গর্ভাবস্থায় সালোয়ার পড়ার নিয়ম

গর্ভাবস্থায় সালোয়ার পড়ার নিয়ম - গর্ভাবস্থায় মায়েদের শারীরিক বা মানসিক কিছু পরিবর্তন ঘটে। যার কারণে সব সময়ের ব্যবহৃত কাপড় গর্ভাবস্থায় পড়তে একটু সমস্যা হয়। তাই গর্ভাবস্থায় পোশাকেরও যথেষ্ট অবদান রয়েছে। শরীরের কিছু সমস্যা ও অস্বস্তির সঙ্গে পোশাকের ও সম্পর্ক রয়েছে। গর্ভাবস্থায় যথেষ্ট স্বস্তি ও আরাম অনুভব করতে, সেই অনুযায়ী কাপড় পরিধান করা উচিত।

আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন, গর্ভাবস্থায় সালোয়ার পড়ার নিয়ম, গর্ভাবস্থায় নামাজ পড়ার নিয়ম, ডান পাশে ঘুমালে কি হয় বা বেশি শুয়ে থাকলে কি হয়, গর্ভাবস্থায় কিভাবে বসা উচিত এবং গর্ভকালীন আরো নানা প্রসঙ্গ ও তথ্য।

তাই গর্ভাবস্থায় সালোয়ার পড়ার নিয়ম সহ অন্যান্য সব তথ্য জানতে পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন। তো চলুন দেরি না করে প্রথমেই জেনে আসি, গর্ভাবস্থায় সালোয়ার পড়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত।

গর্ভাবস্থায় সালোয়ার পড়ার নিয়ম

গর্ভাবস্থায় সালোয়ার পড়ার নিয়ম

গর্ভাবস্থায় সালোয়ার পড়ার নিয়ম- গর্ভাবস্থায় পোশাকের ক্ষেত্রে শুরু থেকেই আপনাকে যথেষ্ট মনোযোগী হতে হবে। কারণ গর্ভকালীন সময় ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে না, সময় বাড়ার সাথে সাথে শরীরের ওজনও বৃদ্ধি পায়। সেই ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে শরীরের কাপড় যেন পর্যাপ্ত টাইট না হয়, গর্ভকালীন সময় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ঢিলেঢালা কাপড় পড়া উচিত।

স্বাভাবিকভাবেই গর্ভকালীন সময় মায়েদের শ্বাসকষ্ট থাকতে পারে এবং তার সাথে যদি বডিফিট জামা পড়েন তবে পেটে ও বুকে চাপ পড়তে পারে এতে অস্বস্তিতে ভুগবেন ও গর্ভের সন্তান ঠিকভাবে নড়াচড়া করছে কিনা তা অনুভব করতে পারবেন না। তাই গর্ভকালীন সময়ে শুরু থেকেই ঢিলেঢালা পোশাক পরা উত্তম এবং চেষ্টা করবেন সব সময় সুতি কাপড় পড়তে, সুতি কাপড় খুবই আরামদায়ক এবং শরীরে স্বস্তি অনুভব করবেন।

গর্ভাবস্থায় সালোয়ারের ফিতা খুব বেশি টাইট করে পড়া যাবে না। যতটা সম্ভব ঢিলে করে পড়বেন, এতে করে গর্ভের বাচ্চার নড়াচড়া করতে অসুবিধা হবে না। আপনি চাইলে সালোয়ারের ফিতা পেটের উপরেও পড়তে পারেন আবার নাভির নিচেও পড়তে পারেন, এটা কোন সমস্যা না। কিন্তু অবশ্যই ফিতাটা ঢিলা করে বাঁধতে হবে।

আমাদের সমাজে কিছু কুসংস্কার রয়েছে, যেমন আগেরকার দাদি, নানিরা বলেন যে, সালোয়ার বা পেটিকোটের ফিতা পেটের উপরে টাইট করে বাঁধলে গর্ভের সন্তান নিচের দিকে থাকবে, এতে করে ডেলিভারি খুবই সহজে হয়ে যাবে। এটা সম্পূর্ণ ভুল একটি ধারণা।

ফিতা টাইট করে বাধার সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই বাচ্চা উপরে উঠা বা নামার। ফিতা টাইট করে বাঁধার কারণে গর্ভের সন্তানের আরো সমস্যা হতে পারে, ঠিকভাবে নড়াচড়া করতে পারবে না। গর্ভকালীন সময়ে ঢিলেঢালা পোশাক পড়া উচিত এবং সালোয়ারের ফিতা যথা সম্ভব ঢিলা করে বাঁধা উচিত।

