ইন্টারনেট কি? ইন্টারনেট ব্যবহারের সুফল ও কুফল

হাসিবুর
লিখেছেন -

ইন্টারনেট ব্যবহারের সুফল ও কুফল সম্পর্কে পরামর্শ — ইন্টারনেট হচ্ছে বিশ্বব্যাপী বৃহৎ কম্পিউটার নেটওয়ার্ক (Inter-nation Computer Network Service)। ব্যাক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সকল কিছু কম্পিউটার ইন্টারনেটের সাহায্য একজন অপর জনের সঙ্গে অতি দ্রুততার সাথে যোগাযোগ স্থাপন এবং তথ্য আদান প্রদান করা সম্ভব হয়। কথায় আছে যে, "বিজ্ঞান মানুষকে দিছে বেগ কিন্তু কেড়ে নিয়েছে সকলের আবেগ”। ইন্টারনেটের যেমন সুবিধা আছে ঠিক তেমনি আছে অসুবিধাও।

ইন্টারনেট ব্যবহারের সুফল ও কুফল

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী লাখো তরুণ যুবক, ইন্টারনেটের খারাপ দিক ব্যবহার করার কারণে তাদের সুন্দর যৌবনকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে। নিচে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুফল ও কুফল আলোচনা করা হলো।

ইন্টারনেট ব্যবহারের সুফল | ইন্টারনেটের সুবিধা সমূহ

ইন্টারনেট ব্যবহার করার মাধ্যমে আমরা নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকি। যেমন-

১। ইন্টারনেটের সুফল এর একটি উহদারণ হচ্ছে একটি নিউজ ওয়েবসাইট "তথ্য" অথবা "সংবাদ" প্রদানকারী সংস্থা। অনলাইন নিউজ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দেশ এবং বিদেশের প্রতিদিনের খবর ঘরে বসে থেকে ইন্টারনেটের সাহায্য মোবাইল অথবা কম্পিউটারের মাধ্যমে অনায়াসেই জানতে পারি।

২। গবেষণা এবং লেখাপড়ার ক্ষেত্রে সবথেকে বেশি দরকার হয়ে থাকে যথার্থ বই। বিশেষ করে গবেষণাধর্মী বইয়ের জন্য অনেকেই বিদেশ থেকে বই কোনো না কোনো মাধ্যমে বই আনার প্রয়োজন হয় অথবা বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। ইন্টারনেট প্রযুক্তির কারণে কম্পিউটারের কীবোর্ডে চাপ দিয়ে বিশ্বের যেকোনো লাইব্রেরির বই পড়া সম্ভব হয় বা রেফেরেঞ্জে জানা যায়।

৩। ওয়েব ব্রাউজারের কমার্স অপশনটির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রোডাক্ট কেনাকাটার অর্ডার দেওয়া যায় এবং প্রোডাক্টের অর্ডার নেয়া যায়। এক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অন্য প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় বাণিজ্য সম্পর্কিত যেকোন ধরনের লেনদেন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়।

৪। জটিল কোন মামলা মোকদ্দমার ক্ষেত্রে মানুষ আইনের পরামর্শ অথবা আলোচনার জন্যে বিদেশের আইনজ্ঞদের শরণাপন্ন হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে আর সেটির প্রয়োজন হয়না। এখন ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেকোনো পরামর্শ নেয়া সম্ভব হয়।

৫। যেকোনো স্থানের যেমন- ভ্রমণ স্থানের আবহাওয়া, রিজার্ভেশন, থাকার জন্য হোটেল, ট্রেনের টিকিট, বিমানের টিকেট বুকিং সহ সকল কিছু এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা সম্ভব হয়।

৬। ইন্টারনেট ব্যবহার করার মাধ্যমে আমরা ঘরে অথবা বাইরে, যেকোনো জায়গাতে বসে থেকে উন্নত বিশ্বের চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ পেতে পারি।

৭। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন- ফেইসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার, ভাইবার ইত্যাদি অ্যাপসের মাধ্যমে খুবই সহজেই আমরা একজন আরেকজনের সাথে ছবি, ভিডিও অর্থাৎ যেকোন তথ্য আদান-প্রদান করতে পারি।

৮। ইমেইল ব্যবহার করার মাধ্যমে খুবই সহজেই যেকোনো নিউজ পাঠানো যায় বা যেকোনো নিউজ গ্রহন করা যায়।

ইন্টারনেটের অসুবিধা গুলো কি কি |  ব্যবহারের কুফল | অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের কুফল

ইন্টারনেট ব্যবহারের সুফল এর সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবহারের কুফল দিকও আছে, যা সবার জন্য বর্জনীয়। বিশেষ করে কিশোর এবং যুবকদের জন্য অবশ্যই এটি বর্জনীয়। ইন্টারনেট ব্যবহারের কুফল দিকগুলো হচ্ছে –

১। ইন্টারনেট ব্যবহার করে মানুষ বর্তমানে নানান ধরনের ক্রাইম করেই যাচ্ছে, যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি হতেই চলছে।

২। ইন্টারনেট ব্যবহার করার মাধ্যমে, মানুষ নানান রকম মিথ্যা কথা এবং নানা ধরনের বিষয় নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে।

৩। অনলাইন কেনাকাটায় মানুষকে ধোঁকা দেয়া ও প্রতারণা করা হচ্ছে এই ইন্টারনেট ব্যবহার করার মাধ্যমে।

৪। ইন্টারনেট ব্যবহার করার মাধ্যমে বর্তমানে যুবক যুবতীরা বিভিন্নভাবে পর্নোগ্রাফির ছবি আদান-প্রদান করার মাধ্যমে নিজেকে অশ্লীল এবং খারাপ কাজে লিপ্ত করছে।

৫। ছোট ছেলে-মেয়েরা ইন্টারনেটে বসে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন ধরনের গেমস ডাউনলোড করে গেম খেলছে এবং সময় অপচয় করছে।

৬। খারাপ এবং সন্ত্রাসী সকল কর্মকাণ্ডে জঙ্গিরা ইন্টারনেট ব্যবহার করার মাধ্যমে অপহরণ, গুম, খুন, হুমকি ইত্যাদি নানান রকম ঘটনা সংঘটিত করছে।

৭। কম্পিউটারের বিভিন্ন ডাটা, পাসওয়ার্ড তথ্য সবকিছু চুরি করা হয়ে থাকে ইন্টারনেট ব্যবহার করার মাধ্যমেই।

৮। ইন্টারনেট ব্যবহার করার ফলে মানুষ খুনের মতো জঘন্য খারাপ কাজ করার জন্য মানুষ একটুও পিছপা না হয়ে আগ্নেয়াস্ত্র, শক্তিশালী বোমা ইত্যাদি বানিয়ে ফেলছে।

৯। কোনো ব্যক্তির নামে কিচ্ছা কল্পকাহিনী অথবা মনগড়া কাহিনী, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মত কথা অথবা যেকোনো কিছু লিখেন, ব্লগ বা ফেসবুক অথবা টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়া সাইট ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও পাবলিশ হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে।

১০। ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য নানান রকমভাবে মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মেগাবাইট কিনার কারণে।

১১। প্রতিনিয়ত মানুষ অধিক পরিমাণে সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্কের ওপরে নির্ভরশীলতা মানুষকে সত্যিকারের যোগাযোগের অনুভূতিকে হ্রাস করে দিচ্ছে। ইন্টারনেটের ব্যবহারকারীরা এটাকেই সত্যিকারের সম্পর্ক ভাবতে শুরু করছে।

১২। ইন্টারনেট ব্যবহার মাধ্যমে খেলাধুলা, বাইরে ঘুরে বেড়ানো, ইচ্ছা ও আকাঙ্খা কমে মানুষের সাথে মেলামেশার দক্ষতা কমে যাচ্ছে। যার ফলে কিছু কিছু মানুষের মাঝে এখনি মানসিকভাবে হতাশায় ভোগার সম্ভাবনাও দেখা দিচ্ছে।

১৩। "চেরোনিবাল ভাইরাস" নামের একটি "ভাইরাস" বছরের একটা নির্দিষ্ট দিকে কম্পিউটারে আক্রমণ চালিয়ে পুরো বিশ্বের লাখ লাখ কম্পিউটারকে অকেজো বা নষ্ট করে দিচ্ছে।

ইন্টারনেট প্রযুক্তির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ | ইন্টারনেট ব্যবহারের সুফল ও কুফল সম্পর্কে পরামর্শ

সকল দিকের যেমন ভালো দিক আছে, ঠিক তেমনি আছে কিছু খারাপ দিক। সবকিছুর মতো প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেটেরও আছে কিছু খারাপ দিক। সব অভিভাবকদের দায়িত্ব ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তির ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে শিশু-কিশোরদেরকে রক্ষা করা। এই প্রসঙ্গে কিশোর বয়সীদের থেরাপিস্ট ও শিক্ষক "জো ল্যাংফোর্ড" বলেন,

"কোনো দায়িত্ববান পিতামাতা গাড়ির চাবি সন্তানের হাতে দিয়ে গাড়ি চালানো কখনোই শিখতে বলবেন না। ঠিক আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহার ক্ষেত্রেও এটি করা উচিত না।" গাড়ির মতো করে এই ক্ষেত্রেও আমাদের অর্থাৎ সকল পিতামাতার দায়িত্বশীল ও বিচক্ষণ হতে হবে, তাদের মাঝে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার পরিপক্বতা", দায়িত্বশীলতা এবং ভালো বিচারক্ষমতা সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক পিতামাতা তাদের সাথে থাকতে হবে।

সম্প্রতি সময়ে প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট ম্যাশএবল একটি প্রতিবেদনে শিশু-কিশোরদের অনলাইন টেকনোলজি থেকে রক্ষার জন্য বেশ কয়েকটি পরামর্শ প্রদান করেছে।

প্রতিবেদনের আলোকে জেনে নেই সেই গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শগুলি

গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শগুলো হচ্ছে-

১। কোন কোন ওয়েবসাইট এবং কোন কোন অ্যাপ আপনার সন্তানরা ব্যবহার করছে সেগুলো সম্পর্কে জানুন এবং তাদেরকে এমন সামাজিক গেমস খেলতে উৎসাহিত করুন, যেখানে মতবিনিময় ও আলোচনা করার সুযোগ থাকবে।

২। নতুন নতুন টেকনোলজির সাথে তাল মিলিয়ে চলুন, নিরাপদ ভাবে ব্রাউজিং করুন আর সে সম্পর্কে আপনার সন্তানকেও জানিয়ে দিন। পুরনো ফিচারের পরিবর্তে নিজেও নতুন সকল ফিচার ব্যবহার করার চেষ্টা করুন এবং আপনার সন্তানকেও নতুন নতুন সকল ফিচারের সুবিধা সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করুন এবং সেগুলো ব্যবহার করতে বলুন।

৩। যদি আপনি মনে করেন যে, আপনার সন্তান এখনো অনেক ছোট অথবা মৌলিক ভালো-মন্দ বোঝার মতো জ্ঞানবুদ্ধি এখনো তার হয়নি, তবে "ফিল্টারিং" সফটওয়্যার ব্যবহার করুন। বিভিন্ন অ্যাপ এর ব্যবহার সীমাবদ্ধ অথবা নির্দিষ্ট করে দিন।

৪। আপনার সন্তান যদি ভুল করলে, তবে সে বিষয়ের খারাপ দিক সম্পর্কে তাকে বুঝিয়ে বলুন, সে জিনিসটি তার জন্যে কতটুকু ক্ষতিকর সেটা তুলে ধরুন।

৫। বাসায় নিরাপদ ব্লগগুলোকে ব্যবহার করুন, নিজে সচেতন থাকুন নানান বিষয়ে, আর ব্যবহার করুন বিভিন্ন ইন্টারনেট টুলস এবং সন্তানদেরকে সচেতন থাকতে শিখান।

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. explore more
Ok, Go it!