বাংলাদেশের সেরা মসজিদ - বাংলাদেশের সেরা ১০ মসজিদ
বাংলাদেশের সেরা মসজিদ - বাংলাদেশের সেরা ১০ মসজিদ — মসজিদ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস যার সুরক্ষার জন্য জিহাদের মতো ফজিলতপূর্ণ বিধানের প্রচলন ঘটানো হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি মসজিদ হচ্ছে আল্লাহর ঘর। সুতরাং যারা আল্লাহর ঘর নির্মাণ ও আবাদ করবে তারা আল্লাহর কর্মী তাদের প্রতিদিন স্বয়ং মহান আল্লাহ তায়ালা দান করবেন।
আমাদের বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) বলেছেন যখন তোমরা কোন মানুষকে দেখবে সে মসজিদের সাথে সম্পর্ক গড়েছে তখন তোমরা তার ঈমানের স্বীকৃতি দাও। এরপর তিনি এই আয়াত পাঠ করেন; নিঃসন্দেহে তারাই আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও আখিরাতের প্রতি এবং যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে ও যাকাত আদায় করে। (সূরা তাওবা)
তো প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলে আমি আপনাদেরকে দেখাবো বাংলাদেশের সবচাইতে ফেমাস বা বলতে পারি বাংলাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত পাঁচটি মসজিদ। যে ৫টি মসজিদ যদি দেখেন তাহলে আপনার এই পাঁচটি মসজিদে নামাজ পড়ার জন্য আগ্রহ জাগবে। আরেকটি বিষয় আপনাদেরকে অবগত করি মসজিদ আল্লাহর ঘর, আর প্রত্যেকটা মসজিদই সমান। তার মধ্যে বেশকিছু মসজিদ আমাদের বাংলাদেশ আছে যে মসজিদগুলো অত্যান্ত পরিমাণে ফেমাস।
তো সেসকল বিখ্যাত মসজিদের মধ্যে আজকের এই আর্টিকেলে ৫টী মসজিদকে আমি তুলে ধরার চেষ্টা করবো। চেষ্টা করবেন আজকের এই আর্টিকেলে দেখানো পাঁচটি মসজিদের মধ্যে যেকোনো একটি মসজিদে কমপক্ষে হলেও একদিন নামাজ আদায় করার জন্য। তো চলুন আর্টিকেলটি শুরু করিঃ
আরো পড়ুনঃ রমজান সম্পর্কে হাদিস
১। বায়তুল মোকাররম জামে মসজিদ
বাংলাদেশের সেরা মসজিদের মধ্যে আজকের আর্টিকেলের ১ নাম্বারের অবস্থান করছে বায়তুল মোকাররম জামে মসজিদ। বায়তুল মোকাররম জামে মসজিদ বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ। এই মসজিদটি ঢাকায় অবস্থিত এর স্থাপত্য অত্তান্ত দৃষ্টিনন্দন। পাকিস্তানের বিশিষ্ট শিল্পপতি লতিফ বাওয়ানি ও তার ভাতিজা ইয়াহিয়া বাওয়ানির উদ্যোগে এই মসজিদ নির্মাণের পদক্ষেপ গৃহীত হয়।
আব্দুল লতিফ ইব্রাহিম বাওয়ানী প্রথম ঢাকাতে বিপুল ধারণক্ষমতা সহ একটি গ্রান্ড মসজিদ নির্মাণের প্রকল্পনার কথা প্রকাশ করেন। 1959 সালে বায়তুল মোকাররম মসজিদ সোসাইটি গঠনের মাধ্যমে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। পুরান ঢাকা ও নতুন ঢাকার মিলনস্থলে মসজিদের জন্য জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। বিশিষ্ট স্থপতি টি আব্দুল হুসেন থারিয়ানিকে মসজিদ কমপ্লেক্সটির নকশার জন্য নিযুক্ত করা হয়।
পুরো কমপ্লেক্স নকশার মধ্যে দোকান, অফিস, লাইব্রেরী ও গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে 1960 সালের 27 শে জানুয়ারি এই মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এই মসজিদে একসঙ্গে প্রায় 40 হাজার মুসল্লী নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের প্রধান কক্ষ ৩দিকে বারান্দা দিয়ে ঘেরা। মেহারাবটি অর্ধবৃত্তাকারের পরিবর্তে আয়তাকার। এই অবয়ব অনেকটা পবিত্র কাবা শরীফ এর মতো হওয়ায় মুসলমানদের হৃদয়ে এই মসজিদটি আলাদা জায়গা করে নিয়েছে।
আরো পড়ুনঃ ২০২২ সালের রমজানের সময় সূচি
২। ২০১ গম্বুজ মসজিদ টাঙ্গাইল
বাংলাদেশের বিখ্যাত মসজিদের মধ্যে ২ নাম্বারে অবস্থান করছে ২০১ গম্বুজ মসজিদ টাঙ্গাইল। ২০১ গম্বুজ মসজিদ হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি গম্বুজ এবং দ্বিতীয় উচ্চতম মিনার বিশিষ্ট মসজিদ। এই মসজিদের নকশা করা হয়েছে ২০১ টি গম্বুজ ও ৯টি মিনার দিয়ে সজ্জিত একটি পূর্ণাঙ্গ মসজিদ কমপ্লেক্স। ২০১ গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার নগদা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামে অবস্থিত।
মসজিদটি মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে। এই কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মা রিজিয়া খাতুন। মসজিদটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। তাই অন্য কোথাও ভ্রমন না করে যদি আপনি অবসর সময়ে থাকেন তাহলে আপনি এই মসজিদটিতে ভ্রমণ করে নামাজ পড়ে আসার চেষ্টা করবেন।
৩। সাউথ টাউন জামে মসজিদ
বাংলাদেশের বিখ্যাত মসজিদের মধ্যে তিন নাম্বারে অবস্থান করছে সাউথ টাউন জামে মসজিদ। সাউথ টাউন জামে মসজিদ ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের বাইঘরের রাজেন্দ্রপুর সাউথ টাউন এলাকায় একটি দৃষ্টিনান্দনিক একটি মসজিদ।
বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের কর্ণধার মইনুদ্দিন এর উদ্যোক্তা। ৮ বিঘা জমির উপর মসজিদটি নির্মিত হয়েছে। সাউথ টাউনের এই মসজিদটি তৈরি করতে সময় লেগেছে প্রায় দুই বছর। একতলা মসজিদটিতে একসঙ্গে প্রায় সাড়ে 600 লোক জামাতে নামাজ পড়তে পারেন।
এতে প্রধান ফটক আছে তিনটি, দুই পাশে আছে আরও দুইটি, চারপাশে প্রচুর স্তরের জানালা তৈরি করে আলো ঢোকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই মসজিদের নান্দনিক দৃশ্য দেখার জন্য মানুষ ঢাকা থেকে ছুটে যায় কেরানীগঞ্জে। আপনি যদি এই মসজিদে কখনো নামাজ পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের সেরা ১০ দর্শনীয় স্থান
৪। বাগেরহাট ষাট গম্বুজ মসজিদ
বাংলাদেশের বিখ্যাত মসজিদের মধ্যে ৪ নম্বরে অবস্থান করছে ষাট গম্বুজ মসজিদ বাগেরহাট। ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ। মসজিদটির গায়ে কোনো অনুলিপিই নেই, তাই এটি কে নির্মাণ করেছিলেন বা কোন সময়ে নির্মাণ করা হয়েছিল সেই সম্বন্ধে সঠিক কোনাে তথ্য পাওয়া যায় না।
তবে মসজিদটির স্থাপত্য দেখলে এটি যে খান জাহান আলী নির্মাণ করেছিলেন সে সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ থাকেনা। ধারণা করা হয় তিনি পনেরেশো শতাব্দীতে এটি নির্মাণ করেন। এই মসজিদটি বহু বছর ধরে ও বহু অর্থ খরচ করে নির্মাণ করা হয়েছিল। পাথরগুলো আনা হয়েছিল ভারতের রাজমহল থেকে।
ঐতিহাসিকরা মনে করেন সাতটি সারিবদ্ধ গম্বুজ সারি আছে বলে এই মসজিদের সাত গম্বুজ এবং তা থেকে ষাট গম্বুজ নামে রূপান্তরিত হয়। আবার অনেক ঐতিহাসিকবিদ মনে করেন গম্বুজগুলো সাতটি প্রস্তর নির্মিত স্তম্ভের উপর অবস্থিত বলেই মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে ষাট গম্বুজ মসজিদ। আপনি যদি ষাট গম্বুজ মসজিদে কখনোও নামাজ পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন।
আরো পড়ুনঃ ছেলেদের ইসলামিক নাম অর্থসহ
৫। বেলাব বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ
বাংলাদেশের সেরা পাঁচটি বিখ্যাত মসজিদের মধ্যে ৫ নাম্বারের অবস্থান করছে বেলাব বাজার সেন্ট্রাল জামে মসজিদ। বেলাব বাজার জামে মসজিদটি প্রায় ৩০০ বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই মসজিদটির প্রথম প্রতিষ্ঠাতা এবং জমিদার দাতা হলো জনাব মাহমুদ ব্যাপারী। এই মসজিদটি যখন প্রথম নির্মাণ হয় তখনই এই মসজিদটি অত্র এলাকার অন্য মসজিদ থেকে নিম্ন কাঠামোই রূপান্তরিত হয়।
এই মসজিদটি প্রথম নির্মাণের সময় এর সাতটি গম্বুজ ছিলো। লোকমুখে শুনা যায় এই মসজিদের ভিতরে অলৌকিক ভাবে বা গাইবি ভাবে কোরআন তেলাওয়াত শোনা যেত। ফলে এই মসজিদটি ফজিলতের মসজিদ হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে।
মসজিদটি জন্মলগ্ন থেকেই জুম্মার নামাজে প্রচুর লোক হয় যা মসজিদের ধারণ ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। বর্তমান কাঠামোতে মসজিদটির ধারণক্ষমতার পাশাপাশি এই মসজিদটি নির্মাণ সকলকে মুগ্ধ করে। এই মসজিদটি বর্তমানে নরসিংদী জেলার অন্তর্গত বেলাব উপজেলার একটি দর্শনীয় মসজিদ।
প্রিয় দর্শক আজকের আর্টিকেল যে পাঁচটি মসজিদ সম্পর্কে বর্ণনা করলাম এই পাঁচটি বিখ্যাত মসজিদের মধ্যে আপনি কয়টা মসজিদে নামাজ পড়েছেন সেটি অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আর আপনার যখন হাতে অবসর সময় থাকবে তখন ভ্রমন না করে চেষ্টা করবেন আজকের আর্টিকেলে দেখানো এই পাঁচটি মসজিদের মধ্যে যেকোনো একটি মসজিদ ভ্রমণ করে নামাজ পড়ার জন্য। সকলে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, আল্লাহ হাফেজ।
0 Comments