গর্ভাবস্থায় নামাজ পড়ার নিয়ম

গর্ভাবস্থায় নারীর শরীরে অবকাঠামো ও নানা পরিবর্তন ঘটে। যেকোনো কাজ সহজে করা যায় না এবং অনেক কাজে শরীরেও অক্ষমতা দেখা দেয়। তারপরও স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা, কাজকর্ম ও নিয়মিত নামাজ আদায় করতে হয়। শরীর ভারী হওয়ার সাথে সাথে নামাজ আদায় করাটাও একটু কষ্টকর হয়ে উঠে তবে এই সময় নারীরা অসুস্থ ব্যক্তির মত নামাজ আদায় করতে পারবেন।

মহানবী (সা:) ইরশাদ করেন, "তোমরা দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ো, অসুস্থতার জন্য যদি না পারো তবে বসে নামাজ পড়ো, তাও যদি না পারো তবে ইশারা করে নামাজ আদায় করো" (বুখারী, হাদিস : ১০৫০)।

গর্ভকালীন সময় নামাজে সিজদায় যেতে কষ্ট হলে, যথাসম্ভব হাত জমিনে রেখে তার উপর সিজদা করবেন আর না পারলে হাত সামনে রেখে যতটুকু পারেন ঝুঁকে ইশারায় সিজদা করবেন। কখনো ইশারায় সিজদা করার সময় সামনে বালিশ, টেবিল বা অন্য কিছু রেখে তাতে সিজদা করবেন না।

হাদিসে রয়েছে, রাসূল (সা:) একবার এক রোগী দেখতে গিয়েছিলেন। রোগীকে একটি বালিশের উপর সিজদা করতে দেখলেন, তখন তিনি বালিশটি সরিয়ে রাখেন। পরে লোকটি একটি কাঠের টুকরো নিল সিজদা করার জন্য, রাসূল (সা:) তাও সরিয়ে দিলেন আর বললেন, তুমি সক্ষম হলে জমিনের উপর সিজদা করো অথবা ইশারা করে সিজদা করো। আর সিজদা রুকু থেকে বেশি ঝুঁকে আদায় করবে (হাদিস: ৩৪৮৪)।

গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয়

গর্ভকালীন সময় সঠিক নিয়মে সঠিকভাবে চলাফেরা করা উচিত। ঠিক তেমনি গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমানো উচিত নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গর্ভাবস্থায় বাম পাশ হয়ে ঘুমাবেন, এতে করে মা ও বাচ্চা দুজনেই সুস্থ থাকে এবং মৃত বাচ্চার জন্ম দেওয়ার হার অনেকাংশ কমে যায়।

গর্ভাবস্থায় বাম পাশে ঘুমালে ইনফেরিওভেনাকা শিরা শরীরের মধ্যাংশ ও নিচে থেকে হৃদপিন্ডে রক্ত সঞ্চালন করে থাকে। তাই এ সময় যদি ডানপাশ হয়ে ঘুমান তাহলে পেটের ডান পাশ ভারী হওয়ার ফলে ইনফেরিওভেনাকা শিরা বাধাগ্রস্ত হয় ও হৃদপিন্ডের রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। ফলে শরীরে নানা সমস্যার দেখা দেয়।

গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয়

গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত শুয়ে থাকলে গর্ভের সন্তানের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। গর্ভকালীন সময় স্বাস্থ্যের জন্য গর্ভবতী নারীদের দিন ৮ থেকে ১০ ঘন্টা ঘুমানো উচিত, রাতে ৮ ঘণ্টা এবং দিনে ২ ঘন্টা। গর্ভাবস্থায় ঘুম ভালো না হলে নানা জটিলতার দেখা দিতে পারে। তবে অতিরিক্ত ঘুম বা শুয়ে থাকলে বিপদ ডেকে আনতে পারে। যেমন:

  • অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া 
  • পা ফুলে যাওয়া 
  • পায়ে পানি আসা 
  • নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাওয়া 
  • সারাদিন ক্লান্তি অনুভব করা 
  • বাচ্চার মাথা বড় হয়ে যাওয়া 
  • পেট এবং কোমর ব্যাথা হওয়া, ইত্যাদি।

গর্ভকালীন সময় পেট বড় হয়ে যাওয়ার কারণে শারীরিক অস্বস্তি ও হরমোনজনিত পরিবর্তনের কারণে অনেক সময় রাতে ভালো ঘুম হয় না। যার কারণে দিনের বেলা বারবার শুয়ে পড়েন অথবা ঘুমিয়ে পড়েন।তাই দিনের বেলা স্বাভাবিকভাবে ঘরের কাজকর্ম করে শরীরকে পরিশ্রমী করবেন যাতে রাতে ঘুমকে ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে।

তবে অবশ্যই কঠোর পরিশ্রম করবেন না। অ্যাক্টিভিটির মধ্যে থাকলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন ভালো হয় যার ফলে রাতে ভালোভাবে ঘুমানো যায়। এবং দিনের বেলা বারবার শুয়ে পড়ার বা ঘুমিয়ে পড়ার প্রবণতা কমে যায়।

