কিডনি কত পয়েন্ট থাকলে ভালো: কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো

কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো, কিডনির পয়েন্ট কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়, একজন ছেলে অথবা মেয়ের কিডনির ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ কত থেকে কত হলে নিশ্চিন্ত থাকতে পারা যায়, আজকের টপিকে জানাবো এই সম্পর্কে বিস্তারিত। দেখুন এটা আমরা সবাই জানি যে, কিডনির কাজ হচ্ছে রক্ত থেকে বর্জ্য ও পানি ফিল্টার করা। কিন্তু বিভিন্ন কারণে কিডনির নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। আর কিডনির সমস্যাটি খুবই জটিল একটি রোগ হিসেবে আজকাল পরিচিত।

এর জন্য এটা জেনে নেওয়া জরুরী কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো। তো আপনি যদি কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো হয় এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর পেতে চান তাহলে আজকের আলোচনার সাথে থাকুন। পাশাপাশি কিডনি ভালো আছে কিনা তা বুঝতে অথবা কিডনিতে পাথর হলে করণীয় কাজ সমূহ কি সেসব জানতে আরো পড়ুন সাজেস্টক কৃত পোস্ট।

কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো

(toc) #title=(এক নজরে সম্পূর্ণ লেখা পড়ুন)

কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো?

মূলত কিডনির পয়েন্ট ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে নির্বাচন করা হয়। একজন ছেলে অথবা একজন মেয়ের কিডনি ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক পরিমাণ ভিন্ন হয়ে থাকে।

  • স্বাভাবিক নারীদের ক্ষেত্রে প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা থাকে ০.৫-১.১ মিলিগ্রাম।
  • স্বাভাবিক পুরুষের ক্ষেত্রে প্রতি ডেসি লিটার রক্তে এর মান ০.৬-১.২ মিলিগ্রাম।
  • একটা কিডনী যাদের নেই তাদের ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা প্রতি ডেসি লিটার রক্তে ১.৮ মিলিগ্রাম পর্যন্ত স্বাভাবিক।
  • কিশোরদের ক্ষেত্রে প্রতি ডেসি লিটার রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ০.৫-১.০ মিলিগ্রাম
  • শিশুদের ক্ষেত্রে রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ০.৩-০.৭ মিলিগ্রাম/ডিএল
  • প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে রক্তে ক্রিয়েটিনিন ৫.০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের চেয়ে বেশি হলে কিডনী ড্যামেজ হয়েছে বুঝা যায়।পুরুষের শরীরে ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক রেঞ্জ ০.৭ থেকে ১.৪ এবং নারীর ০.৬ থেকে ১.২ mg/dL। যখন এ মাত্রাটি ৬ থেকে ১০ mg/dL হয়ে যায়, বুঝতে হবে কিডনির ক্ষমতা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। এ স্বাভাবিক রেঞ্জটি রক্তে ক্রিয়েটিনিন টেস্ট করে বোঝা হয়।

আপনার কিডনির জন্য এরমধ্যে পয়েন্ট থাকা ভালো হবে। অনেকেই জানেন না ক্রিয়েটিনিন কি! তাদেরকে বলব ক্রিয়েটিনিন হচ্ছে একটি রাসায়নিক উপজাত, এটি সাধারণত টিস্যু ভাঙ্গানোর সময় উৎপন্ন হয়। তবে এই ক্রিয়েটিনিন মূলত প্রস্রাবের সাথে আমাদের শরীরের অভ্যন্তর থেকে বের হয়ে যায়। বের হওয়ার পূর্বে কিডনি থেকে ফিল্টার হয়ে অতপর বের হয় এই ক্রিয়েটিনিন।

আর তাই ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে এটা নির্বাচন করা সম্ভব হয় যে, একজন ব্যক্তির কিডনি কোন পয়েন্টে বা কোন অবস্থানে রয়েছে। তো যাই হোক আজকের এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো এবং আপনার কিডনি কোন পর্যায়ে রয়েছে। তবে এর পাশাপাশি যদি জানতে চান যে ডায়ালাইসিস করলে কিডনি ভালো হয় কিনা তাহলে সাজেস্টকৃত লিঙ্কে ভিজিট করুন।

মেয়েদের কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো?

ইতোমধ্যে জানা গিয়েছে একজন মহিলার কিডনি ক্রেটিনিনের পরিমাণ ০.৫ থেকে ১.১ মিলিগ্রাম স্বাভাবিক। অতএব আপনি যদি মেয়ে হয়ে থাকেন এবং আপনার কিডনির পয়েন্ট ০.৫ থেকে ১.১ এর মধ্যে হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে আপনি সুস্থ রয়েছেন। 

ছেলেদের কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো?

পুরুষের শরীরে অর্থাৎ ছেলেদের ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক ক্রিয়েটিনিন পরিসীমা ০.৬ থেকে ১.২ মিলিগ্রাম। অতএব আপনি ছেলে হয়ে থাকলে আপনার যদি ক্রিয়েটি নির্ণয়ের পরিমাণ ০.৬ থেকে ১.২ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে তাহলে ধরে নেওয়া যায় যে আপনার কিডনির পয়েন্ট ঠিকঠাক রয়েছে। তবে হ্যাঁ, বয়সের ওপর নির্ভর করে রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কম অথবা বেশি হয়ে থাকে। এর জন্য আমরা এখানে বয়স ভেদে ক্রিয়েটিনিন এর সাধারণ মাত্রা গুলি ছক আকারে সংযুক্ত করছি। 

কিডনি কত পয়েন্ট থাকে | ক্রিয়েটিনিন লেভেল কত | বয়স ভেদে ক্রিয়েটিনিন এর সাধারণ মাত্রা কত?

বয়স ভেদে ক্রিয়েটিনিন এর সাধারণ মাত্রাগুলো হচ্ছে–

  • ষোল বছর বয়সী বা তার বেশি বয়সের পুরুষদের জন্য ০.৮-১.৩ 
  • ১৬ বছর বয়সী বা তার বেশি বয়সেই মেয়েদের জন্য ০.৬ থেকে ১.১ এবং নবজাত থেকে 16 বছর ছেলে ও মেয়ে উভয়ের ক্রিয়েটিনিন এর সাধারন মাত্রা ০.২ বা তার অধিক। আর হ্যাঁ, জাতি ভেদে অর্থাৎ জাত ভেদে মূলত ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা ভিন্ন হয়ে থাকে।
রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা গড় রক্তে ক্রিয়েটিনিন
1.25 mg/d নন-হিস্পানিক কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ
1.01 mg/dL নন-হিস্পানিক কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা
1.16 mg/dL নন-হিস্পানিক শ্বেতাঙ্গ পুরুষ
0.97 mg/dL নন-হিস্পানিক শ্বেতাঙ্গ মহিলা
1.07 mg/dL মেক্সিকান-আমেরিকান পুরুষ
0.86mg/dL মেক্সিকান-আমেরিকান মহিলা

তো পাঠক বন্ধুরা, আশা করি ইতোমধ্যে আমরা যে ইনফরমেশন গুলো তুলে ধরেছি তার সহযোগিতায় আপনি কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো এ বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। এখন আসুন আরো জেনে নেই কিডনির রোগ গুলো কেন হয়ে থাকে, কিডনির পয়েন্ট কমানোর উপায় এবং কিডনির পয়েন্ট কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় ইত্যাদি এই সম্পর্কে বিস্তারিত।

কিডনির পয়েন্ট কমানোর উপায় | কিডনির পয়েন্ট ঠিকঠাক রাখার উপায়

কিডনির পয়েন্ট ঠিকঠাক রাখার একাধিক উপায় রয়েছে। এর জন্য সাধারণত স্বার্থকর জীবন যাপন করতে হবে একজন মানুষকে। নির্দিষ্ট কিছু উপায় বা কৌশল তুলে ধরার পূর্বে এটা জেনে নিন যদি কখনো আপনার কিডনির পয়েন্ট কমে যায় তাহলে সেক্ষেত্রে আপনার মাঝে কি কি লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। অতএব কিডনির পয়েন্ট কমে যাওয়ার লক্ষণসমূহ–

  • শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়া
  • মাথা ঘোরা অথবা ক্লান্তি ভাব
  • অতিরিক্ত দুর্বল অনুভব
  • ঘুমের সমস্যা
  • পেট ফুলে যাওয়া
  • বমি অথবা বমি বমি ভাব
  • ক্ষুধামন্দা ও হজমের সমস্যা দেখা দেওয়া
  • প্রায় সময় ঠান্ডা অনুভব করা
  • ঘনঘন প্রস্রাব করা
  • প্রস্রাবের ফেনা বা রক্ত দেখা দেওয়া
  • প্রস্রাবের রং অস্বাভাবিকভাবে পরিবর্তন
  • মুখে ধাতব স্বাদ
  • বেশি ক্রাম্প এবং হাত পা অথবা মুখে ফোলা ভাব অনুভব।

মূলত এই প্রত্যেকটি লক্ষণ প্রকাশ পায় যদি কিডনির পয়েন্ট কমে গিয়ে থাকে। তাই অবশ্যই লক্ষণগুলো মাথায় রাখুন এবং যদি এই সমস্যাগুলো ফেস করে থাকেন তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। আর হ্যাঁ, কিডনির পয়েন্ট যদি ঠিকঠাক রাখতে চান তাহলে পূর্বেই যে বিষয়গুলো মাথায় রাখার চেষ্টা করবেন সেগুলো হচ্ছে–

  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করবার
  • তরল খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়ার 
  • নিয়মিত ব্যায়াম করার
  • স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখবার এবং
  • পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি ধূমপান মদ্যপান এর অভ্যাস পরিত্যাগ করার

এছাড়াও ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া হুটহাট যে কোনো ঔষধ সেবন করার জন্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে কিডনির পয়েন্ট কমে গিয়ে থাকে। এ কারণে কিডনির পয়েন্ট ঠিক রাখার অন্যতম উপায় হচ্ছে যে কোন ঔষধ সেবনের ক্ষেত্রে অবশ্যই অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেটা সঠিক মাত্রায় সেবন করা। ব্যাস এটুকুই।

কিডনি কত পয়েন্ট হলে খারাপ | কিডনির পয়েন্ট কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়?

কিডনি কত পয়েন্টে থাকা ভালো ইতিমধ্যে আমরা সেইটা উল্লেখ করেছি। উল্লেখিত পয়েন্টের কম অথবা বেশি থাকা আমাদের জন্য ক্ষতিকর। আর তাই চেষ্টা করা উচিত কিডনির পয়েন্ট যেন ঠিকঠাক মাত্রায় থেকে থাকে। অনেকেই জানতে চান কিডনির পয়েন্ট কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়? তাদের প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে যখন কিডনির পয়েন্ট স্বাভাবিক মাত্রার থেকে বেশি পর্যায়ে পৌঁছে যাবে তখন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সঠিক সময় ডায়ালাইসিস করতে হয়। ডায়ালাইসিস করার মাধ্যমে মূলত শরীরের রক্ত শোধন করা যায়। যেটা আমাদের জন্য খুবই দরকারি।

তো যাই হোক, আরেকটি প্রশ্ন হচ্ছে কিডনির রোগ গুলো সাধারণত আমাদের মাঝে কোন কোন কারণে দেখা দিয়ে থাকে! এ কারণে কেন কিডনির রোগ হয় তার বিশেষ কিছু কারণ উল্লেখ করবো। যথা –

  • অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পেলে এবং ধূমপান বা মধ্যপানে আসক্ত থাকলে
  • পরিবারের ইতিহাস হঠাৎ ফিউচারে যদি কারো কিডনির সমস্যা থেকে থাকে 
  • শরীরের রক্তচাপ বেড়ে গেলে অথবা তলপেটে অতিরিক্ত ব্যথা অনুভব হলে
  • ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকলে
  • রক্তনালীর রোগে আক্রান্ত থাকলে
  • কিডনিতে পাথর জনিত সমস্যা দেখা দিলে অথবা কিডনির সংক্রমণের কারণে
  • কিছু কিছু ঔষধ সেবনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায়।

পরিশেষ

অতএব এতে থেকে এটা বোঝা যায়, যদি কিডনির পয়েন্ট ঠিকঠাক রাখতে চাওয়া হয় এবং সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর জীবন আশা করা হয় তাহলে একটি সুন্দর লাইফ স্টাইল মেইনটেইন করে চলা খুবই জরুরী। আশা করি কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো এই সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া সম্ভব হয়েছে আমাদের আজকের আলোচনার মধ্য দিয়ে। তো সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।

পোষ্ট ক্যাটাগরি: