অনলাইনের মাধ্যমে জমির পর্চা বের করার নিয়ম

যেকোনো জমির খতিয়ান এখন অনলাইনের মাধ্যমে খুবই সহজে পাওয়া যাবে তাৎক্ষণিকভাবে। অনলাইনের মাধ্যমে জমির মালিকানা যাচাই অথবা অনলাইনের মাধ্যমে জমির কাগজ বের করার উপায় সম্বন্ধে আজকের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণভাবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো কিভাবে আপনি ঘরে বসে ল্যাপটপ/কম্পিউটার কিংবা আপনার হাতে থাকা একটি স্মার্টফোনের সাহায্য অনলাইন থেকে খুবই সহজে জমির মালিকানা যাচাই, জমির খতিয়ান যাচাই কিংবা জমির পর্চা বের করতে পারবেন?

বর্তমানে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট যুগে নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা টেকনোলজি সম্বন্ধে যথেষ্ট জ্ঞান রাখলেও তারা জমাজমির ব্যাপারে সাধারণ অ, আ, ক, খ জ্ঞান টুকোও রাখেনা। যার কারণে পরবর্তীতে দেখা যায় অনেকের মা-বাবা মৃ- ত্যু বরণ করার পর বাপ-দাদার জমা-জমির সঠিক হিসেব খুঁজে পায়না।

কিংবা নতুন জমি কিনতে গিয়ে বিভিন্ন দালালের সাহায্যে নেয়ার সময়ে প্রতারিত হয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকে। অথচ জমা-জমির ব্যাপারে সাধারণ জ্ঞান রাখলে বাপ-দাদার ভিটে-বাড়ির হিসেবসহ আরো অন্যান্য জমির পূর্ণাঙ্গ হিসেব নিজে নিজেই করতে পারতো।

অনলাইনের মাধ্যমে জমির পর্চা বের করার নিয়ম জানতে ভিডিও দেখুন

আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে আপনি কিভাবে ঘরে বসে সহজে অনলাইনের মাধ্যমে জমির মালিকানা যাচাই করার নিয়ম এবং অনলাইনের মাধ্যমে জমির খতিয়ান যাচাই করার নিয়ম ও অনলাইনের মাধ্যমে জমির পর্চা বের করার নিয়ম জানতে পারবেন। সেজন্য জমির অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হবেনা। তবে হ্যাঁ যদি আপনার জমি-জমার কাগজপত্র সম্বন্ধে কিছু বেসিক কিছু ধারণা না থাকে।

তাহলে অনলাইনে থেকে জমির মালিকানা যাচাই এবং জমির খতিয়ান যাচাই করার নিয়ম এবং অনলাইনে জমির পর্চা যাচাই করার নিয়ম জানতে কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। তাই অনলাইনের মাধ্যমে জমির মালিকানা যাচাই করার আগে জমি-জমার বিষয়ে কিছু সাধারণ বিষয় নিয়ে এখানে বলা হলো। তবে যদি আপনি জমি-জমা সম্বন্ধে অভীজ্ঞ সম্পন্ন হোন তাহলে এই সকল বিষয়ে বিস্তারিত না পড়ে ডাইরেক্টআর্টিকেলর নিচে অংশে চলে যান। তো চলুন তাহলে জেনে নেই জমি-জমার বিষয়ে সাধারণ কিছু প্রশ্ন সম্বন্ধে।

মাঠ পর্চা বলতে কি বোঝায়

উত্তরঃ মাঠ পর্যায়ে জমি জরিপ করার সময়ে চূড়ান্ত পর্চা/খতিয়ান প্রস্তুত করার আগে জমির মালিকদের থেকে খসড়া খতিয়ানের যে অনুলিপি জমি মালিকদেরকে দেয়া হয়ে থাকে তাকে মাঠ পর্চা বলা হয়। মাঠ পর্চায় কোনো ধরনের ভূল হয়ে থাকলে নির্ধারিত সময়ের আগে সেটা খুবই সহজে সমাধান করা যায়। বলা হয়ে থাকে মাঠ পর্চা হচ্ছে চূড়ান্ত পর্চার মডেল টেষ্ট।

খতিয়ান কিংবা পর্চা বলতে কি বোঝায়

খতিয়ান যেটা ঠিক পর্চাও একই। অর্থাৎ খতিয়ান কিংবা পর্চা সেইম জিনিস। এলাকা ভেদে অনেকেই এটাকে আরও বিভিন্ন নাম দিয়ে ডেকে থাকে। রাষ্টীয় ভাবে জরিপ করা জমা-জমির মৌজা ভিত্তিক এক অথব্বা একাদিক জমি মালিকের ভূ-সম্পত্তির বিস্তারিত সংবলিত সরকারি দলিলকেই মূলত খতিয়ান বলা হয়ে থাকে। আইনের ভাষায় খতিয়ান হচ্ছেঃ জরিপ কালীন সময়ে জরিপের বিভিন্ন স্টেপ অতিক্রম করে চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশ ফ্রম নং-৫৪৬২ তে জমির মালিকানা/দাগের বিবরণ সহকারে যে নথি চিত্র প্রকাশিত করা হয়ে তাকে বলা হয় খতিয়ান। 

খতিয়ানে মৌজার দাগ অনুযাইয়ী এক অথবা একাধিক জমির মালিকের নাম, বাবার নাম, অ্যাড্রেস, মালিকানা সম্পর্কে বিস্তারিত, ভূমির বিবরণ, মৌজার ক্রমিক নাম্বার (জেএল নাম্বার), মৌজা নাম্বার, দখলকারীর নাম, জমির শ্রেণী, জমির সীমানা, অংশ ইত্যাদি উল্লেখ করা থাকে। আসলে জমির প্রকৃত মালিকের কাছে থেকে খাজনা/ট্যাক্স আদায় করার জন্যে বাংলাদেশ সরকার খতিয়ান নাম্বার প্রস্তুত করে।

খতিয়ান কত প্রকার ও কি কি | পর্চা কত প্রকার

বাংলাদেশে বর্তমানে সাধারণত ৪ ধরনের খতিয়ান বা পর্চা আছে। যেমনঃ

১। CS খতিয়ান (Cadastral Survey)।

২। RS খতিয়ান (Revisional Survey)।

৩। SA খতিয়ান (State Acquisition Survey)। 

৪। BS খতিয়ান/সিটি জরিপ (City Survey)।

উপরে উল্লেখিত যে বি এস খতিয়ান/সিটি জরিপ আরএস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত। সেই হিসেবে ধরতে গেলে খতিয়ান ৩ প্রকার। এবার চলুন জেনে নেই সিএস খতিয়ান, এসএ খতিয়ান, আরএস খতিয়ান, বিএস খতিয়ান/সিটি জরিপ সম্পর্কে বিস্তারিতঃ

১. সিএস খতিয়ান কি | Cadastral-Survey

এই সিএস জরিপ হচ্ছে উপ-মহাদেশের ফার্স্ট জরিপ। এটি ১৮৮৭-১৯৪০ সালের সময় পর্যন্ত এই সিএস জরিপ পরিচালিত হয়। এই সিএস জরিপ ১৮৮৮ সালের কক্সবাজার রামু থেকে শুরু করে এবং ১৯৪০ সালের দিনাজপুর জেলাতে সমাপ্ত হয়। এই সময় সিলেট হচ্ছে আসাম প্রদেশের অর্ন্তভুক্ত আর পার্বত্য চট্রগ্রামের জমিদারী প্রথার সঙ্গে পাহাড়ী এবং বাঙ্গালী বিরোধ থাকায় সিলেট এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল দুটোকে সিএস জরিপের আওতায় নেয়া হয়নি। পরবর্তীতে ১৯৫০ সালের সরকারী অধীগ্রহন এবং প্রজাসত্ব আইনের আওতায় একটি জরিপ কার্যসম্পন্ন করা হয়। ১৯৫০ সালে The State Acquisition and Tenancy Act এর সময়ে পার্বত্য চট্রগাম আইনের আওতায় ছিলোনা তাই চট্টগাম অঞ্চলগুলোতে সিএস জরিপ করা হয়নি।

সিএস খতিয়ান চেনার উপায়

CS খতিয়ান উপরের দিক থেকে নিচের দিক পর্যন্ত লম্বালম্বি ভাবে হয়ে থাকে এবং ২ পেজ সম্বলিত হয়ে থাকে। ১ম পেজে জমিদার ও প্রজার নামে ২ ভাগ করা থাকে। একেবারে উপরের লেখা থাকে বাংলাদেশ ফর্ম নং-৫৪৬৩। পরবর্তী পেজে “উত্তর সীমানা” নামের একটি কলাম থাকে।