গর্ভাবস্থায় কি কি কাজ করা নিষেধ

নারীদের জীবনে গর্ভকালীন সময় একটি বিশেষ সময়। গর্ভাবস্থায় বিশেষ কোনো জটিলতা না থাকলে ঘরের হালকা কাজগুলো করা যায়। তবে কিছু কিছু কাজ আছে যা গর্ভাবস্থায় করা একদম উচিত হবে না। যেমনঃ

  • খুব বেশি ভারী কোন কাজ 
  • বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে কোন কাজ করা উচিত না 
  • হাত দিয়ে বসে বসে ঘর মোছা যাবে না
  • বাথরুম পরিষ্কারে অ্যাসিড বা অন্য কোন রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা যাবে না 
  • সিলিং ফ্যান পরিষ্কারের কাজ এই সময় না করাটাই ভালো 
  • ভারী জিনিস বহন করা যাবে না 
  • বাড়িতে পালিত পোষা প্রাণী থাকলে, তার বর্জ্য পরিষ্কার করা যাবে না।

গর্ভকালীন সময় গর্ভবতী মহিলাদের সব সময় হাসি খুশি থাকা এবং টেনশন মুক্ত থাকা খুবই জরুরী।

গর্ভাবস্থায় কিভাবে বসা উচিত

গর্ভাবস্থায় একটি ভালো অঙ্গবিন্যাস সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। একটি ভুল অঙ্গভঙ্গি শুধু ব্যথা বা অস্বস্তি গড়ে তোলে না, তার চেয়েও বেশি গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াঁতে পারে। মেরুদণ্ডের উপর চাপ হ্রাস করার জন্য বসার সঠিক ভঙ্গিমা অবলম্বন করা উচিত।

  • একেবারে মেঝেতে পা জড়ো করে বসা উচিত নয়। একান্তভাবে নিচে বসতে চাইলে আপনি যেকোনো ধরনের উঁচু টুল ব্যবহার করতে পারেন।
  • চেয়ারেও বসতে পারেন এবং বসার সময় আপনার পিঠ সোজা হওয়া উচিত।
  • পায়ের পাতাগুলো একটু উঁচু করে রাখার জন্য পায়ের নিচে ছোট্ট একটি টুল রাখতে পারেন।
  • বসা থেকে যখন উঠে দাঁড়াবেন, তখন আস্তে আস্তে করে পায়ে ভর দিয়ে পা কে সোজা করে বসা থেকে উঠুন।
  • কাজের জায়গায় যদি দীর্ঘ সময় বসে কাজ করতে হয়, তবে মাঝেমধ্যে উঠে দাড়িয়ে কয়েক মিনিটের জন্য হেঁটে নিবেন, কখনো একটানা অনেকক্ষণ বসে কাজ করবেন না।

গর্ভকালীন সময় আপনার অঙ্গবিন্যাস গুলোকে একটু বিশেষ মনোযোগ দেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।

গর্ভাবস্থায় সালোয়ার পড়ার নিয়ম কি ভিডিওতে দেখুন - গর্ভাবস্থায় সালোয়ার কি নাভির উপরে পরতে হবে

গর্ভাবস্থায় সালোয়ার পড়ার নিয়ম

গর্ভাবস্থায় সালোয়ার পড়ার নিয়ম নিয়ে সর্বশেষ কথা

গর্ভকালীন সময়ে একটি ত্রুটিপূর্ণ অঙ্গবিন্যাস শরীরে নানা ধরনের জটিলতা এবং অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে এমনকি তা প্রসবের পরেও শরীরে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। অত:পর, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে চাপ লাগাকে হ্রাস করার জন্য সম্পূর্ণ গর্ভকালীন সময় জুড়ে একটি ভালো ভঙ্গিমা বজায় রাখা অপরিহার্য।

আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনি জানতে পারলেন, গর্ভাবস্থায় সালোয়ার পড়ার নিয়ম বা কাপড় পরিধান করার নিয়ম সহ অন্যান্য কিছু নিয়মকানুন। এই পুরো আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। গর্ভকালীন সময়ে নিজে সতর্ক থাকবেন, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মকানুন মেনে চলবেন এবং পরিবারের অন্য কেউ গর্ভবতী থাকলে তাকেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।

আরো পড়ুনঃ

সিজারের পর পেট কমানোর উপায়

গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিত

গর্ভাবস্থায় কি কি কাজ করা নিষেধ

গর্ভাবস্থায় কি খাওয়া উচিত নয় - গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে না

গর্ভাবস্থায় কি কি শাক খাওয়া যাবে - গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না

পোষ্ট ক্যাটাগরি:

এখানে আপনার মতামত দিন

0মন্তব্যসমূহ

আপনার মন্তব্য লিখুন (0)