হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ইমু,মেসেঞ্জার অ্যাপ কতটা নিরাপদ

আমরা বর্তমান সময়ে যোগাযোগের জন্য অনেক ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করে থাকি।হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ইমু, মেসেঞ্জার এর মত ইন্টারনেট এর যোগাযোগ এর মাধ্যম গুলি এর মাধ্যমে বার্তা পাঠানো ফোন কলের গোপনীয়তা কতটা আমাদের জন্য কতটা নিরাপদ সে বিষয় এ ব্যবহার কারিদের মনে প্রশ্ন আছে সব সময়।

হোয়াটসঅ্যাপ এর যেকোন মেসেজ এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশণ করা থাকে যার অর্থ যিনি মেসেজ বা বার্তা পাঠাচ্ছেন আর যাকে পাঠাচ্ছেন শুধু তারাই এর পূর্ণরুপ দেখতে পারবে। এই সফটওয়্যার টি ইসরাইল তৈরি করা হয়। যার নাম ছিল পেগাসাস, কিন্ত এই অ্যাপ টি ভারতের কিছু হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার কারিদের অনুমতি না নিয়েই ফোন ইন্সটল করা হয়েছিল। আর এই সফটওয়্যার এর মাধ্যমে ব্যবহার কারিদের সকল হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ ফাস হয়েছিল।

তাই এখন আপনি মনে মনে প্রশ্ন করতে পারেন যে ইন্টারনেট এ থাকা এই সকল যোগাযোগ সফটওয়্যার বা অ্যাপ গুলি ব্যবহার কারির বার্তা এর গোপনীয়তা ও ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা কতটা নিশ্চিত করতে পারে। আপনি আমদের এই পোস্ট টি পরে জানতে পারবেন হোয়াটসঅ্যাপ,ভাইবার, ইমু,মেসেঞ্জার এই অ্যাপ গুলার নিরাপত্তা ও আমাদের জন্য কতটা সুরক্ষা প্রদান করে। চলুন তাহলে দেখে নিয়া যাক;

আমাদের দেশ বাংলাদেশ এর অনেক লোক বিদেশ এ কর্মরত আছেন। আর এই প্রবাসীরা তাদের পরিবারের সবার সাথে কথা বলা বা যোগাযোগ করার জন্য বিনামূল্য অডিও ও ভেডিও কল করার জন্য ইমু ব্যবহার করে থাকেন।

আবার যদি একই সাথে বলতে চাই ভারতে আবার বেশ জনপ্রিয় হোয়াটসঅ্যাপ। কারন তারা এই হোয়াটসঅ্যাপ কে সোশ্যাল মিডিয়া হিসাবে ব্যবহার করতে সুরু করছে। তারা ছোট বড় সবাই অফিসিয়াল এবং আনঅফিসিয়াল কাজে সহজেই যুক্ত হয়ে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করে থাকে আর নানা রকম বিভিন্ন ধরনের গুরুপ্তপূর্ণ ফাইল আদান প্রদান করে থাকে।

শতভাগ গোপনীয়তা নিশ্চয়তা অসম্ভব

ইন্টারনেট যোগাযোগ এর সফটওয়্যার বা অ্যাপ এর মাধ্যমে পাঠানো মেসেজ বা বার্তা শতভাগ গোপনীয়ও আর এসব বার্তা অন্য কোন বাক্তি পাবে না এ কথা সঠিক না। হোয়াটসঅ্যাপ,ভাইবার কোম্পানি দাবি করে থাকেন যে তাদের মাধ্যমে ফোন কল বা মেসেজ বা বার্তা পাঠানো এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যার ফলে যে বাক্তি মেসেজ বা বার্তা পাঠাবে এবং যার কাছে পাঠানো হবে এই দুজন বাক্তি ছাড়া অন্য কোন লোক জানতে পারবে না বা বার্তা দেখতে পারবে না।

কিন্ত আসল ঝুকি মেসেজ পাঠানোর ক্ষেত্রে নয়। আপনি যে স্মার্ট ফোন দিয়ে মেসেজ লিখবেন তখন মেসেজ পাঠানোর আগে সেই ডিভাইস এ ম্যালওয়্যার থাকলে তা ইনক্রিপ করার আগে সেখানে সেভ হয়ে যাবে। তেমন ভাবে উক্ত মেসেজ টি পাঠানোর পর প্রাপকের ডিভাইস এ দেখা যায়, আর একই ভাবে মেসেজ টি সেখান এ সেভ বা রেকড হয়ে থাকতে পারে।

আপনি এই পদ্ধতি টি ব্যবহার করে অজান্তে আপনার ফোন এর অডিও কল, ভিডিও কল, ফাইল ইত্তাদি চুরি করে থাকে। প্রযুক্তি এর এসব নতুন নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে অপরাধী, হ্যাকার রা তথ্য চুরি করে। গবেষণায় জানা গেছে হ্যাকাররা নতুন নতুন পদ্ধতি আবিস্কার করছে প্রতিনিয়ত।

এই পদ্ধতিকে আপনি অ্যাপ তৈরি কারি প্রতিষ্ঠান বা হ্যাকার দের বুদ্ধির খেলা বলতে পারেন। সফটওয়্যার বা অ্যাপ তৈরি কারি প্রতিষ্ঠান চাই যে তাদের তৈরি করা অ্যাপ গুলার সিকিউর বা নিরাপত্তা হালনাগাদ থাকুক। আর হ্যাকাররা বা সাইবার অপরাধী সবায় প্রতনিয়ত চেস্টা করে তাদের নতুন নতুন কৈাশল ব্যবহার করে তাদের নিরাপত্তা টি ভেঙ্গে ফেলতে।

এখন কথা হল অ্যাপ তৈরি কারি প্রতিষ্ঠান গুলোর দাবি অনুযায়ী তাদের অ্যাপ এর গোপনীয়তা নিশ্চিত করে ঠিক কিন্ত ব্যবহার কারির ফোন এর নিরাপত্তা বাবস্থার উপর নিরভর করে তার কোন মেসেজ বা বার্তা কতটা গোপনীয়ও থাকবে।

তাই বলা যায় আপনি যত সচেতনতা অবলম্বন করেন না কেন মেসেজিং অ্যাপ এর কোন ব্যবহার কারির পক্ষে অডিও কল, ভেডিও কল এর ফাইল আদান প্রদান এর গোপনীয়তা শতভাগ নিশ্চিত করা সম্ভব না।

ফেসবুক মেসেঞ্জার অ্যাপ

মেসেজ এর সার্ভিসগুলোর জনপ্রিয়তা দেখে ফেসবুক তাদের চ্যাট ফিচার কে আলাদা করে আরও নতুন কিছু ফিচার যুক্ত করে নতুন ভাবে মেসেঞ্জার নামে চালিয়ে আসছে। তবে মেসেঞ্জার এর সাম্প্রতিক ভার্সন গুলা আপনি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ছাড়া এটি চালাতে পারবেন। এছাড়া আপনি সরাসরি মেসেজ মেসেঞ্জার থেকে আপনার মোবাইল ক্যারিয়ার এর মেসেজ গুলাকে কন্ট্রোল করতে পারবেন। এই ফ্রি কল মেসেঞ্জার অ্যাপ আপনি যেকোন ডিভাইস এ ব্যবহার করতে পারবেন।

তবে এই অ্যাপ টি সব ফিচার আপনি উইন্ডোজ  স্মার্ট ফোনে পাবেন না। তবে এর সম্পূর্ণ ওয়েব ভার্সন আপনি বেসিক কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। এই মেসেঞ্জার অ্যাপ এর মাধ্যমে আপনি মেসেজ আদানপ্রদান, অডিও কল, ভিডিও কল, গ্রুপ কল, গ্রুপ মেসেজ ইত্তাদি কাজ করতে পারবেন। এই মেসেঞ্জার অ্যাপ এর মাঝে গেম খেলা, ফাইল আদানপ্রদান, লিঙ্ক ব্রাউজ করার মতো ফিচার যুক্ত আছে।

আমার কাছে এই মেসেঞ্জার এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এর বিশাল কমিউনিটি। আজ কাল প্রায় সবারই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থাকায় মেসেঞ্জার অ্যাপ টি অনেক টা গুরুপ্তপূর্ণ যোগাযোগ এর মাধ্যম হিসাবে দাড়িয়েছে। বাংলাদেশ এ সব মোবাইল অপেরাটর কম খরচ এ কম দামে ডেটা খরচ ছাড়া মেসেঞ্জারে মেসেজ টেক্সট পাঠানো ও রিসিভ করার সুযোগ করে দিচ্ছে।

ফেসবুক মেসেঞ্জার এর দুটি ভার্সন তৈরি করছে। একটি হচ্ছে মুল মেসেঞ্জার যার মাঝে আপনি পেয়ে যাবেন সব ফিচার। আর একটি হচ্ছে মেসেঞ্জার লাইট মাধ্যমে আপনি কম ডেটা খরচ করে অল্প বা স্লও নেট কানেকশন এ ভালো চালাতে পারবেন।

হোয়াটসঅ্যাপ

এই অ্যাপ টি ফেসবুক এর মালিকাধীন অনলাইন ম্যাসেজিং অ্যাপ। এই সফটওয়্যার টি ২০১৪ সালে কিনে নেই ফেসবুক। এই অ্যাপ টি মেসেঞ্জার এর থেকে বেশির ভাগ আলাদা। এর নানা রকম ফিচার পলিসি , উদ্দেশ্য ও আলাদা। অনেকেই আছেন যারা সোশ্যাল মিডিয়া এর হইচই একদম পছন্দ করেন না অথবা যামেলাবিহীন পেইড কল বা ফ্রি কল বা মেসজ অ্যাপ চান পরিবার ও কাছের কোন মানুষ এর সাথে যোগাযোগ করতে চান তাদের জন্য এই হোয়াটসঅ্যাপ টি।

হোয়াটসঅ্যাপ এ আপনি এবং আর একজন যেমন পারসন টু পারসন অডিও কল বা ভিডিও কল এ কথা বলতে পারবেন। এই হোয়াটসঅ্যাপ মাধ্যম দিয়ে আপনি টেক্সট, হাই রেজোলিউশন ছবি সেন্ড করতে পারবেন এমনকি নানা রকম ফাইল আদান প্রদান করতে পারবেন। আপনার ফোন থাকা কন্টাক্ট নাম্বার গুলা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে তাদের সাথে আপনাকে অটোমেটিক অ্যাড করে দিয়া হবে। হোয়াটসঅ্যাপ এ এখন প্রজন্ত কোন বিজ্ঞাপন চালু করা হয় নি।

এখানে সিকিউর বা গোপনীয়তার তার ব্যবহার করা হয়েছে শক্তিশালী এনক্রিপশন ফিচার। হোয়াটসঅ্যাপ এ ব্যবহার করা কোন কোন ডেটা তাদের সার্ভার এর সেভ করে রাখেন না। হোয়াটসঅ্যাপ এক সাথে আপনি অনেক কয়েকটি ডিভাইস এ লগ ইন করতে পারবেন না। তবে আপনার ব্যবহার করা মেসেজ বা ডেটা গুলাকে ম্যানুয়ালি ব্যাকআপ করতে পারবেন। অনেক ভালো সিকিউরিটি দিতে হোয়াটসঅ্যাপ এসব ফিচার যুক্ত করেছে।

হোয়াটসঅ্যাপ এর ডেক্সটপ ভার্সন আছে। তবে আপনাকে এটি ব্যবহার করার জন্য মোবাইল ফোন এর অ্যাকাউন্ট সাথে পেয়ার করে নিতে হবে। অনেক মোবাইল অপেরাটর বাংলাদেশ এ শুধু হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করার জন্য কম খরচ এ ডেটা প্যাক অফার করে থাকে। তাই আমি বলতে পারি সিকিউরিটি এর জন্য হোয়াটসঅ্যাপ ভালো। 

ইমু অ্যাপ

ফ্রি কল এবং মেসেজ অ্যাপ হিসাবে এই ইমু অ্যাপ বাংলাদেশ সহ উপমহাদেশ এ বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কেননা এই অ্যাপ টি কম স্পীড এর ইন্টারনেট এ ভালোভাবে চালানো যায়। এই অ্যাপ টিতে আপনি আপনার ফোন নাম্বার দিয়ে লগ ইন করে নিতে পারবেন। আর আপনার ফোন এ কন্টাক্ট এ থাকা মানুষ গুলার সঙ্গে মেসেজ, ভয়েস কল,অডিও কল, ভিডিও কল এ কথা বলতে পারবেন। এমন কি আপনি ছবি পাঠাতে পারবেন আপনার পরিচিত মানুষ এর কাছে। এন্ড্রয়েড, উইন্ডোজ সকল ধরনের স্মার্ট ফোন এর জন্য এই ইমু অ্যাপ পাওয়া যাবে। 

ভাইবার অ্যাপ

ভাইবার হল একটি তাৎক্ষনিক বার্তা প্রেরক অ্যাপ। স্মার্ট ফোন এর জন্য এই অ্যাপ্লিকেশন টি যা মিডিয়া দারা বিকশিত হয়েছে। এই ভাইবার অ্যাপ এর মাধ্যমে আপনি বার্তা প্রেরক ছাড়াও ভিডিও এবং অডিও মিডিয়া বার্তা আপনি বিনিময় করতে পারবেন। 

আপনি কোন অ্যাপ ব্যবহার করবেন 

উপরের পোস্ট এ আপনি চারটি বিষয় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনি যদি ফ্রি তে যোগাযোগ করতে চান তাহলে আপনার জন্য ভালো হবে ফেসবুক মেসেঞ্জার অ্যাপ। আর আপনি যদি অল্প ডেটা খরচ করে অডিও কল, ভয়েস কল এবং ভিডিও কল করতে চান তাহলে আপনার জন্য ইমু ব্যবহার করা ভালো হবে। আর আপনার যদি থাকে ভালো কানেকশন তাহলে আপনি ব্যবহার করতে পারেন হোয়াটসঅ্যাপ। আর হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ, অডিও কল, ভিডিও কল এ ভালো সিকিউরিটি প্রদান করে। তাই আমার মতে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো হবে।

পোষ্ট ক্যাটাগরি: