স্মার্টফোন হ্যাক হওয়ার লক্ষণ ও করণীয়

হাসিবুর
লিখেছেন -

স্মার্টফোন বা মোবাইলফোন আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। মোবাইল ফোনের আবিষ্কারের প্রধান কারণ ছিল মূলত যোগাযোগের মাধ্যমকে আরো সহজ থেকে সহজতর করা। কিন্তু বর্তমান সময় একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের স্মার্টফোনটিকে শুধুমাত্র আমরা যোগাযোগ সহজতর করার জন্য ব্যবহার করে থাকছি না বরং এই স্মার্টফোন এখন আমাদের প্রতিদিনের জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।

বর্তমানে আমরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বা স্মার্টফোনের মাধ্যমে অনলাইনে পণ্য কেনাকাটা থেকে শুরু করে মোবাইল ফোনকে আমাদের নিজেদের পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্টের জায়গায় ব্যবহার করে থাকছি। এই মোবাইল ফোন ব্যবহার করার মাধ্যমে আমরা দেশ-বিদেশের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন সবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি সহজেই এছাড়াও সরাসরি ভিডিও কলের মাধ্যমে কথা বার্তা ও ভাবের আদান-প্রদান করতে পারছি। আমরা এই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টাকা-পয়সা লেনদেন, নিজের ব্যক্তিগত তথ্য অনেক কিছুই জমা করে রাখছি এই স্মার্টফোনের মধ্যেই। 

কিন্তু কী হবে যদি কখনো আপনি জানতে পারেন যে আপনার এতো আপন ভেবে যত্ন করে যে স্মার্টফোনটি ব্যবহার করছিলেন। সেই ফোনটি অনেক আগে থেকে হ্যাকারদের হাতে নিয়ন্ত্রণে ছিলো? যদি কখনও আপনি জানতে পারেন যে, নিজের স্মার্টফোন টিকে এতো আপন ভেবে নিজের ব্যক্তিগত সকল তথ্য জমা করছিলেন সেই ফোনটিতে। এমনকি আপনার ব্যাংকের সকল তথ্য চলে গিয়েছে হ্যাকারদের হাতে এবং স্মার্টফোনটিতে যেসব সোশ্যাল সাইট অ্যাকাউন্টগুলো ব্যবহার করেছিলেন। যদি জানতে পারেন যে সেগুলো সকল অ্যাকাউন্ট হ্যাকারদের কাছে আছে, তারা আপনার পাসওয়ার্ড নিয়ে সেই লগিন করছে আপনার সেই অ্যাকাউন্ট গুলোতে।

আর পড়ুনঃ হ্যাকিং থেকে বাঁচার উপায় | হ্যাকিং থেকে বাঁচার ৭টি উপায়

আর তাই আমাদের সকলকে সাইবার জগতে এই রকম ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি থেকে সুরক্ষিত থাকা খুবই প্রয়োজন। অনলাইনে সতর্ক থাকাটা বর্তমানে নেটিজেনদের জন্য বাধ্যতামূলক। আমরা সবাই যখন অনলাইনে যত বেশি সতর্ক থাকবো তত বেশি আমরা অনলাইনে সুরক্ষিত থাকতে পারবো। মূলত আমরা অনেক সময় নিজেদের ব্যক্তিগত অনেক তথ্য শেয়ার করে থাকি অনলাইনে এগুলো করা যাবে না। এছাড়াও স্মার্টফোনে অ্যাপ্লিকেশান ইন্সটল করার সময় অনেক বেশি সতর্কতা অবলম্বন হবে। কেননা একটি অ্যাপ ফোনে ইন্সটল করার ফলে হ্যাকাররা ভিকটিমের পুরো স্মার্টফোনের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাই এই বিষয়ে আমাদের অনেক বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। কেউ যদি এই রকম পরিস্থিতির শিকার হয় তাহলে তাদের সেই অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সাহায্য গ্রহণ করতে হবে।

সাধারণত আমরা জানি যেসকল জিনিস মানুষের মাঝে অনেক বেশি জনপ্রিয় সেই সকল জিনিসের প্রতি অসাধু কিছু ব্যক্তি অথবা দলের নজরও থাকে খুব বেশি। ঠিক তেমন ভাবেই স্মার্টফোনটিও আছে সেই তালিকায়। বিভিন্ন জায়গায় হ্যাকাররা নানান ধরনের ফাঁদ পাতা থেকে শুরু করে তথ্য হ্যাক করা বা ইউজারের তথ্য হ্যাক করে সেগুলো বিক্রয় করে দেয়া কোন কিছুই বাদ রাখেনি হ্যাকাররা। হ্যাকাররা ফাঁদ হিসাবে অনেক পন্থা ব্যবহার করলেও যে কৌশলটি বেশি ব্যবহার করে তারা সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়। অর্থাৎ ব্যবহারকারীর সবথেকে বেশি ক্ষতি করে থাকে তা হচ্ছে "স্মার্টফোন অ্যাপ"।

আসলে আমরা আমাদের মোবাইলফোনের তথ্য নিয়ে বেশি মাথা ঘামায় না। আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে বেশির ভাগ মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহারকারী কিন্তু স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর তুলনায় সাইবার জগতে সচেতন ব্যাক্তি খুবই নগন্ন আর সেই সুযোগটি ব্যবহার করছে হ্যাকাররা। হ্যাকাররা তথ্য চুরি করতে বিভিন্ন প্রকার পন্থা ব্যবহার করে থাকে। বেশিরভাগ ব্যক্তিবর্গের আক্রমণে প্রধানত হাতিয়ার হিসেবে সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং; হ্যাকাররা কিছু কিছু লোভনীয় ফাঁদ সৃষ্টি করে থাকে যেমন; আপনি লটারি জিতেছেন বলে থাকে, আপনার কিছু অশ্লীল ছবি ভাইরাল হবে বা এখানে ভাইরাল হয়েছে, অথবা লোভনীয় বিজ্ঞাপন, এবং আপনি এই লিংক ক্লিক করে দেখুন এই রকম অনেক ফাঁদ তৈরি করে থাকে হ্যাকাররা। 

স্মার্টফোন হ্যাক হওয়ার লক্ষণ ও করণীয়

আমাদের স্মার্টফোন বা মোবাইল ফোন অ্যাপ ইন্সটল করার সময় অনেক বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আমরা যে অ্যাপটি ফোনে ইন্সটল করবো প্রথমে দেখতে হবে সেটি কোন ধরনের পারমিশন চাচ্ছে সেই দিকে লক্ষ্য করতে হবে। আর দেখতে হবে অ্যাপটি অহেতুক কোন প্রকার পারমিশন চাচ্ছে কিনা সেই বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে। যদি অ্যাপটি পারমিশন নিয়ে মনে সন্দেহ সৃষ্টি হয় তাহলে পারমিশন বন্ধ করে দিন। আর লিংক এবং অহেতুক বিজ্ঞাপনে ক্লিক না করাই উত্তম। তাই এই সকল সমস্যা থেকে সমাধানের জন্য ফোনে ভালোমানের একটি এন্টিভাইরাস ইউজ করুন। চলুন তাহলে জেনে নেই স্মার্টফোন হ্যাক হওয়ার লক্ষণ গুলো কি কি-

  • প্রতিদিন ইউজ করা অ্যাপ্লিকেশান গুলো যদি চালাতে চালাতে হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায় অথবা বন্ধ অ্যাপ চালু হয়ে যায়
  • খুব দ্রুত স্মার্টফোনের চার্জ শেষ হয়ে যায়
  • ব্যাকগ্রাউন্ডে কিছু কিছু অচেনা প্রসেস চলতে থাকবে যা আপনার ব্যবহার করা কোন অ্যাপের সাথে যায় না
  • স্মার্টফোনটি আগের থেকে অনেক বেশি ধীর গতির বা স্লো হয়ে যাবে এবং অপেরাটিনফ স্পিড কমে যাবে
  • ডেটা আপলোড বেশি হবে
  • স্মার্টফোনটি স্বাভাবিক সময়ে থেকে বেশি গরম হবে
  • মোবাইল ফোন অটোমেটিক ভাবে রিস্টার্ট নিবে 
  • অটোমেটিক ভাবে নাম্বার ডায়েল করতে থাকবে
  • অটোমেটিক ভাবে অ্যাপস ওপেন হবে
  • মোবাইল অদ্ভুত টেক্সট মেসেজ খুঁজে পাওয়া সেগুলো আপনি কখনও সেন্ড অথবা রিসিভ করেননি
  • অনেক সময় মোবাইল বন্ধ করতে চাইলেও মোবাইল বন্ধ হবে না
  • ফোনে কল করার সময় অদ্ভুত নয়েজ এবং ইকো হওয়া
  • অদ্ভুত সকল ওয়েবসাইট খুঁজে পাওয়া ব্রাউজার হিস্টোরিতে যেগুলো আপনি কখনও ব্রাউজ করেননি
  • মোবাইলে রেগুলার ডেটার তুলনায় বেশি ডেটা ব্যবহার হবে
  • নতুন নতুন পপ-আপ শো হওয়া 
  • স্মার্টফোনে যুক্ত মেইল থেকে মেইল যাওয়া এবং তা স্প্যাম মেইল হিসাবে দেখানো
  • হঠাৎ হঠাৎ কল ড্রপ হওয়া মাঝে মাঝে এটি নেটওয়ার্কের জন্য হয়ে থাকে

আমাদের সবার সতর্কতাই পারে আমাদেরকে প্রাথমিকভাবে সুরক্ষিত রাখতে। আপনি যদি কখনও এই রকম সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন তাহলে সমাধানের জন্য জরুরি প্রয়োজনে বিনামূল্যে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এই নাম্বারে কল করতে পারেন।

ব্লগ ক্যাটাগরি: