১ বছরের একটা ছেলেও নিজের হাতে মোবাইল নিয়ে ঘুরে।

তবে আমাদের মাঝে অনেকেই জেনে রাখবো আবার হয়তোবা অনেকেই জানি না যে, মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে আমরা প্রতিনিয়ত মারাত্বক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। সুবিধাতো অনেক তবে এই মোবাইল ফোনটি দিনে দিনে আপনাকে করে তুলছে অসুস্থ। রেডিয়েশন একটি ইংরেজি শব্দ যার বাংলা হলো তেজসক্রিয়তা। আর এ তেজসক্রিয়তা দিয়ে ভিবিন্ন রোগে চিকিৎসা করা হয় তবে সেগুলো নিদিষ্ট। আর পরিমান বেশী হলে এই তেজক্রিয়তা আমাদের জটিল ক্ষতি করে বসতে পারে।

মোবাইল রেডিয়েশন থেকে বাঁচার উপায়

মোবাইল ফোন বর্তমানে এমন একটি মাধ্যম হয়ে দাড়িয়েছে যে, এই ডিভাইস ছাড়া বর্তমানে একটি কাজও করা সম্ভব হয়না। আর সেজন্য মোবাইল যতই ক্ষতিকর হোক কেন আমাদের মোবাইল ব্যবহার করতেই হবে। তার মানে রেডিয়েশনও আমাদের সাথেই থাকছে। তবে যেহেতু একোবারে ছাড়া সম্ভব না সেহেতু কিছু নিয়ম মেনে কাজ করলে অনেক আংশে এটা থেকে নিজেকে বাচিয়ে রাখা সম্ভব। আর এজন্য বিশেষজ্ঞরা মোবাইল রেডিয়েশন থেকে বাচার উপায় সম্বন্ধে ৬টি পদ্বতি অবলম্বন করতে বলে থাকেঃ

শরীর থেকে মোবাইল দূরে রাখা

সারাক্ষণ চেষ্টা করবেন আপনার হাতে থাকা মোবাইল ফোনটিকে নিজের থেকে একটু দূরে রেখে ব্যবহার করার। ভয়েস কলে কথা কম বলে মেসেজে কিংবা ভয়েস এসএমএস ব্যবহার করার মাধ্যমে কথা বলার চেষ্টা করবেন। আর যদিও ভয়েস কলে কথা বলেন তবে ইয়ারফোন ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। আর রাতে ঘুমাবার সময় মোবাইল ফোনটি মাথার পাছে না রেখে পায়ের কাছে রেখে দিবেন অথবা সুইচ অফ করে রেখে দিন। আর অবশ্যই মনে রাখবেন স্মার্টফোনটিকে কখনই নিজের প্যান্টের পকেটে রাখবেন না। মোবাইল হাতে রাখুন নয়তোবা সারাক্ষণ সাথে একটি ব্যাগ রাখুন আর তাতেই আপনার মোবাইল ফোনটিকে রেখে দিন।

সীমিত আকারে মোবাইল ব্যবহার

আপনার মোবাইল ফোনটি আপনি খুবই কম ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। যখন খুবই বেশি প্রয়োজন ব্যবহার করার তখন ফোন কল আর যে কাজগুলো সাধারন ভাবে ভয়েস মেসেজ বা এসএমএস করার মাধ্যমে চালানো যায় সেগুলো ভয়েস এসএমএস কিংবা মেসেজের মাধ্যমে চালিয়ে দিন।

আবদ্ব ঘরে কিংবা ধাতব ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যবহার করবেন না

আবদ্ব ঘরে বা ধাতব ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন ব্যাহার করবেন না। কেননা এই রকম অবস্থায় মোবাইল ফোনের রেডিয়েশন সর্বাধিক হয় আর প্রতিফলনও ঘটে।

লো-ব্যাটারিতে অথবা লো-নেটওয়ার্কে মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন না

লো-ব্যাটারিতে কখনই আপনার হাতে থাকা মোবাইল ফোন ব্যাবহার করবেন না। কেননা সেই সময় মোবাইল ফোন অধিক পরিমাণে রেডিয়েশন করে। বিশেষ করে আপনার ফোনের চার্জ যখন 15% তখন আপনার মোবাইল ফোনটি চার্জে দিয়ে রাখুন নয়তোবা বন্ধ করে দিন। কেননা আপনি আপনার মোবাইল ফোনের চার্জ যখন 15% কিংবা তার কম থাকে তখন আপনার ডায়াল প্যাড থেকে *#07# ডায়েল করে SAR value দেখলেই বুঝতে পারবেন।

শিশু কিংবা গর্ভবতী নারী এবং রোগীদের থেকে মোবাইল দূরে রাখা

গর্ভবতী মহিলাদের জন্যে মোবাইল ফোনের রেডিয়েশন খুবই ভয়ঙ্কর রুপ নিতে পারে। কেননা গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই মোবাইল রেডিয়েশনের তীব্রতার কারণে গর্ভবতী নারীদের গর্ভপাত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর তাছাড়া এরকম রেডিয়েশনের ‍কারণে রোগীদের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। আর শিশুদের মোবাইল ব্যবহর একটি আসক্তিতে রুপান্তরিত হয়ে উঠতে পারে। আর তাই তাদের হাতে মোবাইল ফোনটিকে না দিয়ে কোনো প্রয়োজন পড়লে তা নিজেই করে দিন।

Anti-Radiation chip এর ব্যবহার

বর্তমান সময়ে একটি যন্ত্র পাওয়া যায় যার নাম হচ্ছে Anti-radiation chip। এটি হচ্ছে এমন একটি চিপ যার মাধ্যমে আপনি আপনার মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত রেডিয়েশন থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন। তবে এটি এখনও বিজ্ঞানসম্মত কোনো সার্টিফিকেট কিংবা সম্মোধন পায়নি। আর তাই এটি কতটা সুরক্ষিত সে সম্বন্ধে আমি তেমন কিছুই বলতে পারবো না। তাই এটির ব্যবহার আর ব্যবহার না করার সম্পূর্ণটাই আপনার উপরে নির্ভর করবে।

পোষ্ট ক্যাটাগরি:

এখানে আপনার মতামত দিন

0মন্তব্যসমূহ

আপনার মন্তব্য লিখুন (0)