সিস্ট কি টিউমার এবং সিস্ট হলে কি সমস্যা হয়

সিস্ট কি, টিউমার এবং সিস্ট হলে কি সমস্যা হয়, ওভারিয়ান সিস্ট কি এক ধরনের টিউমার? বলা যায় খুবই কমন একটা প্রশ্ন এটি। কেননা এখন বেশি অসংখ্যক মহিলারা সিস্ট এর সমস্যায় ভুগছেন। এটা এমন একটা রোগ যেটা ধীরে ধীরে জটিল পর্যায়ে চলে যায় এবং শরীরে নানাবিদ সমস্যার সৃষ্টি করে।

জানা গিয়েছে বর্তমানে মেয়েদের সবচেয়ে বড় শারীরিক সমস্যা হচ্ছে ওভারিয়ান সিস্ট। কিন্তু কেউ কেউ এটা সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক ওভারিয়ান সিস্ট এবং টিউমার এই দুইটার মধ্যে কি আদৌ কোন পার্থক্য রয়েছে, নাকি টিউমার এবং সিস্ট একই জিনিস!

সিস্ট কি টিউমার

আসুন আজকের এই আলোচনার মাধ্যমে সিস্ট কি টিউমার, নাকি সিস্ট এবং টিউমার আলাদা দুইটা জিনিস এ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। কেননা আজ আমরা সিস্ট কি? টিউমার এবং সিস্ট হলে কি সমস্যা হয় সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করব আপনাদের।

(toc) #title=(সুচিপত্র)

সিস্ট কি?

সিস্ট হচ্ছে একটা রোগের নাম। যা কোষের অনির্বাচিত একটি গোলকের পরিণত হয়। আবার বলা যায় সিস্ট হচ্ছে একটা আতঙ্কের নাম। যে কথাটা শুনলেই অধিকাংশ মানুষের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে ওভারিয়ান সিস্ট এর কথা সচরাচর অধিক বেশি শোনা যায়। তবে হ্যাঁ এটা যে শুধু মেয়েদের হয়ে থাকে এমনটা নয়। মেয়েদের ডিম্বা-শয়ে যেমন সিস্ট হয়ে থাকে ঠিক একইভাবে পুরুষদের শরীরেও সিস্ট এর আগমন ঘটতে পারে।

আরো পড়ুনঃ সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায়

টিউমার এবং সিস্ট হলে কি সমস্যা হয়?

সিস্ট কি ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের মস্তিষ্ক সাধারণত সিস্ট শব্দটি শুনলেই টিউমারকে তার চিন্তার মধ্যে নিয়ে আসে। কেননা বেশিরভাগ মানুষের চিন্তাধারা এমন যে সিস্ট হচ্ছে এক ধরনের টিউমার।

আবার কেউ কেউ এটা বিশ্বাস করে যদি কখনো কারো সিস্ট হয় তাহলে সেটা একপর্যায়ে টিউমার আকার ধারণ করে এবং পরবর্তীতে সেটা থেকে ক্যান্সারের আবির্ভাব ঘটে। তবে সত্যি কথা হচ্ছে এপর্যন্ত চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এটা ঘোষণা করেছেন যে প্রায় ৯০% ক্ষেত্রে বিনাইন অর্থাৎ ক্যান্সারহীন সিস্ট হয়ে থাকে।

তাই যারা সিস্ট কথাটি শোনার সাথে সাথে টিউমার ক্যান্সার এত কিছু ভেবে ফেলেন তাদেরকে বলব আপনাদের চিন্তাভাবনা এখানেই স্টপ রাখুন। সেই সাথে টিউমার এবং সিস্ট হলে সাধারণত কি কি সমস্যা হয় সেগুলো নিচের চার্ট পড়ে ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করুন এবং আপনার সমস্যাগুলোর সাথে মিলিয়ে নিন।

সিস্ট হলে যে সকল সমস্যা হয়

১। তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হয়

২। অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দেখা দেয়

৩। অনিয়মিত বমি হয়

৪। সিস্ট ফেটে গেলে তীব্র ব্যথা এবং র- ক্তপাত ঘটে

৫। যৌ- ন মিলনে অনেক বেশি ব্যথা অনুভব হয়

৬। প্রস্রাব এবং মলত্যাগের সময় প্রচন্ড সমস্যার সৃষ্টি হয়

টিউমার হলে যে সকল সমস্যা হয়

১। দীর্ঘদিন যাবত শুকনো কাশি থাকে এবং বুকে ব্যথা থেকে শুরু করে শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা দেখা দেয়

২। বমি বমি ভাব বা অতিরিক্ত বমির সমস্যা দেখা দেয়

৩। দৃষ্টিশক্তি ক্রমে কমতে থাকে

৪। শরীরে খিঁচুনি ভাব আসে এবং কখনো কখনো গা গুলোয়

৫। টিউমার জনিত স্থানটি অধিক বেশি বড় হয়ে যায় যেটা সচরাচর আমাদের চোখে পড়ে

৬। টিউমারে ব্যথা অনুভব হয় কখনো কখনো এবং এটি ধীরে ধীরে শরীরের যেকোন স্থানে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি করে।

আরো পড়ুনঃ সোরিয়াসিস রোগীর খাবার তালিকা

সিস্ট এবং টিউমার কি একই জিনিস?

সিস্ট এবং টিউমার এক জিনিস নয়। আর আপনি যদি মনোযোগ সহকারে সিস্ট এর সমস্যা এবং টিউমারের সমস্যাগুলো পড়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই এই দুইটি জিনিসের পার্থক্য করতে পারবেন। তবে হ্যাঁ আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরবো আলোচনার এ পর্যায়ে। যা থেকে এটা সুস্পষ্ট হবে যে সিস্ট এবং টিউমার এক জিনিস নয়।

সচরাচর আমরা ওভারিয়ান সিস্ট এর কথা শুনে থাকি এটা ইতোমধ্যে জানিয়েছি। পাশাপাশি আরো উল্লেখ করেছি, সিস্ট হলে সাধারণত কি কি উপসর্গ বা লক্ষণগুলো প্রকাশ পেয়ে থাকে। তবে আরো কয়েকটি বিষয় যদি লক্ষ্য করেন তাহলে ওভারিতে সিস্ট হয়েছে নাকি টিউমার সেটা একটু হলেও আন্দাজ করতে পারবেন আপনি।

কেননা সিস্ট মূলত খালি চোখে দেখা যায় না এবং ওভারিতে সিস্ট হলে আলাদা সমস্যা দেখা দেয়। অনেকে আবার এটাও ভাবতে পারেন ওভারিতে যদি টিউমার হয়ে থাকে সেটাও তো আর খালি চোখে দেখা যায় না! হ্যাঁ আপনার এ কথাটিও সত্যি।

তবে যদি ওভারিয়ান টিউমার হয়ে থাকে তাহলে তলপেটে বেশ ভারী অনুভব হয় এবং এর ফলে অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপর প্রেসার ক্রিয়েট হয়। আর যদি আপনার ওভারিয়ান সিস্ট হয়ে থাকে তাহলে আপনি তলপেটে ভারী অনুভব না করে বড় অন্যান্য সমস্যার সম্মুখীন হবেন। যেমন ধরুন:- দ্রুত মোটা হয়ে যেতে পারেন অথবা দ্রুত চিকন হয়ে যেতে পারেন, অধিক পরিমাণে চুল পড়তে পারে শরীরে এলার্জিজনিত সমস্যাও সৃষ্টি হতে পারে।

তাই যদি আপনার শরীরে এই লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় তাহলে দোটানায় না থেকে সরাসরি চিকিৎসকের কাছে যান এবং দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে নিন আপনার ওভারিতে সিস্ট হয়েছে নাকি টিউমার। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করুন। মনে রাখবেন সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ এবং সতর্কতা অবলম্বন জটিল রোগ থেকেও পরিত্রাণ এনে দিতে পারে এবং একটি মানুষ মৃ- ত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসতে পারে অতি সহজেই।

ওভারিয়ান সিস্ট কত প্রকার ও কি কি?

