অনুপ্রেরণামূলক উক্তি | মোটিভেশনাল উক্তি | বিশ্বের সেরা উক্তি

অনুপ্রেরণামূলক উক্তি | মোটিভেশনাল উক্তি | জীবন নিয়ে উক্তি | সফলতার উক্তি — অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য বা অনুপ্রেরনামূলক উক্তি বলতে বোঝায় যে শব্দ বা বাক্য ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের মনে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে বা ইচ্ছাশক্তি জাগ্রত হয়। প্রতিটি মানুষই চায় মানুষের জীবনকে সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে নিতে। কিন্তু ভরা নদীতে যেমন তীব্র স্রোতের দেখা মেলে ঠিক তেমনিভাবে মানুষের স্বাভাবিক জীবনেও কখনো কখনো তীব্র স্রোতের ঢেউ বয়ে।

অনুপ্রেরণামূলক উক্তি

জীবনস্রোতের এই ধাক্কা এতটাই প্রখর যে‌ সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নিতে পারলে জীবনে অনায়াসেই সবকিছু অন্ধকার কালো মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আসে। তখন চারদিকে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখা সম্ভব হয় না। জীবন তখন হতাশা নামক তিন অক্ষরের এই শব্দটির কাছে হার মেনে যায়। হ্যা প্রিয় পাঠক আজ আমরা এ আর্টিকেলে জীবনমুখী কিছু উক্তি ও অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য বা অনুপ্রেরনামূলক উক্তি এবং অনুপ্রেরণামূলক গল্প নিয়ে জানবো যা জীবনযুদ্ধের মোরকে কিছুটা হলেও ঘোরাতে সম্ভব হবে। শুরুতেই আমরা কিছু অনুপ্রেরণামূলক উক্তি নিয়ে এবং মোটিভেশনাল উক্তি বাংলা নিয়ে জানবো।

১। লক্ষ্য পূরণে কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত থেমে যেও না। কারণ সামান্য বিশ্রাম নিয়ে তুমি যে আনন্দ পাবে তার চেয়ে বেশি আনন্দ পাবে লক্ষ্য পূরণ হলে।

২। কারো মিষ্টি কথায় কখনো গলে যেওনা বরং সব সময় নিজের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে কাজ করো। 

৩। নদীর স্রোত যেদিকে সেদিকে যেওনা বরং স্রোতের বিপরীতে যাওয়ার চেষ্টা করো তবে টিকে থাকতে পারবে। 

৪। জীবনকে সাজাতে চেষ্টা করো তাহলে জীবন সুন্দর হয়ে উঠবে। 

৫। অনুভূতি আর স্পর্শ এক নয় বরং অনুভূতির মাধ্যমে অনুভব করা যায় আর স্পর্শ করার মাধ্যমে উপলব্ধি বোঝা যায়।

৬। যে পরিশ্রম করে সফলতার প্রথম সোপানে পা দিতে পারে তার জন্য সফলতা কারণ প্রথম সোপানে পা দিলেই কেবল দ্বিতীয় সোপানে উঠতে পারা যায়। 

৭। যে পরিশ্রমী নয় তাকে পরিশ্রম করতে বলো না কারণ সে নিজের ভালো নিজেই চায়না। 

৮। সময়কে গুরুত্ব দিতে শিখো তাহলে কেবল সময় অনুযায়ী সবকিছু পেয়ে যাবে অন্যথায় সফলতা পাওয়ার মতো সময় থাকবে না। 

৯। কোন কিছু ভাঙতে নয় বরং তৈরি করতে শেখো। 

১০। মেধাকে কাজে লাগাও তাহলেই নতুন দিগন্তের পথ দেখতে পাবে অন্যথায় সবকিছুই অন্ধকারে দেখবে। 

১১। অন্যের বুদ্ধিতে ধ্বংস হওয়ার চেয়ে নিজের বুদ্ধিতে ব্যর্থ হওয়া অনেক ভালো কারণ ব্যর্থ হওয়ার পর একসময় না একসময় সফলতার দরজা খুঁজে পাওয়া। 

১২। যার কোন আগ্রহ নাই তাকে কিছু বলার চেষ্টা করো না বরং যার আগ্রহ আছে তাকেই কিছু শেখানোর চেষ্টা করো। 

১৩। কিছুক্ষণ উজ্জল আলো পাওয়ার জন্য সারা জীবন অন্ধকার আলোতে থাকার চেয়ে বরং সব সময় মৃদু আলোতেই থাকা নিরাপদ। 

১৪। বাস্তব কে অনুসরণ করো কল্পনাকে নয়। তাহলেই টিকে থাকতে পারবে। 

১৫। কষ্ট করতে শিখো তাহলেই ভালো ফল পাওয়ার আনন্দ উপভোগ করতে পারবে। 

১৬। পূর্বের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ কর না হয় একই ভুল বারবার হবে। 

১৭। ইচ্ছা শক্তি মানুষের নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে পূরণ করতে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। 

১৮। কারো সফলতা দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ো না বরং তাকে অনুসরণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাও। 

১৯। চাকরি নেয়ার মতো জ্ঞান অর্জন করোনা বরং চাকরি দেয়ার মতো প্লাটফর্ম তৈরি করার অভিজ্ঞতা অর্জন করো। 

২০। যেটি তোমার জন্য বিপদজনক তা অন্য কাউকে করার জন্য উপদেশ দিও না কারণ সেটি তার জন্য ভয়ানক। 

২১। আগে নিজে উপদেশ পালনকারী হও তারপর পরে উপদেশ দাতা হওয়ার চেষ্টা করো। 

২২। সফলতা ও ব্যর্থতা একই জিনিস শুধু এপিঠ-ওপিঠ। বেশিরভাগ মানুষ আগেই ব্যর্থতার দেখা পায়। 

২৩। সময় থাকতেই নিজেকে প্রস্তুত করে নাও না হয় জীবন যুদ্ধে প্রস্তুতি ছাড়া যুদ্ধ করা নির্ঘাত মৃ- ত্যু স্বরূপ।

২৪। অপরের স্বার্থ নিয়ে ভাবার চিন্তা করো তাহলেই প্রকৃত সুখ খুঁজে পাবে। 

২৫। যে বুঝার তাকে একটি শব্দ বললেই সে বুঝে নিতে পারে আর যে অবুঝ তাকে রচনা লিখে দিলেও সেই রচনা অর্থ বুঝার চেষ্টা করবে না।

অনুপ্রেরণা ও সফলতার গল্প | উৎসাহ মূলক গল্প

প্রিয় পাঠক, এবার আমরা অনুপ্রেরণা মূলক কিছু গল্প জানার চেষ্টা করি। গল্পটা হচ্ছে রবিন কে নিয়ে যে অনার্স প্রথম বর্ষের একজন শিক্ষার্থী এবং বর্তমান তার মাসিক ইনকাম প্রায় ৬০ হাজার টাকা। কি চমকে গেলেন? আসুন গল্পটি জানার চেষ্টা করি। তার এ উপার্জনের পেছনে অনেক কষ্ট ও ত্যাগ রয়েছে। রবিন অনার্স প্রথম বর্ষের মানবিক বিভাগের একজন মেধাবী শিক্ষার্থী।আর্থিকভাবে তার পরিবার স্বচ্ছল না। তার লেখাপড়ার খরচ তাকেই বহন করতে হয়। টিউশনি করে নিজের পড়ালেখা চালায়।কিন্তু করোনার সময়ে তার সকল টিউশনি বন্ধ হয়ে যায়। 

এমতাবস্থায় তার অর্থোপার্জনের কিছুই থাকেনা। কিন্তু সে থেমে থাকেনি। ছোটকাল থেকেই তার মধ্যে ছিল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নিয়ে জানার প্রবল ইচ্ছা এবং প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা। পড়ালেখার পাশাপাশি অবসর সময় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নিয়ে অনেক জানতে ও শিখার আপ্রাণ চেষ্টা করে। 

এক পর্যায়ে চায় ফ্রিল্যান্সিং শিখতে।কিন্তু এটা শিখার জন্য তার কাছে তেমন টাকা ছিল না।সে অন্যের দোকানে ৩ বেলা খেয়ে না খেয়ে কাজ করে টাকা জমিয়ে অবশেষে এই ফ্রিল্যান্সিং শিখতে পারে।কিন্তু তখন তার নিকট কোন কম্পিউটার না থাকার দরূন সফল হতে পারে না বরং টিউশনি করে চলতে থাকে এবং টাকা জমাতে থাকে।

করোনার জন্য যখন তার সকল টিউশনি বন্ধ হয়ে যায় তখন সে তার জমানো টাকা দিয়ে কম্পিউটার কিনে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করে টাকা ইনকাম করতে সক্ষম হয়। এমনকি তাঁর এই অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে শুধু তার লেখাপড়ায় নয় বরং তার সংসার সে এখন চালাতে সক্ষম হয়। 

প্রিয় পাঠক এই গল্পটি বাস্তব জীবন থেকে নেওয়া একটি ঘটনা। মানুষের অভিজ্ঞতা কখনো বিফলে যায়না তাই সবসময় অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করার চেষ্টা করুন এবং কঠোর পরিশ্রম করে যেতে থাকুন একসময় না একসময় সফলতার দরজা দেখা যায়। 

অনুপ্রেরণা ও সফলতার গল্প | অনুপ্রেরনার গলপ

আমরা আরেকটি গল্প বলেই এ টপিক শেষ করব। অনুপ্রেরণার আরেক গল্পের শিরোমণি হলো সজীব। নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয় সজীব। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে অভাব-অনটনে আর লেখাপড়া করতে পারেনি। তার বাবা নেই তার পরিবারের সেই বড়। মা সহ ছোট দুই ভাই এক বোন এর সংসার। আর্থিক অনটনের কারণে লেখাপড়া শিখতে পারেনি তাকে কাজে লেগে যেতে হয়েছে। কিন্তু অন্যের কাজ করে স্বল্প বেতনে তার সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।

সারাদিন তার মাথায় সংসার চালানোর খরচের হিসাব ঘুরপাক খেতে থাকে। সে চায় নিজের পায়ে দাঁড়াতে, পরিশ্রম করে সফল হতে। অন্যের দোকানে কাজ করার পাশাপাশি কাজ শেষে সে চা বিক্রি করতে শুরু করে। কিন্তু কে জানত তার এই চা বিক্রি থেকেই সে আজ সফলতা খুঁজে পাবে। দোকানে কাজ শেষে সে প্রতিদিনের মতোই একদিন চা বিক্রি করতে বাড়ি থেকে বের হয়। 

এক ভদ্রলোকের সাথে তার দেখা হয় এবং তার কাছে সে চা বিক্রি করে। পরবর্তীতে সেই ভদ্রলোক তাকে তার রেষ্টুরেন্টে ওয়েটার এর পদে কাজ করার জন্য প্রস্তাব দেয় এবং মোটামুটি ভাল বেতনের কথা বলা হয়।সে দোকানের কাজ ছেড়ে তার কথায় সম্মত হয় রেস্টুরেন্টে কাজ করতে থাকে। পরবর্তীতে সংসার চালিয়ে টাকা জমাতে শুরু করে এবং এক সময় তার এ জমাকৃত টাকা দিয়ে সে ছোটখাটো একটি ফাস্টফুডের দোকান খুলে। 

সেখানে স্বল্প সময়ের মধ্যই তার দোকান জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এক সময় সে তার এই ফাস্টফুডের দোকান এর পাশাপাশি নতুন ভাবে আরো দুটি দোকান দিতে সক্ষম হয়। বর্তমানে তাঁর এই তিনটি ফাস্টফুডের দোকান থেকে প্রচুর পরিমাণে টাকা ইনকাম হয় এতে তার পরিবারের মোড় ঘুরে যায়। ছোট ভাই বোনের ও লেখাপড়ার হাল ধরে বর্তমানে তার মাসিক ইনকাম প্রায় 80 হাজার টাকার বেশি। তার অক্লান্ত পরিশ্রম এবং আপ্রাণ চেষ্টার দরুন সে আজ এ পর্যায়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। 

প্রিয় পাঠক, এরকম হাজারো উদাহরণ আমাদের আশেপাশে আছে যাদের দেখে আমরা নিজেরাই অনুপ্রাণিত হতে পারি শুধু যে অনুপ্রাণিত হলেই হবে তা নয় বরং তাদের মত পরিশ্রমী সফল উদ্যোক্তা হতে হবে তাহলেই জীবনে যে কোন পর্যায় বা যেকোনো অবস্থান থেকে সফলতা পাওয়া পাওয়া সম্ভব। 

পোষ্ট ক্যাটাগরি:

এখানে আপনার মতামত দিন

0মন্তব্যসমূহ

আপনার মন্তব্য লিখুন (0)