২. আরএস খতিয়ান কি | Revisional Survey

CS জরিপ সম্পূর্ণ হওয়ার দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর পরে RS জরিপ পরিচালিত হয়ে থাকে। পূর্বের জরিপের ভূলভ্রান্তি সংশোধন করা সহ জমি, জমির মালিক এবং দখলদার ইত্যাদি হালনাগাদ করার নিমিত্তে এই RS জরিপ সম্পূর্ণ করা হয়। আগের ভূল সংশোধন ক্রমে RS জরিপ এতইটাই শুদ্ধ করে ডিজাইন করা হয়ে থাকে যে, এখন পর্যন্ত জমা-জমি সংক্রান্ত বিরোধ অথবা ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে এই RS খতিয়ানের উপরেই নির্ভর করতে হয়।

আরএস খতিয়ান চেনার উপায়

ফর্মের একদম উপরের হাতের ডান পাশে 'রেসার্তে নং' লেখা উল্লেখ থাকে এবং খতিয়ানটি ১ পেজের হয়ে থাকে। এটাও সিএস খতিয়ানের মতো উপর থেকে নিচের দিকে লম্বালম্বিভাবে হয়ে থাকে।

৩. এসএ খতিয়ান কি | State Acquisition Survey

১৯৫০ সালে জমিদারি অধীগ্রহণ এবং প্রজাতন্ত্র আইন পাশের পরে সরকার জমিদারি অধীগ্রহণ সাব্যস্ত করেন। উক্ত সময়ে সরকারী আমিনগণ সরেজমিনে না গিয়ে অর্থাৎ মাঠে মাঠে না গিয়ে অফিসে বসে থেকে সিএস খতিয়ান ভূল সংশোধন করে নতুন করে এসএ খতিয়ান তৈরী করে। কোনো কোনো অঞ্চলে এই এসএ খতিয়ানকে টেবিল খতিয়ান কিংবা ৬২ পেজের খতিয়ান নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে বা এই নামে পরিচিতি অর্জন করে। 

এসএ খতিয়ান চেনার সহজ উপায়

এসএ খতিয়ান আড়াআড়ি ভাবে থাকে। এইটা সবসময় হাতের লিখা হয়, কখনো প্রিন্ট হয় না।এই খতিয়ানে সাবেক খতিয়ানের এবং হাল খতিয়ান নম্বর থাকে।এই খতিয়ান এক পৃষ্ঠার হয়।

৪. বিএস খতিয়ান কি | City Survey

বাংলাদেশে সবশেষ এই জরিপ ১৯৯৮ সাল থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত পরিচালিত হয়। যে জরিপের কাজ বর্তমান সময় পর্যন্ত চলমান আছে। ঢাকা শহরে এই জরিপ মহানগর জরিপ হিসেবে পরিচিত।

বিএস খতিয়ান চেনার উপায়

এই বি এস খতিয়ানে ৯টি কলাম ও জমির ধরণ অর্থাৎ জমিটি কি ধরনের তা লেখা থাকে। যেমনঃ পুকুরের জমি নাকি চাষের জমি ইত্যাদি। এবার চলুন জেনে নেই খতিয়ান নম্বর কি।

খতিয়ান নম্বর কি

প্রত্যেকটি খতিয়ানকে আলাদা আলাদা ভাবে শনাক্ত করার জন্যে খতিয়ানের জন্যে একটি ইউনিক নম্বর বরাদ্দ করা হয়ে থাকে। যার কারণে খতিয়ান নাম্বার দিয়ে খুবই সহজে খতিয়ান শনাক্ত করা যায়। সাধারণভাবে একটি মৌজার মধ্যে একজন মালিকের যতগুলো দাগের জমি থাকে সকলগুলো একত্রিত করে একটি খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে। মূলত খুবই সহজেই জমির মালিককে শনাক্ত করার জন্যে খতিয়ান নাম্বার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

খতিয়ানে কি কি বিষয় উল্লেখ করা থাকে

খতিয়ানের মাঝে বেশ কয়েকটি বিষয়বস্তু সু-স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। খতিয়ানে কি বিষয় উল্লেখ করতে হবে সেই সম্পর্কে সরকারী অর্জন বিধিমালার ১৮ নাম্বার ধারায় বিবৃত আছে। সেগুলো হচ্ছেঃ

দখলদার বা প্রজার নাম, অ্যাড্রেস এবং বাবার নাম এবং দখলদার বা প্রজা ব্যক্তি কোন শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। দখলদার বা প্রজা কর্তৃক জমি-জমার অবস্থান, শ্রেণী, জমির পরিমাণ এবং সীমানা। প্রজার জমির মালিকের নাম, বাবার নাম ও অ্যাড্রেস। এস্টেটের মালিকের নাম, বাবার নাম এবং অ্যাড্রেস। খতিয়ান প্রস্তুতের সময়ে খাজনার পরিমাণ ও ২৮, ২৯, ৩০ বিধি মোতাবেক নির্ধারিত খাজনা। গোচারণ জমি, বনভূমি এবং মৎস্য খামারের জন্যে ধারণকৃত টাকা। খাজনা যে পদ্ধতিতে ধার্য্য করা হয়েছে সেটার বিবরণ। ২৬ নাম্বার ধারা অনুযায়ী নির্ধারিত এবং ন্যায় সঙ্গত খাজনা।

খাজনা যদি ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে তাহলে যে সময়ে এবং যে যে পদক্ষেপে বৃদ্ধি হয়েছে সেগুলোর বিবরণ। কৃষি কাজের উদ্দেশ্যে প্রজা কর্তৃক পানির ব্যাবহার এবং পানি সরবরাহের জন্যে যন্ত্রপাতি সংস্কার এবং রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কিত প্রজা এবং জমির মালিকের মধ্যে অধিকার এবং কর্তব্যের বিবরণ। প্রজাস্বত্ব সম্পর্কিত বিশেষ শর্ত এবং তার পরিণতি। পথ চলার অধিকার এবং জমির সংলগ্ন অন্যান্য অধিকার। নিজস্ব জমি হলে সেটার বিবরণ। তাছাড়াও খতিয়ানে মৌজা নাম্বার, জমির দাগ নাম্বার, নিজস্ব খতিয়ান নাম্বার, এরিয়া নাম্বার, জেএল নাম্বার এবং বাট্টা নাম্বার, ইত্যাদি উল্লেখিত থাকে।

মৌজা কি

ভূমি জরিপ করার সময়ে ১ একটি এলাকা/উপজেলাকে কতোগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগে বিভক্ত করা হয়ে থাকে। এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত ১ একটি ক্ষুদ্র অংশকে বলা হয়ে থাকে মৌজা। কোনো কোনো সময়ে একটি গ্রাম একটি মৌজায় অন্তর্ভুক্ত, আবার কোনো একটি মৌজাতে একাধিক গ্রাম থাকতে পারে। মৌজা হচ্ছে মূলত ভূমি জরিপের একক অংশ। মৌজাতে কি পরিমাণে ভূমি অন্তর্ভুক্ত থাকবে সেটার কোনো সুনির্দিষ্ট বিধিবদ্ধ নিয়ম না থাকলেও কমপক্ষে একটি মৌজাতে ২০০ একরের ঊর্ধ্বে ভূমি নিয়ে একটি মৌজা গঠিত করা হয়ে থাকে।

জমির দাগ নাম্বার কি

জরিপ ম্যাপ প্রস্তুত অথবা জরিপ ম্যাপ তৈরি করার সময়ে মৌজা নক্সায় জমির সীমানা চিহ্নিত অথবা শনাক্ত করতে প্রত্যেকটি ভূমি খন্ডকে ভিন্ন ভিন্ন নম্বর বসানো হয়ে থাকে তাকে দাগ নাম্বার বলে। এই দাগ নাম্বার গুলোতে বিভিন্ন পরিমাণে জমি থাকতে পারে। এই দাগ নাম্বার অনুজায়ী একটি মৌজার অধীনে জমি মালিকের সীমানার খূটিঁ কিংবা আইল দিয়ে সরেজমিন প্রকাশিত করা হয়ে থাকে।

জেএল নাম্বার কি

প্রত্যেক মৌজাকে একটি স্থানীয় নামে ও একটি ক্রমিক সংখ্যাতে প্রকাশিত করা হয়ে থাকে। ক্রমিক সংখ্যাটিকে জেএল নাম্বার যার পূর্ণরুপ হচ্ছে (জুরিসডিকশন লিস্ট নাম্বার)। কোনো উপজেলার যদি মোট ১০০টি মৌজা হয়ে থাকে তবে সেই মৌজাসমূহের জেএল নাম্বার হবে ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত।

ছুটা দাগ কাকে বলে

ভূমি জরিপ করার সময়ে প্রাথমিক নকশা প্রস্তুত কিংবা সংশোধনের সময়ে নকশার প্রত্যেকটি ভূমি এককে যে নাম্বার দেওয়া হয়ে থাকে সেসময় যদি কোনো নাম্বার ভুলে বাদ পড়ে যায় তাহলে সেটাকে ছুটা দাগ বলা হয়ে থাকে। আবার প্রাথমিক পর্যায়ে যদি ২টি দাগ একত্রিত করে নকশা পুনঃসংশোধন করা হয়ে থাকে তখন যে দাগ নাম্বার বাদ হয়ে যায় তবে তাকে বলা হয়ে থাকে ছুটা দাগ।

খাজনা ও দাখিলা কাকে বলে

সরকার কৃতক বার্ষিক ভিত্তিতে প্রজার নিকট হতে ভূমি ব্যাবহারের বদলে যে কর আদায় করা হয়ে থাকে তাকে খাজনা বলা হয়। ভূমি খাজনা/কর আদায়কালে যে নির্দিষ্ট ফরমে ( ফরম নং১০৭৭) ভূমি খাজনা/কর আদায়ের প্রমানপত্র কিংবা রশিদ দেয়া হয়ে থাকে তবে তাকে দাখিলা বলা হয়ে থাকে।

DCR কাকে বলে

ভুমি অফিস থেকে ভূমি খাজনা/কর ব্যাতিত অন্যান্য সরকারি পাওনা আদায় করে যে রশিদ প্রদান করা হয়ে থাকে তবে তাকে DCR বলে। এটির জন্যে নির্ধারিত ফরমে (ফর্ম নং ২২২) রশিদ দেয়া হয়ে থাকে। 

কবুলিয়ত কাকে বলে

সরকার কর্তৃক কৃষককে জমি বন্দোবস্ত দেয়ার প্রস্তাব অ প্রজা কর্তৃক গ্রহণ করে খাজনা প্রদানের যে অঙ্গিকারপত্র দেয়া হয়ে থাকে তাকে কবুলিয়ত বলা হয়। তো বন্ধুগণ এতোক্ষণ সময় ধরে ধৈর্য সহকারে এই সকল জমি-জমার ব্যাপারে বিস্তারিত জানার পরে এবার চলুন জেনে নেই অনলাইনের মাধ্যমে জমির মালিকানা যাচাই | অনলাইনের মাধ্যমে জমির পর্চা বের করার নিয়ম | জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম সম্বন্ধে।

কিভাবে জমির মালিকানা যাচাই এবং পর্চা বের করবেন?

উপরোক্ত আলোচনা হতে নিশ্চয় আপনারা জমি-জমার অনেক বিষয়াদি সম্পর্কে বেসিক ধারণা জানতে পারছেন। উক্ত বিষয়গুলো যদি আপনারা ভালোভাবে বুঝতে পারেন তাহলে জমির খতিয়ান সম্পর্কে বুঝতে আপনাকে তার জন্য কোনো ডিগ্রী নেয়ার প্রয়োজন হবেনা। তো বন্ধুগণ এবার আমরা অনলাইনে জমির মালিকানা যাচাই ও এবং অনলাইনে জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম ও অনলাইনের মাধ্যমে জমির পর্চা বের করার নিয়ম সম্পর্কে দেখবো। অনলাইনের মাধ্যমে জমির পর্চা দেখার জন্য বা জমির পর্চা হাতে পাওয়র জন্যে যা যা করতে হবে। আপনি সাধারণত ৩ ভাবে জমির খতিয়ান পেতে পারেন। যেমনঃ

১। অনলাইনে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিজেই আবেদন করে

২। ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র অথবা জেলা ই-সেবা কেন্দ্র থেকে আবেদন করার মাধ্যমে

৩। ডিজিটাল রেকর্ড রুম থেকে বাসায় বসে থেকে আপনার জমির সার্টিফাইড খতিয়ান কপি পেতে পারেন

ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জমির পর্চার আবেদন কিংবা অনলাইনের মাধ্যমে জমির পর্চা চেক করুন


জমির যেকোনো খতিয়ান যেমনঃ (এসএ, সিএস, আরএস) ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পেতে হলে ভিজিট করতে হবে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট। ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে এখানে ক্লিক করুন কিংবা সরাসরি ই-পর্চা এই ঠিকানায় প্রবেশ করে খতিয়ান পর্চার আবেদন অথবা খতিয়ান পর্চা অনুসন্ধান বাটন ক্লিক করে অনলাইনে আপনার জমির খতিয়ান দেখতে পারবেন।

আরএস খতিয়ান অনলাইনে দেখা বা অনলাইন থেকে আরএস খতিয়াল তোলার নিয়ম

অনলাইনে যেকোনো খতিয়ান (সিএস, এস এ, আরএস, বিআরএস) প্রথমে এই লিংকে ক্লিক করে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে নিচের চিত্রটি দেখাবে। 

উপরোক্ত চিত্রে মোট ৪টি ঘর দেখা যাচ্ছে। খতিয়ান দেখতে হলে এই ৪টি ঘর পুরণ করতে হবে। নিচের চিত্র থেকে দেখুনঃ

এখানে উপরোক্ত চিত্রের ন্যায় বিভাগ, জেলা, উপজেলা এবং মৌজার নাম/নাম্বার সিলেক্ট করে নিতে হবে। তারপরে খতিয়ান নং জানা থাকলে “খতিয়ান নং অনুযায়ী” অপশনটি বেছে নিয়ে খালি ঘরে উপরোক্ত চিত্রের ন্যায় জমির খতিয়ান নাম্বারটি লিখে দিতে হবে। সবশেষে যোগফলের ঘরে যোগফলটি লিখে দিয়ে সবুজ কালারের সার্চ করুন বা খুজুন বাটনে ক্লিক করলে কাঙ্খিত জমির মালিক, দাগ নাম্বার এবং ভূমির মাপসহ যাবতীয় তথ্য নিচের চিত্রের ন্যায় দেখতে পারবেন।

আপনি আপনি জমির খতিয়ানের সার্টিফাইট কপি কিংবা অনলাইন কপি ডাউনলোড করতে চান তাহলে উপরোক্ত চিত্রের সবুজ রং এর অপশনগুলো ব্যাবহার করতে হবে। সার্টিফাইট/অনলাইন কপির অপশনে ক্লিক করলে একটি ফর্ম ওপেন হবে। এখানে নাম ঠিকানাসহ প্রয়োজনীয় সকল তথ্য দিয়ে উক্ত ফর্মটি পূরণ করে সাবমিট করতে হবে। মনে রাখবেন, সার্টিফাইড/অনলাইন কপির জন্যে ইউ ক্যাশ দিয়ে পেমেন্ট করার প্রয়োজন হবে। নিজের ইউ ক্যাশ অ্যাকাউন্ট না থাকলে অন্য কারও ইউ ক্যাশ ব্যবহার করে টাকা পরিশোধ করে নিতে পারবেন।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরোক্ত আর্টিকেলে শুধুমাত্র খতিয়ান নং ব্যবহার করে জমির পর্চা বের করার নিয়ম সম্পর্কে দেখানো হয়েছে। যদি খতিয়ান নং জানা না থাকে তবে আপনি দাগ নং সিলেক্ট করে জমির পর্চা বাহির করতে পারবেন। খতিয়ান কিংবা দাগ নং কোনোটিই যদি আপনার জানা না থাকে তবে আপনি জমির মালিকের নাম অথবা জমির মালিকের পিতার নাম ব্যবহার করে অনলাইন থেকে জমির পর্চা বের করতে পারবেন। মনে রাখা ভালো যে, জমির মালিকের নাম অথবা মালিকের বাবার নাম বাংলাতে লিখে সার্চ করতে হবে।

পোষ্ট ক্যাটাগরি:

এখানে আপনার মতামত দিন

0মন্তব্যসমূহ

আপনার মন্তব্য লিখুন (0)