ওভারিয়ান সিস্ট কত প্রকার ও কি কি? খুবই আগ্রহমূলক প্রশ্ন এটি। তবে আপনি যদি এই সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে চান তাহলে এখনই ভিজিট করুন ওভারিয়ান সিস্ট কি এবং ওভারিয়ান সিস্ট দূর করার উপায় সম্পর্কিত আমাদের এই আর্টিকেলটি। কেননা ইতোমধ্যে আমরা ওভারিয়ান সিস্ট সম্পর্কিত আরেকটি আর্টিকেল আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছি।

এই আর্টিকেলটি থেকে আপনি জানতে পারবেন:- ওভারিয়ান সিস্ট কেন হয়? ওভারিয়ান সিস্ট কত প্রকার ও কি কি, সিস্ট হলে কি কি সমস্যা হয়, ওভারিয়ান সিস্ট দূর করার ঘরোয়া উপায় এবং ওভারিয়ান সিস্ট দূর করার হারবাল উপায় সমূহ সম্পর্কে এ টু জেড।

আরো পড়ুনঃ ওভারিয়ান সিস্ট দূর করার উপায়

জরায়ুতে সিস্ট হলে কি হয়?

জরায়ুতে সিস্ট হলে লক্ষণ হিসেবে উপরে উল্লেখিত উপসর্গগুলো দেখা দেয়। মানে তলপেটে হালকা ব্যথা হয় । কখনো কখনো সিস্ট ফেটে যাওয়ার ফলে তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা হয় এবং র- ক্তপাত ঘটে। যৌ- ন মিলনে অতিরিক্ত কষ্ট হয় এবং ঋতুস্রাবের সমস্যা দেখা দেয়।

সিস্ট হলে কি বাচ্চা হয় না?

খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্ন হচ্ছে সিস্ট হলে কি বাচ্চা হয় না! ওভারিয়ান সিস্ট এর সমস্যা থাকলে সেই সকল মহিলাদেরকে কি বন্ধ্যাত্ব বলা যায়? আমার ওভারিয়ান সিস্ট হয়েছে তাহলে আমি কি কখনো মা হতে পারব না?

তাদের প্রশ্নের উত্তরে বলব হ্যাঁ পারবেন। কেননা সিস্ট থাকলেও বাচ্চা হবে তবে এক্ষেত্রে বিশেষভাবে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে আপনাকে। কেননা যাদের ওভারিতে পলিসিটি রয়েছে তাদের মূলত কনসেপ্ট করতে বেশ কিছু সমস্যা হয়। তাই অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হয় সচরাচর। তবে হ্যাঁ যদি ওভারিয়ান সিস্ট এর সমস্যা অনেক বেশি পরিমাণে হয়ে যায় এবং ওভারি অর্থাৎ ডিম্বাশয় কেটে ফেলতে হয় সেক্ষেত্রে বাচ্চা হওয়ার নিশ্চয়তা থাকে না।

তাই আমরা সাজেস্ট করব যদি কখনো আপনার মাঝে ওভারিয়ান পলিসিস্ট এর কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় তাহলে দেরি না করে এই মুহূর্তে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া এবং সমস্যাগুলো খুলে বলা পাশাপাশি তাদের পরামর্শ মোতাবেক চলার চেষ্টা করা। আশা করি যদি আপনার মাঝে এই সমস্যাটি থেকে থাকে আপনি অতি শীঘ্রই সুস্থতা লাভ করতে পারবেন।

তো সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা সিস্ট কেন হয়ে থাকে? সিস্ট কি? টিউমার এবং সিস্ট হলে কি সমস্যা হয়? আশা করি আমাদের আলোচনার মাধ্যমে আপনার কাছে এটা সুস্পষ্ট। তো সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন পরবর্তীতে আবারও নতুন টপিকের নতুন কোন আলোচনায় আপনাদের সাথে কথা হবে। সবাইকে আল্লাহ হাফেজ।

পোষ্ট ক্যাটাগরি: