Technical Care BD https://www.technicalcarebd.com/2022/04/joubon-dhore-rakhar-upay.html

যৌবন ধরে রাখার উপায়

যৌবন ধরে রাখার উপায় — হয়তোবা আপনি আপনার বয়স বেড়ে যাওয়া নিয়ে অনেক চিন্তিত, কিংবা চাইছেন আপনার যৌবন আরো বেশ কিছুদিন ধরে রাখতে। মোটকথা সকলেই আমরা যৌবন ধরে রাখতে চাই। মনের বয়স না হয় নাই বাড়লো, কিন্তু শরীরের বয়স তো প্রকৃতির নিয়মেই বাড়তেই থাকবে। বয়স আটকানোর জন্য আর তো কোনো উপায় নেই।

যৌবন ধরে রাখার উপায়

অর্থাৎ বয়স বাড়ার সাথে সাথে চেহারায় আসা পরিবর্তন গুলোকে তো আটকানো মুখের কথা নয়। যৌবন ধরে রাখার জন্য দরকার নিয়ম মেনে কিছু রুটিন অনুসরণ করা। তাহলে ৪০ বছর বয়সে হয়তো আপনাকে কুড়ির মতো লাগবে না, তবে অকালে বুড়িয়ে যাওয়াও আপনাকে গ্রাস করতে পারবে না।

কিছু কিছু নিয়ম এবং সঠিক খ্যাদাভাসের মাধ্যমে যৌবনকে আরো বেশি দীর্ঘায়িত করার উপায় রয়েছে। অর্থাৎ যৌবন ধরে রাখার জন্য আপনার খাবার তালিকায় রাখতে হবে কিছু স্বাস্থ্যকর খাবার এবং প্রয়জব কিছু নিয়ম কানুন। চলুন তাহলে জেনে নেই কোন কোন খাবার রয়েছে যা আপনার বয়সকে আটকে দিতে পারে। যৌবন ধরে রাখার উপায় সম্পর্কে জানতে লেখাটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

আরো পড়ুনঃ কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

যৌবন ধরে রাখার উপায়

১। যৌবন ধরে রাখার জন্য মূল মন্ত্র হচ্ছে সুস্থ, নির্মেদ শরীর। আর সেজন্য হাঁটাহাটি করার কোনো বিকল্প নেই। নিয়মিত অন্তত ৩০ মিনিট সময় ধরে হাটাহাটি করুন। মোবাইল ফোনে গান শুনতে শুনতে হাঁটাহাটি না, ঘড়ি ধরে একেবারে ব্রিস্ক ওয়াকিং। 

হাঁটাহাঁটি করার কারণে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ভালোভাবে হবে, ফলে হার্ট অনেক ভালো থাকবে। প্রতিদিন হাঁটাহাঁটি করার ফলে নিয়ন্ত্রণে থাকবে ডায়াবেটিস, প্রেসার, হার্টের রোগ এবং কোলেস্টেরলের মতো আরো বিভিন্ন সমস্যা। আর এই সকল অসুখ থেকে সুস্থ থাকার ফলে আপনাকে লাগবে ঝরঝরে।

২। যৌবন ধরে রাখার জন্য শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলুন। কারণ শরীরের অতিরিক্ত ওজন খুব তাড়াতাড়ি মানুষকে বুড়িয়ে দেয়। এমনকি কমিয়ে দেয় মানুষের আত্মবিশ্বাসও। নিয়মিত ব্যায়াম এবং খাবার নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেললে যৌবন ধরে রাখা যায়। 

তাই বলে একেবারে খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিলে কিন্তু হিতে বিপরীত হয়ে যাবে। খাবারের পরিমাণ একেবারে কমে দিলে শরীরের যাবতীয় গ্ল্যামার শেষ হয়ে যাবে যার ফলে আপনার চেহারায় চলে আসবে অকাল বার্ধক্য।

৩। যৌবন ধরে রাখার জন্য প্রতিদিনের ডায়েটে অন্তত ১টি করে হলেও মৌসুমী ফল রাখার চেষ্টা করুন। তবে হ্যাঁ যদি প্রতিদিন আম, কলা, আনারস, কাঁঠাল খেতে থাকেন, তবে আপনার ওজন বৃদ্ধি পাবে এবং আপনাকে আপনার বয়সের চেয়ে আরো দশ বছরের বেশি বয়স্ক লাগবে। এছাড়া ফল পুষ্টিগুণে ভরপুর।

ফলে রয়েছে ভিটামিংন, ফাইবার এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা শরীরে পুষ্টি যুগিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আর আপনাকে রাখবে তরতাজা। যৌবন ধরে রাখার জন্য তাই খাবার তালিকায় মৌসুমি ফল রাখুন।

৪। যৌবন ধরে রাখার জন্য দৈনন্দিন ডায়েটে সবুজ শাক-সবজি রেখে দিন। প্রতিদিনের ডায়েট থেকে সবুজ শাক-সবজি বাদ দিলে কিন্তু হবেনা। সবুজ শাঁকসবজি খাওয়ার ফলে মানসিক উন্নতিসহ শারীরিক উন্নতিও ঘটে বটে। যার ফলে মানুষ তার আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। শাঁক সবজি খাওয়ার কারণে সার্বিক স্বাস্থ্য অনেক বেশি ভালো থাকে।

৫। শরীরের ওজন কমানোর সময় কিংবা স্রেফ ইচ্ছে করছে না বলে ব্রেকফাস্ট কখনোই বাদ দিবেন না। আর যদি এমন করেন তবে কিন্তু শরীরের মেটাবলিজম সিস্টেমের গোলমাল হয়ে বেশি বেশি করে খিদে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর বার বার খাওয়ার কারণে আমরা নিজেরাই নিজের ক্ষতিই ডেকে আনি।যৌবন ধরে রাখতে এই পদ্ধতি অনুসরণ করুন।

আরো পড়ুনঃ ক্যান্সার প্রতিরোধ করে যেসব খাবার

৬। যৌবন ধরে রাখার জন্য মিষ্টি জাতীয় খাবার গুলো যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। চকলেট, পেস্ট্রি, ব্রাউনি, আইসক্রিমের মতো খাবার গুলোতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাট থাকে যা শরীরে ডায়াবেটিস এবং কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। তাই যৌবন ধরে রাখার জন্য এই খাবারগুলো যতসম্ভব কম পরিমাণে খাওয়ার চেষ্টা করুন। 

হ্যাঁ তাই বলে ডায়েট থেকে সম্পূর্ণ ভাবে চিনি ছেঁটে ফেলবেন না। অল্প অল্প করে হলেও নিয়মিত খান। অল্প অল্প করে খাওয়ার কারণে শরীরের এনার্জি লেভেল ঠিকঠাক থাকবে। শরীর-মন জুড়ে স্বতস্ফূর্ততার অনুভূতি থাকবে।

৭। সুস্থ ও সুন্দর দীর্ঘ জীবন পেতে এবং যৌবন ধরে রাখার জন্য সকাল বেলা খানিকক্ষণ সূর্যালোকে অবস্থান করুন। সূর্যের আলোয় রয়েছে ভিটামিন ডি যা হাড়কে করে মজবুত, শক্তিশালী এবং এটি মানসিক চাপ এবং অবসন্নতাও হ্রাস করে দেয়।

৮। যৌবন ধরে রাখার জন্য চেষ্টা করুন প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা করে ঘুমানোর। আর সাথে হালকা ব্যায়ামের অভ্যাস রাখতে পারলে আপনি নিজেই উপকৃত হবেন। যৌবন ধরে রাখার জন্য অ্যালকোহল, সিগারেট কিংবা যেকোনো নেশাজাত দ্রব্য এড়িয়ে চলুন। এড়িয়ে চলুন স্ট্রেস। স্ট্রেসও অনেক দ্রুত চেহারায় বয়সের ছাপ ফেলে দেয়।

৯। বয়স বৃদ্ধির প্রথম লক্ষণ দেখা যায় ত্বকে। চামড়া কুঁচকে যাওয়া, নির্জীব হওয়ার মতো ত্বকের সমস্যা গুলো শুরু হয় ৩৫ বছরের পর থেকেই। তাই বয়স ৩০ পার হলেই নিয়ম করে ত্বকের সঠিক যত্ন নিন। ক্লিনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং নিয়মিত ভাবে করুন নিয়ম মাফিক। আর ৩০ বছরের পর থেকে ব্যবহার করুন অ্যান্টি এজিং ক্রিম। প্রতিমাসে অন্তত ২বার ফেস ম্যাসাজ করুন। 

তবে হ্যাঁ খুব দরকার না হলে ফেসিয়াল করানোর প্রয়োজন নেই। দিনের বেলা সূর্যের আলো যেন সরাসরি ত্বকে না লাগে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করার জন্য এসপিএফ ৩০ কিংবা এর বেশি উপাদান সমৃদ্ধ সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার করা প্রয়োজন।

১০। যৌবন ধরে রাখার জন্য প্রয়োজন আনুন নিজের মানসিকতায়। বয়স যে আদতে বাড়ছে, এই চরম সত্যিটা মেনে নেয়ার চেষ্টা করুন। সময়ের সাথে সাথে নিজেকে বদলান। যা আপনার সাধ্যের মাঝে আছে, সেটা নিয়েই নিজেকে খুশি রাখার চেষ্টা করুন। অতিরিক্ত উচ্চ আকাঙ্ক্ষা জীবন থেকে একদম ঝেড়ে ফেলে দিন। এতে করে আপনি নিজে অনেক বেশি ভালো থাকবেন, আঁশেপাশের মানুষকে ভালো রাখতে পারবেন।

আরো পড়ুনঃ গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা

যৌবন ধরে রাখার উপায় সঠিক খাবার

কলাঃ কলায় রয়েছে শক্তি বৃদ্ধি করার মূলমন্ত্র। কলাতে আরো রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, পটাসিয়াম এবং আয়রন। স্বাস্থ্যকর ডায়েট মেনে চললে তাতে থাকা দরকার উপকারী খনিজ সমৃদ্ধ খাবার। এমনকি কোথায় গেলে অথবা অফিসে কাজ করার ফাঁকে ফাকে খেতে পারেন কলা। ব্রেকফাস্ট এবং লাঞ্চের মাঝে খুদা লাগলে খেতে পারেন কলা। তাই যৌবন ধরে রাখার জন্য নিয়মিত কলা খান।

দুধঃ ৪০ বছর পেরিয়ে গেলেও ডায়েটে দুধ রাখুন। দুধে আছে উচ্চ পরিমাণে প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম, যা শরীরের পেশিতে শক্তি বৃদ্ধি করে এবং হাড়ের ক্ষয়রােধ করে। শরীরকে হাইড্রেট করার জন্যে দুধে আছে ইলেক্ট্রলাইটস। প্রতিদিন শরীরকে ফিট রাখার জন্য ব্রেকফাস্টে ১ গ্লাস করে দুধ রাখুন।

ডার্ক চকলেটঃ মিষ্টি দাঁতের জন্য ক্ষতিকর হলেও ডার্ক চকলেট যেমন খেতে ভালো তেমনি ভাবে এতে আছে বেশ কয়েকটি উপকারী খনিজ পুষ্টিগুণ। দিনের একটি সময়ে মন ভালো রাখতে এবং ইনার্জি বুস্টার হিসেবে ডার্ক চকলেট খেতে পারেন। ডার্ক চকলেটে আছে ক্যাফেইন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, সুস্থ্য থাকতে ডার্ক চকলেটের ভূমিকা অপরিহার্য।

লাল আলুঃ বিকালের নাস্তায় বা লাঞ্চের সময় লাল আলু খেতে পারেন। লাল আলুতে আছে প্রচুর পরিমাণে কার্বস। যা প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় শক্তির জোগান দিতে সক্ষম। লাল আলুতে আছে ভিটামিন-এ, যা ইমিউনিটি ব্যবস্থাকে পূর্ণমাত্রায় পুষ্টি জোগাতে সহায়তা করে। এছাড়াও মুখের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলোর কার্যকরী ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। লাল আলু চোখ ভালো রাখতে সহায়তা করে।

ওটসঃ পুষ্টিবিদদের মতে, বয়স ৪০ পার হওয়ার পর ব্রেকফাস্টে ওটস রাখা অনেক ভালো। ওটসে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। প্রতিদিন ডায়েটের জন্য এই ওটস খাবারটি অত্যন্ত উপকারী। ওটস শরীরের শক্তি জোগাতে সহায়তা করে। নিয়মিত ৩০ গ্রাম করে ওটস খেলে সকালবেলা বেশ চনমনে থাকবেন আপনি। ওটসে থাকা ফাইবার হজম শক্তি বৃদ্ধি কর‍তে সাহায্য করে। বয়স বৃদ্ধি পাওয়ার ফলেও ফাইবার শরীরের যৌবন ধরে রাখতে সহায়তা করে।

0 Comments