কুকুর কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়

কুকুর কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়? কুকুরের কামড় বিপজ্জনক ও যন্ত্রণাদায়ক। এর ফলে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর দেহে জলাতঙ্ক রোগ দেখা দেয়। জলাতঙ্ক রোগের কারণে সারাবিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৫৯০০০ এবং বাংলাদেশে ২-৩ হাজার মানুষের মৃ ত্যু ঘটে। বিশ্বের জলাতঙ্কজনিত মৃ ত্যুর বেশিরভাগ কিন্ত এশিয়ায়ই ঘটে।

কুকুর কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়

দুর্ভাগ্যবশত এই রোগের বেশিরভাগ শিকার শিশুরা যারা সংক্রামিত কুকুর দ্বারা আক্রান্ত হয়। এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব কুকুর কামড়ালে কতদিনের মধ্যে টিকা দিতে হয় বা কুকুর কামড়ালে কত দিনের মধ্যে ভ্যাকসিন নিতে হবে। আর ক্ষতস্থানের যত্ন কিভাবে নিতে হয়? এর প্রতিরোধে কি কি করা যায়? কুকুর ছাড়াও আর কোনও প্রাণীর কামড়ে এমন হয় কি না?

এ কথা আশ্চর্যজনকভাবে সত্য যে রাস্তার কুকুরের চেয়ে পোষা কুকুরের কাছ থেকে একজন ব্যক্তির কামড় খাওয়ার সম্ভাবনা বেশি!এজন্য আমাদের আগে থেকেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ। চলুন তাহলে এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেইঃ

(toc) #title=(এক নজরে সম্পূর্ণ লেখা পড়ুন)

কুকুরে কামড়ালে কি হয়?

কুকুরে কামড়ালে কি হয়

কুকুরে কামড়ালে “জলাতঙ্ক” রোগ হয়। জেনে রাখা ভালো কুকুর ছাড়াও বিড়াল, বাদুর, বানর, বেজি, শেয়ালের কামড় থেকেও এই রোগ হতে পারে। শুধু কামড় নয় নখের আঁচড় ও লালা থেকেও জলাতঙ্ক হয়। তবে সব কুকুর কামড়ালেই জলাতঙ্ক হবে এমনটা নয়। কারণ এই রোগ সৃষ্টির কারণ র‍্যাবিস নামক একটি ভাইরাস।

এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া কুকুর বা অন্য প্রাণীর দ্বারা মানুষ আক্রান্ত হলে তখনই জলাতঙ্ক হতে পারে। জলাতঙ্ক ছাড়াও ধনুষ্টংকার বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণও ঘটে। জলাতঙ্ক রোগকে কিন্ত র‍্যাবিসও বলে। যার অর্থ “Madness” বা পাগলামি। এই রোগ হলে রোগীকে পাগলামি করতে দেখা যায়। কারণ র‍্যাবিস রোগে প্রধানত স্নায়ুটিস্যু ও ব্রেইন আক্রান্ত হয়। যার ফলে রোগী পাগল হয়ে যায়।

আর সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো এই রোগের লক্ষণ দেখা যাওয়ার ৪/৫ দিনের মধ্যেই রোগীর মৃ ত্যুর সম্ভাবনা থাকে। এজন্য জলাতঙ্ক রোগ হওয়ার আগেই এর প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা উত্তম।

আরো পড়ুনঃ চিকেন পক্স হলে কি গোসল করা যাবে

কুকুরে কামড়ালে কতদিনের মধ্যে জলাতঙ্ক হতে পারে?

কুকুরে কামড়ালে ১৫ দিন থেকে ৩০ দিনের মধ্যে জলাতঙ্ক দেখা দিতে পারে। আর লক্ষণ দেখা যাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে।

তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিরল ঘটনা দেখা যায়। কুকুরের কামড়, আঁচড় বা মানব দেহের গভীর ক্ষত জায়গায় প্রানীর লালা লাগার পরে কয়েক মাস বা বছরেও লক্ষণ প্রকাশ পায় না। পরে হঠাৎ করেই লক্ষণ গুলো দেখা যায় এবং রোগীর মৃত্যু ঘটে। এজন্য কুকুর কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয় সেসব বিষয়ে আমাদের জানা দরকার।

জলাতঙ্কের লক্ষণ ও ফলাফল

জলাতঙ্ক হলে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায় -

  • ২/৩ দিন জ্বর হতে থাকে। সাথে মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, খাবারে অরুচি, দূর্বলতা,আক্রান্ত অংশ বা ক্ষতস্থানে ব্যাথা, চুলকানি ও জ্বালাপোড়া হয়।
  • এরপর ৪ থেকে ৭ দিনের মধ্যে রোগীর মাঝে পাগলামি দেখা যায়। অনিদ্রা, কনফিউশন, কোনও জিনিস কামড় দিতে চাওয়া এসব করতে দেখা যায়। যেকোন কিছু কামড়াতে চায়।
  • পানি খাওয়ার জন্য ছটফট করলেও পানি কাছে আসলেই বা দেখলেই ভয় পায়। কারণ এরূপ রোগীর কণ্ঠনালি, গলা ও বুকে মাসকুলার সংকোচনের জন্য তীব্র ব্যাথা হয়। ফলে পানি পান করতে বা স্পর্শ করতে ভয় পায় এজন্য এই রোগের নাম জলাতঙ্ক।
  • এরপর রোগীর শরীর আস্তে আস্তে অবশ হয়ে যায়। পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যায়।
  • সর্বশেষ মৃ ত্যু ঘটে।

জলাতঙ্ক থেকে বাঁচতে করণীয় কি?

  1. জলাতঙ্ক থেকে বাঁচতে হলে প্রথমে কামড় বা আঁচড় লাগা ক্ষতস্থানকে সাথে সাথে ধুতে হবে। পানির প্রবাহ যেখানে বেশি (যেমন ট্যাপ ছেড়ে বা টিউবওয়েলের নিচে) সেখানে ক্ষতস্থান রেখে ১০-১৫ মিনিট ধুতে হবে।
  2. সাথে কাপড় কাচা সাবান দিয়ে ভালো করে ঘষতে হবে যেন ফেনা তৈরি হয়। এই ফেনা ক্ষতস্থানের জীবানু নাশ করতে সাহায্য করে।
  3. সাবান দিয়ে ধোয়ার পর যদি হাতের কাছে থাকে তবে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্রবণ দিয়ে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করতে হবে। তারপর ক্লোরহেক্সিডিন অথবা পোভিডোন আয়োডিন দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে।
  4. কোনও সুগন্ধি সাবান, মলম, ব্যান্ডেজ লাগানো যাবে না। কারণ ব্যান্ডেজ লাগিয়ে ঢেকে রাখলে ক্ষতস্থানের জীবানু ধ্বংস হয় না। বলা হয়ে থাকে এভাবে ধোয়ার ফলে ৭০%-৮০% পর্যন্ত জলাতঙ্কের জীবানু ধ্বংস করা সম্ভব।
  5. এরপর নিকটস্থ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ পরবর্তী চিকিৎসা হলো টিকা নেওয়া।
  6. সেই সাথে আরেকটি করণীয় হলো আক্রান্ত ব্যক্তির ভীতি দূর করতে হবে।
  7. কামড় দেওয়া কুকুর যাতে পরপর আরও কাউকে কামড়াতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে
  8. কখনও ক্ষতস্থান কাটা বা পোড়ানো যাবে না, এতে ইনফেকশন হতে পারে।
  9. বরফ লাগাবে না কারণ ফ্রস্ট বাইট হতে পারে।
  10. কুকুরটাও যদি র‍্যাবিস আক্রান্ত হয় তবে প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে মেরে ফেলতে হবে।

কুকুর কামড়ালেই কি টিকা নিতে হবে? কুকুর কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়

কুকুর কামড়ালেই কি টিকা দিতে হয়? কুকুর কামড়ালে কতদিনের মধ্যে টিকা নিতে হয়? এই বিষয়টা একটু জটিল। তবে ঝুঁকি না নেওয়া ভালো। কারণ আগেও বলেছি র‍্যাবিস ভাইরাস আক্রান্ত প্রাণী বা কুকুর কামড়ালেই জলাতঙ্ক হয়। অন্যথায় হয় না।

এজন্য সম্ভব হলে যেই কুকুরটি কামড়েছে সেটিকে নজরে রাখতে হবে। যদি ও অসুস্থ হয় অর্থাৎ পাগলামি করে তখন একে ১০ দিন নজরে রাখতে হবে। আর রোগীকে সাথে সাথে অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টিকা নিতে হবে

আর যদি ১০ দিনেও কুকুরটির অসুস্থতা প্রকাশ না পায় তখন টিকা না নিলেও হয়। শুধু ক্ষতস্থানটি জীবানুনাশক করলেই হয়। কিন্তু সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

আর যদি অচেনা কুকুর হয়, কামড়ানোর আগে ও পরে কুকুরটির পরিচয় বা সন্ধান না মিলে তখন দ্বিধাদ্বন্দে না ভুগে দ্রুত পোস্ট এক্সপোজার টিকা নিয়ে নিন। আর একবার টিকা নেওয়ার পর যদি আবারও কুকুরের কামড় বা আঁচড়ে আক্রান্ত হয় তাহলেও কিন্তু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

জলাতঙ্ক টিকার দাম ও ডোজের পরিমাণ

জলাতঙ্ক টিকা

জলাতঙ্ক টিকার দাম নেই। কারণ এটা সরকারিভাবেই ফ্রী। স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে জলাতঙ্ক টিকা বিনামূল্যেই দেওয়া হয়। তবে বেসরকারি ভাবে কেউ দিলে সেক্ষেত্রে নির্ধারিত দামে টিকা দিতে হবে।

এক এক কোম্পানির টিকার দাম এক এক রকম। এগুলোর প্রতি ডোজের দাম ৫০০-৭০০ টাকার মধ্যে হতে পারে। যারা কখনও জলাতঙ্ক টিকা নেননি তাদের ক্ষেত্রে আক্রান্ত হলে ৫ টি ডোজ গ্রহণ করতে হয়। ০, ৩, ৭, ১৪ ও ২৮তম দিন। অর্থাৎ আক্রান্ত হওয়ার দিন থেকে ০ তম দিন ধরে এভাবে টিকা নিতে হবে।

আরো পড়ুনঃ জ্বরের এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেট এর নাম ও দাম কত জেনে নিন

জলাতঙ্ক টিকার মেয়াদ কতদিন

কুকুরের কামড় বা আঁচড় লাগার পরে টিকা নিয়ে সুস্থ হয়ে গেছে এমন অসংখ্য রোগী আছে। আবার সঠিক সময়ে টিকা না নেওয়ায় মৃত্যুর ঘটনাও রয়েছে। তাই কুকুরের কামড় বা আঁচড় না লাগাই ভালো।তারপরও আক্রান্ত হলে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

জলাতঙ্ক টিকা একবার নেওয়ার পর আবার যদি কুকুরে কামড়ায় তাহলে কি টিকা নিতে হবে? এর উত্তর হচ্ছে হ্যা দিতে হবে। তবে সেটা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। কারণ কামড় দিলে ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করতেই পারে।

জলাতঙ্ক টিকার মেয়াদ কতদিন থাকে তাও জানতে চায় অনেকে। আসলে জলাতঙ্কের জন্য নেওয়া টিকা মানবদেহের ধরণ ও টিকা কতটা শরীরে কার্যকর হয় সেটার উপর নির্ভর করে। অনেকে বলেন ২ বছর টিকার কার্যক্ষমতা থাকে। কিন্তু আসল কথা চিকিৎসক বলতে পারবেন।

লেখকের শেষকথা

কুকুর কামড় থেকেই ৯০% এরও বেশি জলাতঙ্ক রোগের ঘটনা ঘটে। এজন্য আমাদের অবশ্যই এই ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। বাড়িতে কুকুর পুষলে প্রথমেই কুকুরটিকে র‍্যাবিস প্রতিরোধক টিকা দিতে হবে। এছাড়াও এলাকার কুকুরগুলোকেও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় পশুহাসপাতালের কর্মীদের দিয়ে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

কারণ রাস্তায়ও অসংখ্য কুকুর ঘোরাফেরা করে যেগুলোর পরিচয় ও রোগের অবস্থা অজানা। তারপরেও কুকুরের কামড়, আঁচড় বা লালা দিয়ে আক্রান্ত হলে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। সাবান দিয়ে ক্ষতস্থান ধোয়া, টিকা দেওয়া ইত্যাদি। আজকের আর্টিকেলে কুকুর কামড়ালে কতদিনের মধ্যে টিকা দিতে হয় সেই বিষয়েই জানানো হয়েছে।

Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার পুর্বে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।(alert-success)

পোষ্ট ক্যাটাগরি: