ইউটিউব থেকে আয় কি হালাল
ইউটিউব থেকে আয় কি হালাল — আপনার এই প্রশ্নের উত্তর এক কথায় কিংবা একটি দিক বিবেচনায় রেখে দেয়া সম্ভবপর নয়। কারণ ইউটিউব থেকে আয় করার যেমন আছে অনেক পথ ও মাধ্যম ঠিক তেমনি ভাবে প্রত্যেকটি পথ এবং মাধ্যমের জন্যে আছে আলাদা আলাদা হুকুম।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা হালাল উপায়ে ইউটিউব থেকে আয় করার বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় মাধ্যম এবং সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করব। আশা করি আজকের এই ইউটিউব থেকে আয় কি হালাল সম্পর্কে আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা সকল তথ্য পেয়ে যাবেন এবং আর্টিকেলটি সবার জন্য উপকারী হবে। আজকের এই আর্টিকেলটিতে যা যা থাকছেঃ
পেজ সূচীপত্রঃ
ইউটিউব ইনকাম ও গুগল এডসেন্স
ইউটিউব থেকে আয় কি হালাল? যারা এই প্রশ্নটি করে থাকেন তাদের মধ্যে বেশিভাগ মানুষ মূলত ইউটিউব চ্যানেলে গুগল অ্যাডসেন্স ব্যবহার করে টাকা আয় করার বিষয় সম্পর্কে জানতে চান। ইউটিউবিং করে টাকা আয় করার সবচেয়ে সহজ এবং জনপ্রিয় মাধ্যম হলো গুগল অ্যাডসেন্স।
এছাড়াও ব্লগিং করে টাকা ইনকাম করার জন্য গুগল এডসেন্স খুবি বেশি জনপ্রিয়। গুগল বিভিন্ন কোম্পানির কাছে থেকে টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন যেমনঃ ওয়েবসাইট, প্রোডাক্ট ইত্যাদি গ্রহণ করে।
অতঃপর উক্ত বিজ্ঞাপনগুলোকে মনিটাইজেশন পাওয়া ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে প্রচার করে থাকে। কিন্তু এখন কথা হচ্ছে ব্লগ এবং ইউটিউব চ্যানেলে উক্ত যেসকল বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়ে থাকে সেগুলো কি ইসলাম সাপোর্ট করে?
তাই ইউটিউব থেকে আয় কি হালাল আপনারা এই সম্পর্কে জানার জন্য আজকের এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তাহলে চলুন জেনে নেই বিজ্ঞাপন হালাল নাকি হারাম।
আরও পড়ুনঃ ইউটিউবে কী কী বিষয়ে ভিডিও তৈরী করলে ভালো হবে
বিজ্ঞাপন কি হালাল - ইউটিউব থেকে আয় কি হালাল
ইউটিউব থেকে আয় কি হালাল? সেটা বোঝার জন্যে বিজ্ঞাপনের ধরণ এবং বিজ্ঞাপনের পদ্ধতি সম্পর্কে জানা আবশ্যক। আমরা যখন ইউটিউবে কোনো ভিডিও দেখি তখন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন চলে আসে। ওয়েবসাইট, প্রোডাক্ট থেকে নিয়ে টিভি, ফ্রিজ, ফ্যান আরও কত ধরনের বিজ্ঞাপন! এছাড়াও ইউটিউব ইউজার, চ্যানেল এবং নিশ ভেদে বিভিন্ন ধরনের অ্যাডও দেখানো হয়ে থাকে।
যেমনঃ প্রযুক্তি বিষয় ইউটিউব চ্যানেলের মাঝে বেশিরভাগ সময় প্রযুক্তি রিলেটেড বিজ্ঞাপন দেখানো হয়। মোবাইল রিভিউ বা কম্পিউটার রিভিউ চ্যানেলে মোবাইল, কম্পিউটার রিলেটেড ইত্যাদি বিষয়ে বিজ্ঞাপন দেখানো হয়ে থাকে বেশিরভাগ।
একই সাথে ব্যবহারকারীর অনলাইন অ্যাক্টিভিটি যদি টেকনোলজি সংক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে টেকনোলজি সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন তার সামনে চলে আসবে। কিন্তু ব্যবহারকারী যদি এডুকেশনাল সাইট কিংবা রিভিউ রিলেটেড সাইটে বেশি বেশি ভিজিট করে করে থাকে তাহলে উক্ত ব্যবহারকারীর সামনে সেই সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন দেখানো সম্ভাবনা অনেক বেশি।
মনে রাখা ভালো এই ভাবে কান্ট্রি ভেদে অ্যাড বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। একজন ইউজার কোনো একটি ওয়েবসাইট বাংলাদেশ থেকে বসে দেখলে উক্ত ব্যবহারকারীর সামনে বাংলাদেশি কোম্পানির প্রোডাক্ট কিংবা অ্যাড বেশি দেখানো হবে।
কিন্তু একই ওয়েবসাইট আমেরিকাতে থেকে বসে অন্য একজন ইউজার ভিজিট করলে তার সামনে ঠিক আমেরিকান কোন কোম্পানির অ্যাড বেশি দেখানো হবে। কিন্ত জেনে রাখা ভালো এই যে এত এতবেশি প্রকারের অ্যাড তার সবগুলো কিন্তু ইসলাম ধর্ম সাপোর্ট করেনা। আবার দেখা যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অ্যাড দেখানো মূল প্রোডাক্টটাই ইসলামের মতে হারাম জিনিসেরও হতে পারে।
যেমন ম-দ কিংবা ডে-টিং সাইটের লিংক কিংবা অ-শ্লীল কোনো মুভি সাইট বা অ-শ্লীল টিভি সিরিয়াল ইত্যাদি। আবার অনেক ক্ষেত্রে মূল প্রোডাক্টটি ইসলামের দৃষ্টিতে হালাল থাকলেও সেটা প্রদর্শন করার মাধ্যমটাও কিন্ত হারাম হতে পারে।
যেমনঃ আপনি অনেক সময় দেখে থাকবেন একটি সাবান, তেল কিংবা শ্যাম্পু অথবা শীতকালীন সময়ে মেরিল জাতীয় প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন দেখানোর সময়ে সুন্দরি মেয়েদের ছবি অ্যাড করে দেখানো হয়। এই ধরনের বিজ্ঞাপনের মূল প্রোডাক্টটি হালাল হলেও সেটা কিন্ত প্রদর্শনের সিস্টেম হারাম। তাই এই ধরনের বিজ্ঞানপটি ইসলামের দৃষ্টিতে হালাল হবেনা।
আনুমানিক হিসাব করলে বিজ্ঞাপনের প্রোডাক্ট এবং বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করার মাধ্যমগুলো হালাল হওয়ার অন্যান্য সকল শর্ত খুবই কম পরিমাণে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ফিলআপ হয়ে থাকে। আরেকটি সুবিধা হচ্ছে ইউটিউব, ওয়েবসাইটের জন্য হারাম বিজ্ঞাপনগুলোকে ব্লক করার সিস্টেম রয়েছে।
তাই ইউটিউব, ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গুগল অ্যাডসেন্স থেকে আয় করার পদ্ধতি হালাল হলেও বেশিরভাগ সময় দেখা যায় অনেকেই এই বিজ্ঞাপনগুলো বন্ধ করে না তাই অনেক সময় এই বিজ্ঞাপনগুলো দেখিয়ে আয় করাটা হারামই হয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফাই করার নিয়ম
ইউটিউব থেকে আয় কি হালাল
হালাল উপায়ে ইউটিউব থেকে আয় করার জন্য কি করা প্রয়োজন? হালাল উপায়ে ইউটিউব থেকে আয় করতে হলে আপনাকে অনেক কিছু করার প্রয়োজন হবে। তবে হ্যাঁ যদি আপনি একজন প্রকৃত মুসলিম এবং শুদ্ধ বুদ্ধির মানুষ হোন তাহলে আপনাকে তার জন্য তেমন কোনো কিছুই কঠিন হবেনা। নিচে ইউটিউব থেকে আয় কি হালাল বা ইউটিউব থেকে হালাল উপায় টাকা আয় করার জন্য আমরা কিছু সঠিক পদ্ধতি দিয়েছিঃ
ইউটিউব চ্যানেল তাত্ত্বিক এবং শিক্ষণীয় ভিডিও আপলোড দিন। এছাড়াও যেকোনো হালাল প্রোডাক্ট যেমনঃ মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ ইত্যাদি নিয়ে রিভিউ ভিডিও তৈরি করুন। সর্বপ্রথমে হালাল ভাবে টাকা ইনকাম না হলেও পরবর্তীতে সেখান থেকে অনেক বেশি পরিমাণে টাকা আয় করা সম্ভবপর হবে।
আপনার ইউটিউব চ্যানেলে এই সকল ভিডিওতে যখন ভালো পরিমাণে ভিউ হবে তখন ভিডিওতে এফিলিয়েট লিংক যুক্ত করে দিবেন। এছাড়াও বিভিন্ন ছোটোখাটো দোকান থেকেও তাদের দোকান এবং প্রোডাক্ট নিয়ে সেই সম্পর্কে রিভিউ কন্টেন্ট তৈরি করার জন্য অফার পেতে পারেন আপনি।
মনে রাখবেন যখন ইউটিউব ভিডিও তৈরি করবেন তখন অবশ্যই ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড ব্যবহার করবেন না। রিভিউ কন্টেন্ট তৈরি করার সময় সাধারণত ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ডের প্রয়োজন হয়না।
তবে যদি আপনার ভিডিওতে সাউন্ড ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় তাহলে বিভিন্ন নাশিদের ভোকাল ভার্সন রয়েছে আপনি চাইলে সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন। ইউটিউব থেকে হালাল উপায়ে টাকা আয় করার জন্য অন্যের ভিডিও কপি কিংবা ভিডিও চুরি করা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।
ইউটিউব এমন অনেক ধরনের ইমেজ এবং অন্যের ভিডিও কাটাছাঁট করে নিজের ভিডিওর মাঝে যুক্ত করে দেয়ার প্রবণতা অনেক বেশি দেখা যায়। কিন্ত এই কাজটি মোটেও করা উচিত নয়।
আপনি রিসার্চ করা তথ্য এবং নিজের তৈরি করা পিকচার ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। আপনি নিজেই পিকচার তৈরি করতে না পারলে ফ্রি পিকচারগুলোর ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার প্রয়োজনীয় পিকচারগুলো ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারেন। নিম্নে কয়েকটি ফ্রি ইমেজের ওয়েবসাইটের লিংক গুলো দেওয়া হয়েছে। Pixabay.com, Unsplash.com, Pexels.com।
যদি আমি এই ভাবে একটা একটা করে বলেই যাই তাহলে আর্টিকেলটি বিশাল হয়ে যাবে। সহজ ভাষায় ইসলাম সাপোর্ট করেনা এমন সকল বিষয়গুলোকে বাদ দিয়ে ভিডিও বানিয়ে ফেলুন। যেমনঃ অপ্রয়োজনীয় থাম্বনেল এবং টাইটেল এছাড়াও ট্যাগ ব্যবহার করা ও ভুল তথ্য দেয়া ইত্যাদি এগুলোকে এড়িয়ে চলুন। আপনি যদি এইভাবে কাজ করেন তাহলে দেখবেন একটি পর্যায়ে আপনি ইউটিউব থেকে হালাল উপায়ে আয় করতে পারবেন।
এছাড়াও আপনি যদি চান সম্পূর্ণ ভাবে ওয়েবসাইটে কিংবা ইউটিউব চ্যানেলে কোনো বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে টাকা আয় করবেন না। সম্পূর্ণ হালাল উপায়ে টাকা আয় করবেন সেটিও কিন্ত আপনি করতে পারবেন। নিম্নোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি ইউটিউব থেকে হালাল উপায়ে টাকা আয় করতে পারবেনঃ
আরও পড়ুনঃ ইউটিউব কেন অনলাইনে আয় করার সহজ উপায়?
হালাল উপায়ে ইউটিউব থেকে আয়
যদিওবা অনেকেই বলেন যে অ্যাডসেন্স থেকে ইউটিউবের মাধ্যমে ইনকাম হালাল এবং আবারর অনেকেই বলে হালাল নয়। কেননা আপনি চাইলে অ্যাডসেন্সের ড্যাসবোর্ড থেকে আপনি হারাম বিজ্ঞাপনগুলো বন্ধ করে রাখতে পারবেন।
আর যদি আপনি চান একেবারে গুগল অ্যাডসেন্স দিয়ে টাকা আয় করবেন না অন্য কোনো পন্থা অবলম্বন করে আয় করবেন তাহলে আপনি সেটিও করতে পারবেন। ইউটিউব থেকে আয় করার আরো অনেক বহু উপায় রয়েছে যেগুলো অবলম্বন করে আপনি ইউটিউবে থেকে হালাল উপায়ে আয় করতে পারবেন। আমরা নিচে সংক্ষেপে আকারে ইউটিউব থেকে হালাল ভাবে আয় করার বিষয়ে আলোচনা করেছি।
এফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয়
ইউটিউব চ্যানেল দিয়ে টাকা আয় করার আরেকটি জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার মাধ্যমে খুবই ভালোমানের আয় করা সম্ভব। এফিলিয়েট মার্কেটিং মানে হচ্ছে যেকোনো প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস নিয়ে রিভিউ কন্টেন্ট তৈরি করা।
অতঃপর ভিডিওর ডেসক্রিপশন বক্সে উক্ত প্রোডাক্টের লিংক সংযুক্ত করে দেওয়া। কোনো ভিজিটর যদি উক্ত লিংকে ক্লিক করে প্রোডাক্টটি ক্রয় করে তাহলে উক্ত মার্কেটার প্রোডাক্টটির একটি লভ্যাংশ পেয়ে যাবেন। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার মাধ্যমে হালাল উপায়ে আয় করা সম্ভব। কেবলমাত্র মার্কেটারকে সব সময় হালার প্রোডাক্ট এবং সার্ভিসের রিভিউ কন্টেন্ট লিখতে হবে।
স্পন্সরশিপ করে ইউটিউব থেকে আয়
ইউটিউব থেকে আয় করার আরেকটি সহজ পদ্ধতি হলো স্পন্সশিপ। যেকোনো কোম্পানি কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তাদের কোনো পণ্য অথবা সার্ভিসের বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্যে ভালো ভিউ এবং সাবসক্রাইব রয়েছে এমন ধরনের ইউটিউব চ্যানেল নির্বাচন করে থাকে।
সেই ইউটিউব চ্যানেলে তাদের প্রোডাক্ট সম্পর্কে কথা বলতে কিংবা তাদের প্রোডাক্টের অ্যাড যুক্ত করতে ইউটিউব চ্যানেলের মালিককে একটা মোটা অংকের টাকা পেমেন্ট করে থাকে। বিজ্ঞাপন গ্রহণ কিংবা প্রোডাক্ট প্রোমোট করার সময়ে হালাল প্রোডাক্ট এবং হালাল পন্থা অবলম্বণ করলে তাহলে ইউটিউবে স্পন্সরশিপ করে অর্জিত টাকাও আপনার হালাল হবে।
ইউটিউব চ্যানেল বিক্রি করে আয়
একটি ইউটিউব চ্যানেলে আপনি কয়েক বছর ধরে কাজ করার পরে উক্ত চ্যানেলটি ভালো দামে বিক্রি করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিও, সাবস্ক্রাইবার, ভিউস ইত্যাদি সকল দিক বিবেচনায় থাকতে হবে।
ইউটিউব চ্যানেলটিতে যদি আপনি হালাল কোনো টপিক নিয়ে কাজ করেন তাহলে সেটার বিক্রির টাকাও কিন্ত আপনার হালাল হবে। তার জন্যে সর্বপ্রথম থেকে আপনাকে মনে রাখতে হবে ইসলাম যেসকল বিষয় নিষিদ্ধ বা পরিহার করেছে সেগুলো জেনে বুঝে কাজ করতে হবে।
0 Comments